রাহমান ওয়াহিদ’র //গুচ্ছ কবিতা


পোশাকি পাখি


কিছু ভূতুড়ে স্বরধ্বনি,কিছু ফেনিল নির্জনতা
সাঁতারি নদীর ছেঁড়া কলকল,কিছু ফিসফাস হামাগুড়ি
চোখে চোখে রাখে ইদানিং বড়। কোথা যাই,
তলে তলে হাঁড়ি ভাঙ্গি কার, কোথা মজে যাই,
শরীরটা রেখে দেই কিনা তেলে ভেজা বর্জ্যে কোথাও-
ত্যারছা চোখে সেইসব সরল বীক্ষণ।

কবে কোন্ উলুবনে ফেলে এসেছি জোড়াবেণী
কবে কার ব্যাকুল হাতের রিনিঝিনি, ঠোঁট কম্পন
সাপলুডুর চোরাবালি গুটি ইতিউতি চালাচালি-
খুঁড়ে খুঁড়ে উগড়ে দিতেছে সব সঞ্চয়ী কাঁচ গুড়ো মন।

‘মেরামত চলিতেছে’ খচিত ব্যানার টপকিয়েও
দু’ দন্ড দাঁড়াতে পারি না কোথাও,কোথা থেকে উড়ে আসে
ঝাঁক ঝাঁক পোশাকি পাখি,এলোচুল কাশবনী হাওয়া
চোখের চামড়া টেনে ধরে বলে,‘কফিনে তোমার
পেরেকটি ঠুকে দাও হে পান্থ আদম-পলল হৃদয় সব
বহিতেছে দীর্ঘ ক্যাসিনো রাতের মদির দহন।’

বিড়াল সন্ধ্যা

অথচ এই ভালুক জ্বরে থ্যাতলানো ব্রাত্যজন
টুকরো মানুষের বেতাল যাপন যজ্ঞ,আর
দেব দিচ্ছির কর্পোরেট ভনিতা নিয়ে সংঘের
বিশেষ এলিট সভায় ঢের প্রশ্ন তোলা যেত।
মননে প্রোথিত ভ্রূণের জন্ম সম্ভবনা নিয়ে
সঘন উচ্চারণের যে উচ্ছিষ্ট ভগ্নাংশ
তাতে কুশলী পায়ে হেঁটে আসা বিড়াল সন্ধ্যা
ফ্লোর পেতে পেতে অকুলেই খেই হারালো।

দ্বান্দ্বিক সমীকরণে চর্বিত এজেন্ডাটাই শেষতক
মোটা দাগে শক্ত জমিন পেয়ে যায়।
অথচ আমাদের হৃদি বলয় থেকে জন্মে যে
বোধের আকর-তাতে ব্যাক্তিগত হাঁসফাঁসের
কোন আবাসন মেলে না। থাকে শুধু রাতশেষের
বাজারী নকশা। থাকে ঘুমশয্যা পাল্টানোর
দূর নিয়ন্ত্রন। আর থাকে শরীরে সেঁটে যাওয়া
বানভাসী ভালোবাসার আঠালো চুম্বন।

বিকেলের মৌনতা

সময়ের অবসন্ন শরীর চুয়ে নেমে আসে
শ্রান্তির ঘামজ্বর।
আকাশের দুয়ার থাকে খোলা
আশ্বিনী বাতাসে লাগে শিশিরের দোলা।

শীতের অপেক্ষায় যে ছিল জড়সড় শুয়ে
সে পড়ে দ্বিধায়-
এ কি অঘ্রাণী ঘ্রাণ,নাকি ভাদ্রের ভদ্রতা কোনো?

যে প্রান্তিক কিষাণীর আঁচলে বাঁধা
দু:খের সন্তানেরা খুঁটে খুঁটে খায়
ভাতগন্ধ বিকেলের সানন্দ মৌনতা-
নমিত ধানের গোছায় সে কোন হেমন্ত দেখে না।
হিম হিম কুয়াশার জালে জমে থাকে তার
ধানী উঠোনের ছায়া ছায়া রোদ
আর যাপিত জীবনের যাবতীয় সুগন্ধ গৃহস্থালী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *