কবিতা

মাশরুরা লাকী’র কবিতা

পলেস্তারা প্রাণ

হাবসির মত অন্ধকারে,
সেলফোনের আলোয় মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে গিয়েছিল
খিদেয় পেটের ভেতর বর্ণ মালারা চূ চূ করেছে
অস্ফুটে কেবলই পাঠ করেছি আয়াতুল কুরসি
নির্ঘুম আর ক্লান্তিতে আমার মাথার ভেতর ঘুঙুরের শব্দ
মুহূর্তে মনে হলো, কে যেন মাউথ অর্গানে শব্দহীন পাখিকে ডেকে গেল
চোখের তারায় মুঠোভর্তি নক্ষত্রের আলোতে পড়ে নিলাম
আমার বিরুদ্ধে এক অর্থহীন স্মারকলিপি
খোরস্রোতা উত্তাপে কবিতার আঙিনায় বিষ ঢেলে দিল।
শহর অভিমুখী ধ্রুপদীরোদ্দুরে
মাথার ওপর শারদ মেঘগুলো
যেন খসে পরা পলেস্তারা প্রাণ।

একটুকরো বরফ

এই প্রকৃতির বলয়ে বেড়ে ওঠা আমি তো
অনন্তসমুদ্রে ভেসেচলা ছোট্ট একটি ঢেউমাত্র
যাপিতজীবন গার্হস্থ্যাশ্রিত আটপৌরে ভাষায়
ধর্মীয় বিশ্বাস আর আধুনিক বজরায় স্থিরমতি।

নতুন পুঁজিবাদ ও সম্ভাবনাময় অয়েলফিল্ডের
বৃদ্ধির কারণে সামাজিক জীবনের মানবেড়েছে
কিন্তু, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাঁশে দাঁড়ানো
যেনো অসহনীয় গভীরতম দীর্ঘশ্বাস কাম্যনয়।

একদল হুজুগে পাবলিক নাচছে বহুবর্ণের
কিছু চরিত্রের একটাদঙ্গল লকলকিয়ে ওঠে
তাদের অতীন্দ্রিয়ের ষড়যন্ত্রের রঙিন সুতোয়
যেনো একসাথে অসীমত্বের মালা গেঁথে ফেলি।

সেদিন তোমাদের অহেতুক সপ্তপদী হাসিটা
বুনো মহিষেরমত বুকের জমিনে হেঁটে গেল
আমার রক্তে চিরবিশুদ্ধ প্রাচীন রণ উন্মাদনা
বিবেক ও প্রজ্ঞা কখনোই পাগল হতে বলেনা।

সক্রেটিস ও অ্যারিস্টটলের নীতিবিদ্যা বিবর্তিত
সময়ের তেলজীবিদের বুদ্ধিবৃত্তিক ভাওতাবাজী
ডিজনি চরিত্রগুলো একাকী বসন্তে রূপ পাল্টায়
জীবন মানে, নেহায়েত পাতলা একটুকরো বরফ।

একটি রিং বাইন্ডারে ঝুলে আছে

দুনিয়া পৃষ্ঠে একটি রিং বাইন্ডারে ঝুলে আছে
মেঘবৃষ্টি-রোদ, সকাল-বিকাল, সন্ধ্যা-মধ্যদুপুর
বিরানভূমিতে কখনো কখনো জোছনা প্লাবিত রাত
কোনো কোনো সময়ে ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন শীতার্ত ভোর
কখনো বা বাতাসের ঢেউয়ে সবুজের দুর্বার আকর্ষণ।

ধানকন্যারা প্রকৃতির ঘাগড়া পরিহিত সমাজের কল্যাণে
রীতিমত মতো উদার।

অনুপম সময়গুলো কতো দ্রুত ধুপছায়া হয়ে উড়ে যাচ্ছে
ঘুম কাতুরে নগ্ন মায়াদুপুর যেন রেসের ঘোড়ায় ছুটে চলেছে
মহাজাগতিক প্যারা-সংঘের মায়া কাটিয়ে ক্রমশ সাঁতার কেটে চলেছি
একটি অর্গানিক সময়ের অপেক্ষায়–

কমলা আলোর সেন্টিমেন্টে বসে আছি একটি ক্যাফেটেরিয়ায়
চমৎকার ফ্লেভারে কফির প্যারাগ্রাফ মগজে ঢেলে নিলাম
বুদ্ধিদীপ্ত মেজর জেনারেল তাঁর আইবল ঘুরিয়ে প্রশ্ন করলেন
কনভার্টিবল সময়ের সুউচ্চ মিনার আর স্বল্পতম আঁধার কুহক বলতে কী বোঝ?

সেদিন আঁধার খেকো রাতকে বলেছিলাম —
আমাকে নির্বাসনে পঠিয়ে দাও
যেখানে এক টুকরো বজ্রপাতে ঝলসে উঠেছিল চুম্বনবিহীন আলিঙ্গন
যার দেহের ভেতরে রয়েছে নাতিশীতোষ্ণ এক আজব সৌন্দর্য।

মহুয়া

বৃষ্টি তুমি এসো
মায়া সভ্যতার আনন্দ নিয়ে
অপ্রতিরোধ্য মায়ায় ভাসবো আমরা দুজন
প্রচণ্ড আদিমআকাঙ্খায় সত্যিকারের মানুষ হয়ে।

যেখানে বৃক্ষের শরীরে এক ফোটা জল হয়ে ওঠে ইচ্ছেনদী
আর বলাকার ঝাঁকে দোল খায় কিশোরীর হাসি
সেখানে থাকবে কৃষ্ণচূড়া
ও মহুয়ার উন্মাদনা।

একরত্তি গুটি পোকা
তৈরি করবে গ্রন্থিসুতা
আর সভ্যতা খুঁজে পাবে আরেকটি গল্প।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *