গুচ্ছ কবিতা আহমেদ শিপলু

অলৌকিক ইনভেলাপ

ঝিঁঝিঁর ডাক পেরোনো মাঠের পথে অতীতের ডাকপিয়ন হেঁটে যায় রোজ। রিকশার ক্রিংক্রিং, হেল্পারের হল্লা পেরিয়ে পাগুলো উড়তে চায়! এইসব বসন্ত বসন্ত হাওয়া বাজি ধরে হেরে আসি কাল্পনিক ক্যাসিনোয়। জুয়া একটা দ্রুতগামী স্বপ্নের নাম!

যাদুবিশ্বাস মানুষের পুরনো অভ্যাস। ঈশ্বরকেও বিশ্বাসের খাতায় রেখে পাল ওড়ায় নাবিক। পাড়ার মুদিওয়ালা ফতুর হয়ে বাকির খাতায় হাল চাষের আয়োজন করে!

সেই ডাকপিয়ন আসেনি কোনোদিন। তবু প্রতীক্ষিত চিঠি পড়তে পড়তে ঘুমুতে যায় মানুষ। প্রাপ্তিস্বীকার সহ দস্তখত রেখে আসে অলৌকিক ইনভেলাপে।

শোক ও সন্তাপ

আয়ু মানে পুনঃ পুনঃ শোক ও আনন্দ।

বাঁচো।
সংবাদ বাহকের দিকে তাকিয়ে গুনে যাও ঢেউ ঢেউ মহাকাল।
চোখের পেছনে জল রেখো, আগুন রেখো।
এরকম পাশাপাশি অনেকেই থাকে।

আস্তিন গুটানো সময় পেরোয় একদিন।
রোদ মরে যাওয়া বিকেল পকেটে পুরে হাঁটো।

বাঁচো।
জুয়াড়িরা যে রকম হেরে গিয়েও স্বপ্ন দেখে জিতে যাওয়ার।

নখ কাটা থেকে দাড়ি কামানো, অথবা ভ্রূ প্লাক থেকে পেডিকিওর, মেনিকিওর।
এইসব আয়োজন আয়ুর ঘরে রেখে যায় দীর্ঘশ্বাস।

বাঁচো।
মাটি অথবা আগুন তোমার অপেক্ষায় যতদিন, ততদিন তোমার শোক ও সন্তাপ।

দৃশ্য

দৃশ্যকে দাঁড়াতে হলো পাতায় ভর করে। পাতারা সবুজে হলুদে। বিমূর্ত বাষ্পীয় জল। দৃশ্যমান কিছুই না থাকা অথবা নীল অনন্ত… যতদূর যাই কেবলি নীল… তোমার না থাকা টের পায় নক্ষত্রপাড়ার মিটিমিটি।

যেমন একজোড়া চোখ ভেদ করা গেলো না বলে দৃশ্য হাতাতে হাতাতে পৌঁছে গেলাম বিষণ্ণ অরবিটে। ঘুরছি ঘুরছি… নিতান্তই একটা শব্দ কিংবা হাসি। অথবা চুমু রেখে যাওয়া দুপুরকে পানপাত্র ভেবে তুলে নেবো ঠোঁটে!

ঢুলির কাঠি কিংবা আঙুল মিথ্যা নয়। অথচ শব্দগুলো কিরকম অলৌকিক! না হলে মানুষ নাচছে কেন! শব্দ। একা অথবা মুহূর্মুহু! ভর করে মানুষে মগজে! ঢুলির চোখ বন্ধ! নাকি একটা শব্দময় দৃশ্য আঁকতে গিয়ে নিজেকে অন্ধ ভাবতে চেয়েছিলো!

ভাঁটফুলের ঘ্রাণসঙ্ঘে হাসির উৎসব

ঠোঁটের অভিসাপ। চোখের আক্ষেপ। নাকের ঘ্রাণতৃষ্ণা। আঙুলের বিদ্রোহ। বয়ে বেড়ালাম।

একটা ব্যর্থজন্ম পেরোবার আগে জানা গেলো কেবল মৃত্যু ছাড়া আর কিছুই নিশ্চিত নয়। নিষিদ্ধতার পাল্লায় ভ্রান্ত বাটখারা চাপাতে চাপাতে ক্রমশ সভ্য হলাম ভেবে যখন আমাদের নিশ্চিন্ত বিছানা; তখন প্রতিদিন সভা হয় ভাঁটফুলের ঘ্রাণসঙ্ঘে।

ইঁদুরেরা হাসে! মাছি এবং পাখিরাও… সবাই হাসে খুব! মানুষের প্রসঙ্গ ছাড়া এত হাসি নেই আর কোনো অনুসঙ্গে!

কচুরিপানার স্রোত। বাতাসের গতিবেগ নির্ণয় অথবা থেমে থাকা। কোনোকিছুই নিশ্চিত নয়! অথচ শারিরী চুমুরা থমকে রইলো অশরীরী ধাঁধায়!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *