গুচ্ছ কবিতা সালেহ্ রনক
মন আর বসে না আজকাল
আজকাল মন বসে না
মন আর বসে না আজকাল
হাঁটে, বকবক করে একা
মন আর বসে না আজকাল।
গৃহবন্দি মন বেঁধে রাখি ঝুল বারান্দায়,
বহুবার পড়া বুড়ো রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতার ভাঁজে
মনটাকে রেখে দেই আজাকাল
পাহারায় ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে ঝরে যাওয়া ময়ূর পালক
তবু মন বসে না আজকাল,
মন আর বসে না আজকাল।
আঙুলেও ঝড় ওঠে
ক্লান্ত রিমোট বাটন
স্ক্রিণে ধীর লয়ে নীল দরিয়া
কি জানি কী করে সারেং বউ !
তাই মন বসে না, মন শুধু হেঁটে চলে
গৃহবন্দি মন।
আজ বহুদিন বহুদিন পর মুঠোফোনে তোমার চিঠি পেলাম,
প্রিয়তমা !
তোমারও মিললো অবসর ?
অনন্ত বোঝা কাঁধে, পথ চলতে চলতে
মনটাকে আর বসতে দিয়েছি কবে ?
আজ হঠাৎ গতি থামিয়ে দেয়া মহামারী
দিয়েছে অখণ্ড অবসর, এবার বসুক মনটা, জিরিয়ে নিক
সুরা পান করতে করতে বাকচিত হোক প্রতিবিম্বের সাথে।
জানতে চেয়েছো, কেমন আছি?
পদ্মা যেমন, নামধাম সবই আছে
নদী নামে চেন,বয়ে চলা নেই,
আমিও তেমনি আছি
খাঁ খাঁ চৌচির।
মনটাকে হাতের মুঠোয় বেঁধে
ভাইরাসে আতঙ্কিত পৃথিবীতে
আমি ভালো আছি নদীর মতন।
অবরুদ্ধ দিনলিপি
উদারতা দেখে দেখে
ধরেই নিয়েছি,
রাগহীন ক্ষোভহীন প্রকৃতিমাতা
কেবলই সয়ে যায় ক্ষয়ে যায় সকাতরে।
নিসর্গকে করেছি তুচ্ছজ্ঞান
প্রকৃতির রুদ্ররূপে
আজ মহামারী তারই প্রমাণ!
মানুষের লোভ, পাপাচার
তাই ফিরে আসে আজ, সেই কন্ঠেই ধ্বনিত হয় মহামারী
বজ্রাঙ্গিনী পৃথিবীটা উষ্ণ হতে হতে
এন্টার্কটিকায় গলেছে বরফ ।
পাহাড়, নদী, বন, সমুদ্রে করেছি দস্যুতা
প্লাস্টিক দিয়েছি ঠেসে জলজের বুকে,
মাংসাশী লালসায় রক্তাক্ত মায়া হরিণের ঘাড়।
মানবতা ঝুলে আছে সীমান্ত কাঁটাতারে
মানুষেরা হয়ে যায় লাশ
দেশে দেশে
ঝুলে আছে ধর্মের সাইনবোর্ড।
দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে
শোষিতও হয়ে ওঠে পরাক্রমশালী
প্রকৃতি এমনই
ক্ষমতাবান
অগ্নিদৃষ্টিতে পুড়ে ছারখার হয়
দেশ মহাদেশ, লোকালয়।
মানুষ মরছে, মানুষ লড়ছে
কি অসহায় আজ তারা,
স্বেচ্ছা গৃহবন্দি হতে রাজি আজ
ভ্যাটিকানও খাঁ খাঁ ।
ইসরাইলও আজ ভুলে গেছে যুদ্ধের কূটকৌশল
অবরুদ্ধ সকলেই নিজের ভেতর।
জীবন ?
আজ তার কিইবা মূল্য?
এইবার, হ্যাঁ, হ্যাঁ এইবার
যদি পারো বের করো তোমার মিসাইল
ছুঁড়ে মারো হাইড্রোজেন বোমা
ট্যাংক, সাবমেরিন নামাও
রুখে দাও প্রকৃতির এই বিরূপতা
পারবে না জানি….
তবে এসো এইবার,
হাঁটু মুড়ে বসো,
করজোড়ে চাও ক্ষমা, কেবল ক্ষমা
এ প্রলয় বন্ধ হোক
বন্ধ হোক এ প্রলয়
প্রকৃতিমাতা, তোমার আশ্রয় যাচি।
খলিলেরা আজ ডিটেনশানে
রাজাসনে বসেছে বুনোফুল
নদ-নদী, পাহাড় সাগর আর লতাগুল্ম
সভাসদ তার।
বিচার বসেছে,
হল্লা করছে পরিষদ ‘ডিটেনশান’ ‘ডিটেনশান’ !
নিল ডাউন ! আদেশ আসতেই হাঁটু মুড়ে বসে মানুষের দল
দুহাতে করজোরে চায় নিষ্কিৃতি, ক্ষমা !
কলিজা খুবলে খাওয়ার শাস্তি হলো নির্ধারিত অবশেষে
হাত ধোও, হাত ধোও
ধুতে ধুতে মুছে ফেলো পাপরেখা সব,
হুড়মুড়িয়ে দিগ্বিদিক ছুটতে থাকে
দিকভ্রান্ত খলিলের পাল।
এরপর গৃহবন্দিত্ব,
হাত ধুচ্ছে, ধুচ্ছে ধুয়েই চলেছে কেবল
পাপরেখা মুছতেই হবে আজ।
বেঁচে থাকার কী সুতীব্র বাসনা !
পরিহাস করে সভাসদ,
ঘরবন্দি মানুষের এই দুর্যেোগে মেলে অবসর
ফ্ল্যাশব্যাকে চলে যায়
অব্দ অব্দ আগের সময়ে
চিলির ভূ-কম্পনে মৃত পাঁচশত শবের সাথে দেখা করে আসে,
জেনে আসে সুনামীর ভেসে যাওয়া লক্ষ লক্ষ শবের হালফিল
এরপর চলে যায় হিরোশিমা-নাগাসাকি
বোমার শহরে
ধ্বংসস্তুপে অদ্ভুত রাত নেমে আসে,
হেঁটে চলে শবদেহ খসে পড়া মাংসপিণ্ডরা
আর কাতর গোঙানীর শব্দ…..
এরপর সম্বিৎ ফিরে পায় নষ্ট মানুষের পাল
গৃহবন্দি সময়ের ডিটেনশান
হাত ধোও হাত ধোও।
শাস্তি এসেছে বহুবার
প্লেগও অচেনা ছিলো, কলেরাও তাই
কত কত শাস্তির ক্ষত আস্তিনের ভাঁজে ভাঁজে নিয়ে
কলজে খেকো দিকভ্রান্ত খলিলের দল
ফুল, পাখি, নদী-সাগরের ডিটেনশানে
ধুয়েই চলেছে হাত, পাপরেখা
গৃহবন্দি খলিলেরা সাফসুতরো হয়ে
এরপর ফলাবে সবুজ।
পুনশ্চঃ প্রকৃতির এই দুর্যোগে মনে পড়ল খলিলুল্লাহ্’র স্মৃতি। ঢাকার খলিলুল্লাহ্ মৃত মানুষের কলজে মাংস খেত। যে ছিল মানসিক রোগী। বিশ্বজুড়ে সুস্থ মস্তিস্কের খলিলুল্লাহ্ রা খুবলে খেয়েছে প্রকৃতির কলজে মাংস। প্রকৃতিকে খুবলে খাওয়ার অপরাধে শাস্তি ভোগ করছে আজ খলিলুল্লাহরা।