সাবা সাবরিন এর কবিতা
অনাস্বাদিত প্রেম
ধূলিকণা হয়ে, ভেসে বেড়াও।
ছুঁতে গেলে, উড়ে এসে চোখে
পড়ে জ্বালা দাও ভীষণ।
ধূলিকণা অধরায় রয়ে যায়।
বুদ্বুদ হয়ে, সাবানের ফেনায়
মিশে থাকো। ছুঁতে গেলে,
আমার বুদ্বুদ ছোঁয়ার ইচ্ছেটা
অপূর্ণ রেখেই উবে যাও।
সুগন্ধিতে মিশে থাকো গন্ধ হয়ে।
তোমার মাতাল করা গন্ধে,
পাগল হয়ে তোমায় খুঁজে মরি।
তবু কোথাও খুঁজে পাইনা।
ঘুমের নেপথ্যে, ছায়ামুর্তি হয়ে
দেখা দাও। মোনালিসার মত,
অপলক দৃষ্টিতে তোমায় দেখি।
ছুঁয়ে দিলেই মিলিয়ে যাও।
কেন, তোমায় ছোঁয়ার ইচ্ছেটা
আমার অপূর্ণই রয়ে যায়?
তুমি, কখনো মিশে থাকো
চিনিতে, কখনো বা নুনে।
হে অনাস্বাদিত প্রেম,
তুমি আছো সবখানে।
মুহূর্ত
মুহূর্তের কাছে পরাজিত হয়ে যায়
কালের ঘড়ি।
কালের ঘড়ির কাঁটা থেমে যায় কোন
একটা মুহূর্তে।
কালের গর্ভে বিলিন হয়ে যায় বাকি
স্মৃতিগুলো।
মুহূর্তের কাছে পরাজিত হয়ে ওরা
আর্তনাদ করে।
ওদের পরাজয়ে মুহূর্তটা হেসে ওঠে
বিজয়ীর বেশে।
সময়ের ক্যামেরায় বন্দি হয়ে যায়
মুহূর্তের ছবি।
ঘড়ির কাঁটা আবারও চলতে থাকে
টিক্ টিক্।
অন্তিমকালে আবারও মুহূর্তের ছবিটা
ভেসে ওঠে।
তখন চারিদিকে ধ্বনিত হতে থাকে
মুহূর্তটা জয়যুক্ত হয়েছে…
মুহূর্তটা জয়যুক্ত হয়েছে…
মুহূর্তটা জয়যুক্ত হয়েছে…
ঋণ
তোমায় দেব বলে-
আকাশের কাছে চেয়েছিলাম, একটি নক্ষত্রের আলো। আকাশ আমায় ফিরিয়ে দিয়েছিল।
আমি বাতাসের কাছে চেয়েছিলাম, একটু দখিন হাওয়া। বাতাস আমায় ফিরিয়ে দিয়েছিল।
আমি নদীর কাছে চেয়েছিলাম, এক আঁজলা জল। নদী আমায় ফিরিয়ে দিয়েছিল।
আমি গ্রীষ্মের কাছে চেয়েছিলাম, এক ফালি রোদ্দুর। গ্রীষ্ম আমায় ফিরিয়ে দিয়েছিল।
আমি বর্ষার কাছে চেয়েছিলাম, এক ফোঁটা বৃষ্টির জল। বর্ষা আমায় ফিরিয়ে দিয়েছিল।
আমি শরৎ এর কাছে চেয়েছিলাম, এক গুচ্ছ কাশফুল। শরৎ আমায় ফিরিয়ে দিয়েছিল।
আমি হেমন্তের কাছে চেয়েছিলাম, ধানের শীষে লেগে থাকা এক ফোঁটা শিশির বিন্দু। হেমন্ত আমায় ফিরিয়ে দিয়েছিল।
আমি বসন্তের কাছে চেয়েছিলাম, কোকিলের গান।
বসন্তও আমায় ফিরিয়ে দিয়েছিল।
অবশেষে আমি কলমের কাছে এক ফোঁটা কালি চেয়েছিলাম, তোমায় নিয়ে কবিতা লিখব বলে।
কলম আমায় প্রত্যাখ্যান করেনি। তাই আজ কলমের কাছেই রয়ে গেল আমার এক জন্মের ঋণ।
রবি ঠাকুর ও ইঁদুরের গর্ত
দেয়ালে ঝুলছে হাতে আঁকা
রবি ঠাকুরের ছবি।
রবি ঠাকুরের দাড়িতে নেমেছে
বটের ঝুরি।
বটের ঝুরিতে নেচে বেড়াচ্ছে
ডানাওয়ালা ইঁদুর ।
ইঁদুরের গর্তে লুকিয়ে আছে
সভ্যতার কঙ্কাল।
লোভের সাগরে কঙ্কালের
অবাধ স্নান।
কঙ্কালের স্নান লাভ করেছে
কচ্ছপের জীবন।
কচ্ছপের খোলসে খেলা করছে
চাঁদের ছায়া।
চাঁদের ছায়ায় হেসে উঠছে
রবি ঠাকুরের ছবি।
আমি তো কবি সাবা সাবরিনের অনুরক্ত পাঠক। বারবার মুগ্ধ হই। আবারও হলাম।