কবিতা

মো. রেজাউল করিম এর কবিতা


ক্লান্ত পথিকের ঘরে ফেরা



আমি যখন এই মাটির পৃথিবীতে ভুমিষ্ঠ হয়েছিলাম, তখন আকাশ ছিল ঘোর
কৃষ্ণবর্ণের মেঘে আবৃত…থমথমে মুখচ্ছবি। আমার প্রথম কান্নার সাথে আকাশও
কেঁদেছিল, অবিরাম, অঝোর ধারায়…আকাশ কেন কেঁদেছিল… আমার জানা নেই, আমার জ্ঞানের অতীত।

ম্রিয়মান কৈশোরে গড়াইতীরে, আমার জন্মস্থান; কোনো এক বালুচরে একদিন
আকাশকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আমার জন্মতিথিতে কেঁদেছিলে কেন তুমি?
সেদিনও ছিল আকাশে ঘন কৃষ্ণবর্ণের মেঘ, থমথমে ছিল তার মুখচ্ছবি…প্রবল গর্জনে
হুঙ্কার দিয়ে আকাশ আমায় তাড়িয়ে দিয়েছিল।

যৌবন কেটে গেল সেদিনের সেই হুঙ্কারে ভীত-সন্ত্রস্ত এই আমি।আমার পদচিহ্নে
সবুজাভ বনানীতে শুকনো মর্মর পাতার প্রতিধ্বনি, প্রমত্তা স্রোতধারা শুকিয়ে
খরচৈত্রের শুষ্ক জলধারার অস্পষ্ট চিহ্নমাত্র, পাখিরাও কলরব থামিয়ে বিস্মিত নয়নে
আমায় দেখেছিল…।

শেষবিকেলে-সাঁঝের আলো-আঁধারীতে পরিযায়ী পাখিরা ঘরে ফেরে, বিকেলের স্নিগ্ধ
কোমলতা হারিয়ে বাতাস স্তিমিত, প্রকৃতি এখন শান্ত। ক্লান্ত শ্রমিক ঘরে ফেরে,
নব-দম্পতি ফেরে নব-উদ্দামতায়, মিরপুর সড়ক ধরে আমার ফেরা যেন ক্লান্ত
পথিকের শেষ পদযাত্রা।



আশ্রয়



আকাশের কাছে অনুমতি চাইলাম করজোড়ে
মেঘের ভেলায় ভেসে তার বিশালতা দেখব বলে,
অনুমতি মেলেনি।

সাগরের কাছে বলেছিলাম, সৈকতে দাঁড়িয়ে
তার উথাল-পাথাল দেখব, সাগর আমায় ডাকে
তার গভীরে অবগাহনে।

ধ্যানমগ্ন পাহাড়কে বললাম বিনম্র ভঙ্গিতে
তার ‘ভাবগম্ভীর‘ দেখব বিমুগ্ধ-বিস্মিত নয়নে-
সে নাকি শুধু ধ্যানীদের জন্য।

কামিনীবাগে, অন্ধকারে, ডুবসাঁতারে শুনতে চেয়েছি
রহস্যঘেরা সপ্তবীনার সুরলহরী, ডুগডুগির আসরে
কামিনীবাগে আশ্রয় মেলেনি।

মৃত্তিকা আমায় ডেকে বলল, দাঁড়াও আমার বুকে
দেখ আকাশ, সাগর, পাহাড়, আর কামিনীবাগ
সবই তোমার জন্য উম্মুক্ত

কেন যাও হেথা-হোথা। মায়ের বুকে দাঁড়িয়ে দেখ,
মন যা চায়। তারপরে এসো আমার গর্ভে চিরশয়ানে
ঘুমিয়ে থেকো চিরনিদ্রায় ।



তোমার শূন্যতায়



কোটি মানুষের তুমিশূন্য এ নগরে
নিঃসঙ্গতার অভিশাপে বিমূর্ত এক প্রাণ আমি।
নিরন্তর কোলাহলে, আমার কর্ণযুগল নিঃস্তব্ধ;
পদযুগল সঞ্চালনেও অক্ষম।

অমাবশ্যা নিশীথের নৈঃশব্দতা ও গাঢ় অন্ধকার
আমায় ডাকে গভীর অস্তাচলে, আঁধারের চরাচরে;
অসীমের মাঝে সীমাহীন আমি,
নিঃসঙ্গতার অভিশাপে অভিশপ্ত তুমিশূন্য জীবনে।
বহতা স্রোতস্বিনীর কলকল শব্দ
বিহঙ্গের কলকাকলী, ঘোর বরষার অবিরত বারিপাতও
আমার অস্তিত্বে প্রাণ সঞ্চার করে না
প্রাণহীন তুমিশূন্য এ নগরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *