গুচ্ছ কবিতা মো. রেজাউল করিম

ক্রান্তিকালের কথামালা

বিস্তৃত-বিপুল সঞ্চয়সমগ্র
হাজার বছরের শ্রম-সাধনার অর্জন,
কিংবদন্তির রাজপ্রাসাদের সন্ধানে নিমগ্ন
বাগদাদের খলিফার প্রাসাদ যেমন।
কল্পনার ফানুসে উড়ে উড়ে চলি
অজানা সুখস্বর্গের সন্ধানে।
ভূতল, ভূলোক কিংবা মরুদ্যানে,
কিংবা গ্রহান্তরে, সুদূর নক্ষত্রের ওপারে।
আকণ্ঠ পানে, সুরসুধার কলতানে
সাকী’র নয়নে দেখি প্রেমের সাগর।
নয়নজলে প্রেয়সী ঘুমায় নিশুতি রাতে
আমি তখন হেমলকের পেয়ালা হাতে।
কল্পনার ফানুস, স্বপ্নের আশা
হয় দুরাশা, অঞ্জলিভরা সাকী’র প্রেম।
রজনীশেষে উবে যায় মরীচিকা,
আমি তখন দাঁড়িয়ে কপর্দকশূন্য।

জীবন ও মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে
বিস্তৃত সাগরপাড়ে শূন্য বালুতটে।

আমার সন্ধান কোরো না

বিজন বনে ভগ্ন-প্রাসাদে আমায় তুমি খুঁজো না;
আমার স্মরণে পুষ্পমাল্য অর্পন কোরো না;
আমার আত্মার বিষাদময় হাসিতে লুটিয়ে পড়ো না;
আমার স্মরণে ভগ্ন প্রাসাদে সন্ধ্যাদ্বীপ জ্বালিয়ো না।

আমার প্রাসাদে অনল জ্বালিয়ে তোমার প্রস্থান দেখেছি;
আমার আত্মার মৃত্যু-কামনায় তোমার কর্মযজ্ঞ দেখেছি;
শবদেহের সঙ্গে তোমার হুড়োহুড়ি, লুটোপুটিও দেখেছি।
আমার স্মরণে ভগ্ন-প্রাসাদে পুষ্পমাল্য অর্পণ কোরো না।

আরশীতে দেখ, ঠোঁটের দুকোণে তোমার ড্রাকুলার রক্ত ঝরে;
তোমার হাসিতে হিংস্র-শ্বাপদ প্রাণিকুল দৌড়ে মরে;
তোমার মৌনতায় শীতের মর্মর পাতায় অনল জ্বলে।
আমার স্মরণে ভগ্ন-প্রাসাদে স্মৃতির মিনার তৈরি কোরো না।

তোমার যাত্রাপথে সবুজ বনানী শীতের শুষ্কতায় শুকিয়ে মরে;
নদী তার গতি হারায়, স্বচ্ছ সলিল জলধারা স্তব্ধ হয়ে পড়ে;
পুষ্প তার বর্ণ হারায়, বিহঙ্গ ভুলে যায় কলকাকলী।
আমার স্মরণে ভগ্ন-প্রাসাদে শিলালিপি উৎকীর্ণ কোরো না

দুঃসময়ের রোদন

আসমান থেকে নামে অদৃশ্য এক মৃত্যুদূত
মানুষ মরে একাকী, শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত যমালয়ে।
সকলে চলে যায় দূরে, বহু দূরে;
সাত সমুদ্দর, তেপান্তর পেরিয়ে ভিন দেশে।
স্বজনের নাই আগ্রহ কিংবা আকুতি,
সদ্যমৃত প্রিয়জনের প্রিয় মুখটি দেখার
কিংবা তার কফিনে শেষ শ্রদ্ধা- পুষ্পার্ঘ অর্পণের।
প্রিয়জনের অন্তিম শয়ান- কিভাবে কে জানে?
পাথরে ফুল ফোটে, মরুতে সবুজ বনানী,
মনের গহনে নির্বাক ভালোবাসা ডুকরে কাঁদে;
অদৃশ্য যমের শীতল স্পর্শে ভালোবাসাও মৃত।
মৃত্তিকা গহ্বরে শুয়ে সেজন ভাবে, সবই কি ছলনা?
কষ্ট-কঠিন প্রশ্নের মুখে প্রিয়জন কাঁদে লুকিয়ে,
দেখ- চাঁদের গায়ে অশ্রুধারা, অবিরাম অঝোরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *