শাহীন রেজার গুচ্ছ কবিতা
কাকরঙ জলে জ্বলে পূর্ণিমা
বলছিলাম, কাকরঙ জলের কথা।
তুমি ক্ষেপে গিয়ে জানতে চাইলে , কবিতার আবার রঙ আছে না’কি?
সেদিন সেই বাগানে আমরা ছাড়াও ছিলো দুটি
ডানাভাঙা কবুতর এবং একজন মাথানত দুধরাজ।
তোমার প্রশ্ন শুনে তারাও উদগ্রীব।
আমি বললাম, কালোর নির্যাস থেকে আলো আসে, ভালো আসে।
কবিতা তো ভালোর প্রতীক আলোর আধার।
কাকরঙ জলে জ্বলে পূর্নিমা।
তোমার বিষ্মিত চোখে খ্যাপা ব্যোমকেশ।
কবুতর উড়ছে, দুধরাজের মাথা আকাশ ছুঁইছুঁই।
নদীপ্রজাপতি
না দেবো না
ঊর্বশী মেনকা রম্ভা যেই হোক
ওষ্ঠমুকুলে জানালে তৃষা পাঠালে তীব্র আমন্ত্রণ,
কিছুতেই দেবনা খুলে চুম্বনের নিভৃত অর্গল।
ভালোবাসা যদি বলো
এর নাম তাই
আস্থা ও বিশ্বাসে পূর্ণ ছায়াস্বরলিপি
জ্বলে জ্বলে খাঁটি এক আগুন করোটি।
মেনকার ডাক শুনে ভাঙ্গেনা তন্দ্রা নদীর
রম্ভা স্পর্শেও জাগেনা কম্পন অনন্ত পৌরুষে
ঊর্বশী নাচলেও ফোটেনা কামজজবা ময়ুর পেখম।
ভালোবাসা এরকমই
তুমি চাইলেই সব চাঁদ আলোর গ্রহণ
তুমি হাসলেই সব পাখি নদীপ্রজাপতি
তুমি ডাকলেই হাতেমেরা হেরেমের দাস
তুমি ভালোবাসলেই দেহজুড়ে কবিতার চাষ।
তুমি চাইলেই সব চাঁদ আলোর গ্রহণ
তুমি হাসলেই সব পাখি নদীপ্রজাপতি
তুমি ডাকলেই হাতেমেরা হেরেমের দাস
তুমি ভালোবাসলেই দেহজুড়ে কবিতার চাষ।
জলছোঁয়া মেঘ
জানিনা প্রজাপতি পাখায় ঘুম নামে কি’না
অব্যর্থ তীরের ছোঁয়ায় জাগে কি’না কামজকম্পন!
সে যখন রোদ হয় কবি তখন ছায়ার প্রতীক।
চাঁদের বুকের আলে স্বপ্নের শুঁয়োপোকা কী কেমন
বিলি কাটে কে জানে?
কবিতা গঙ্গা হলে নারী তাতে ভাসমান জলছোঁয়া মেঘ
কবির অধর জুড়ে চুপিচুপি মায়া আঁকে নদীউদ্বেগ।
কঙ্কাবতী
হও তুমি কঙ্কা দত্ত কিংবা কঙ্কা লাহিড়ী, তাতে কি এমন ক্ষতি?
আমার ভালোবাসা সেতো চন্দ্রদীপ; অহোরাত্র জ্বলে
বেদনশিথানে।
তোমাকে চেয়েছি তাই এ পৃথিবী হরিণের ডাহুকের,
এ জীবন আবদ্ধ সুরমায়াজালে,
এই মনে সারাক্ষণ ভ্রমর আসন, ময়ূরের নাচানাচি,
এই চোখে জীবনের ধ্বনি উদ্ভাস।
হও তুমি কঙ্কা বসু অথবা কঙ্কা দাস
তবুও তোমার আঁচলে বাঁধা সুখগাঙচিল
রৌদ্রের শান্ত ঘুড়ি, শ্রাবণের রাজহাঁস
এবং দীপ্ত সুপ্ত প্রেম, নদী কেশবতী।
কঙ্কালতা কিংবা কঙ্কাবতী নারী,
নাম দিয়ে শনাক্ত দেহ, মন দিয়ে ভালোবাসাবাসি।
তোমাকে চাইনি তবু
তোমাকে চাইনি তবু তুমি আজ কাছে।
দিনান্তের সব চিল ফেরেনা ডেরায়,
আত্মার সব চাঁদে লাগেনা গ্রহণ,
দুপুরের সব ডাকে নেই ঘুঘু-ঝিম,
শ্রাবণের বিপরীতে কিছু নদী ছোটে,
কিছু ফুল ফুটে যায় দহন প্রলেপে।
ভালোবাসা একে বলে,
হঠাৎ ছড়ায় জল মরু জলসায়,
সুদূরসারথীজন লহমায় হৃদয়কুটিরে।
তোমাকে খুঁজিনি তবু তুমি আজ কাছে,
তোমার ছোঁয়াতে এই ছায়াবৃক্ষ বাঁচে।
কবি শাহীন রেজা’র মানেই ভিন্ন রকম স্বাদ আস্বাদনের সুযোগ।রোমান্টিক এবং ব্যতিক্রমধর্মী উপমা,অনুপ্রাসে সাবলীল গতিময়তা সমৃদ্ধ কবিতার স্রষ্টা তিনি।
ধন্যবাদ আপনাকে