গুচ্ছ কবিতা নিলয় রফিক
আলোর মশাল
শিকাগোর পিচঢালা পথে পথে দগ্ধের মানুষ
আঠারো বিশের ঘন্টা,রথের শ্রমের রক্তচোষে
শোষণে দেয়ালে সূর্য ডোবে রোজ মজুরি শূন্যতা
তাঁরাই আসনে বসে লুণ্ঠিত প্রাসাদে রক্তশার্ট।
সুগন্ধি একতাকণ্ঠ প্রাপ্য দাবি আন্দোলনে ডাক
সাহসে মিছিলে গুলি কৃষ্ণচূড়া সড়কে মোহনা
আহত হৃদয় পুড়ে গুহাবন্দি বেদনা আঁধার
মেঘের পাহাড়ে বৃষ্টি অবিরাম ঝড়ের চাবুক।
সত্যের ঘামের জয়ে মৃত্যুদণ্ড শ্রদ্ধায় মুকুট
উত্তাল শহর গ্রাম দেশজুড়ে রক্তের নিশান
বিজয়ে প্রদীপ হাতে মেহনতি ফসলে-সৌরভ
পহেলা মে স্মরণীয় ইতিবৃত্তে আলোর মশাল।
গুণ টানা মনোচোর
মিষ্টিপানে ঠোঁটেলাল,চারুফুল কাচির ঘরের
শব্দেশিল্পে বীজবুনে, স্বপ্নমাঠে প্রেমের সুরভি
আড্ডারু জমেছে তীর্থ গ্রহ থেকে নতুন সন্ধানে
রাত শেষে দিনে শুরু, ধ্যানমগ্ন আকাশে গুহায়
যতই পাঁজরে যাই, দেখাদেখি চুম্বকে মলাটে
হাজার প্রহর গুনে প্রকৃতির শহরে ভ্রমণ
নিষ্পাপ আলোর প্রভা ঝিলমিল প্রথম অতিথি
হাজির জিবরাইল, রাস্তা-পাশে বোরাকে উড়াল।
অন্দরমহলে শুয়ে ক্লান্তদেহ চোখের আঁধার
শান্তিরগুদামে ঢেউ দ্বিপ্রহরে টেবিলে খাবার
বাতাসে জিকিরে রূপ এলোমেলো ছন্দের পতন
আলো-ছায়া উঁকিমারে মান্ডকের প্রবেশে আকুতি
পর্দাটেনে চন্দ্রাবতী, দীপ্তিহাসি নৈকট্য আলাপ
গুণ টানা মনোচোর ডানামেলে সমুদ্রে-সাঁতার।
অশনি নূপুর
ফর্সামুখে তীব্রতাপে জলেঘরে বিষাদে ওঙ্কার
ঝড়োবায়ু গুপ্তঘুর্ণি উগ্রস্বরে অদূরে পলকে
বিরহের দৃশ্যছবি ক্ষেতেমাঠে সোনালি খাবার
পায়ের শিকলপরা চারিদিকে আঁধার মিলন।
প্রকৃতির অভিশাপে মহামারি হাজিরা খাতায়
ঘুরে-ফিরে স্বপ্ন ভাঙে, সোনাফলা গোলাপ কপালে
নিষ্ঠুর নিয়তি ডাকে, আমফানে অশনি নূপুর
সন্ধ্যায় সুন্দরবনে ঘেষাকূলে।আঘাতে প্রস্তুত।
উপকূলে নুনালতা সংকেতে উজানে বেহুশ
উড়ে যায় স্মৃতিপাতা মাটিদেহ সলিল সমাধি
শোকগাথা বুকেজমা নিত্যসখা জীবনকাহিনী
মৈনাক চূড়ায় ছায়া, মনকাঁদে শান্তির আশ্রয়।
মোহনপলি
ফুলপাখি গৃহবন্দি পদচিহ্ন নেই
বালিপাড়া ঝাউসখি হরিৎ নয়ন
লাবণী সুগন্ধা পাড়ে কলাতলী মোড়
নোনাজলে ডলফিনে অবাধে পুলক।
খবরে সৌরভে নৃত্য গোলাপ সাঁতার
লালকাঁকড়ার ঘাটে কাছিম অতিথি
নিরিবিলি শব্দমালা কবিতাশহর
দইজ্জ্যা প্রকৃতিধন শান্তির দীর্ঘায়ু।
প্রত্যহ নতুন পথ এঁকেছি ঢেউয়ে
বিমূর্ত মোহনপলি পরমায়ু বীজ
সুন্দরে মুগ্ধতা কেউ, হাজিরা পাতায়
নিমার্ণের স্বপ্নবাড়ি আসল চেহারা।
গুচ্ছ কবিতা পড়লাম। “নিলয় রফিক” রচিত। তবে এই কবিতারবার্তায় অনেক দূরবদ্ধদৃষ্টির আড়ালে যেন এক অলৌকিক বালিকা মেঘের ঝিলিক। কবিতার পরতে পরতে নান্দনিকতার নকশি সূতার বোনা দূরগম গিরিপথের বাঁক। কবি নিজস্ব বলায় বৃত্তের মধ্যে বিচরণ করেছেন রচনা শৈলীতে। শ্রমজীবি, মানবতার কথা,প্রেমের সুরভি, বিরহ অশনি নুপুর,ঝড়োবায়ু ঘুর্ণি, প্রেম, প্রকৃতি প্রভৃতি তার কবিতার উপকরণ। kকবিকে আমার শুভেচ্ছা।
…….. কবি শওকত আলম
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার মতামত পড়ে ধন্য হলাম। সত্যি-ই বড় ভাই কবি নিলয় রফিক তাঁর নিজস্ব বলয়ে সৃষ্টি করে যাচ্ছেন এক একটি নতুন বাঁক। যে বাঁকের গতিপথে অন্য কেউ মাড়িয়ে গেলেও কবি নিলয় রফিককে ছুঁতে পারবে বলে মনে হয় না। উল্লেখ্য যে, কোন পত্রিকা, ছোট কাগজ কিংবা অনলাইনে নামবিহীনও যদি প্রকাশিত হয় তখনও পড়া মাত্র বুঝা যায় কবি নিলয় রফিকের কবিতা…