গুচ্ছ কবিতা মাসুদ পথিক

সংসারের রিমিক্স

সংসারে, কাঠাল পাতার তৃতীয় চোখ দিয়ে ঠিক, আর
দেখেছি ঠিক, ট্যাবুর হৃদপিণ্ড বেয়ে ঝরে ভাতের মাড়।

ঘরের পিছনে পেচতা তোলার ফাঁকে কন্যা বললো,
ভাতের মাড়ডা রাইখো মা, খামু।

মা রিচ্যুয়ালের দু’বুক বটিতে কাটতে কাটতে বললো,
জাগলি চাইলের মাড় হইলে ভালো অইতো…।

মেয়ে, আহা হেইডা কি আর হইবার?

ছেলে মাঠ থেকে ফেরে মাথায় নিয়ে ত্রিকালবর্ষী দুপুর।
গাঁ জবজবে তার দু’ধার।

ট্রাক্টরের শব্দে উড়ে পাখিগুলি, আর ডিপটিউবয়েলের জল,
স্নানরত আলেয়ার ভেজা বুকের আগুণ…ছড়িয়ে দেয় উঠানে।

তথাপি মা পোড়াচ্ছে চুলোয় সম্পর্কের রঙিন বেজুন,
ভূ কালচারের এইমতো লাকড়ি জ্বেলে জ্বেলে…।

বাবা কাঠাল পাতার ভেতর ঘুমিয়ে দেখেন, ছায়ায় চাপা
পড়েছে জীবনের তিন হাত…

তোর দেহ কাঁদাকাদা

আর আমি জেনেছি একদা
ত্রিভূজের গহীনে জল থইথই
জলে জাগে বক আর ঘর পালানো কই

আর এই জ্যামিতিক বিলে
আমাকে আরো খায় দলছুট চিলে
দোলে উঠি কেঁপে উঠি দেহ পথচারীর ঢিলে
আমি খাই তোকে, আমাকে তুইও খাস গিলে

বক ঘেঁটে ঘেঁটে এই জলাশয়
রেখে গেলো কামনার অব্যয়
যদি হতে পারতাম কামনামাখা বিল
মোহনার পর নিতাম বাঁক, অঙ্গে বিভঙ্গে দিতাম মিল

জ্যামিতি ক্লাসপালানো আমার বড়ই সখ
যদি হতে পারতাম শিকারি এক বক…

হয়, আম পতিত হয় আত্মকেন্দ্রিকতার জয়

এই ধরুন, যে কেনো আমগাছ থেকে
মৌ সুমি আম ভূমিতে পতিত হবার বায়বীয় রাস্তায়
যতোটা বাঁক খায়, আর বাক্য উৎপাদিত হয়
কেবল বাক্য উৎপাদিত হয় ধ্বনি লহমায়

এবং গড়িয়ে গড়িয়ে আর না-গড়িয়ে আম
যতোদূর যায় কতোদূর যায়
সে ভূমিতে ভোগ ও বাসনা
যে উপায়ে ফলের উত্থান ফলমান হয়
হয় কৃষিসম্প্রসারণ নিজ নিজ কায়দায়

অতএব ক্ষেতে ক্ষেতে পতিত এ-জীবন
ধ্বনি বর্ণ অক্ষরের জন্ম দিতে দিতে দিতে
বাক্যের মতো বাঁকা আর একান্ত ভোগবাদী হয়

ফলে আমরা আমের মতো নিজেকে ছাড়া
কিছুই দেখতে পাই না
কেননা বাক্যও সাপ, চলতে পারে এলো, বাঁকা

আমের মতো গড়িয়ে গড়িয়ে জীবন তাই
মাটির দিকে পতিত
ভূ-পাতিত সময়
হয় পরশ্রীকাতর দৃশ্য উৎপাদিত ব্যাকরণের সীমা পরিসীমায়

খুব গোপনে যেকেনো গমনপথের দিকে গেলে
জানা যায় জানা যায় পতনের শেষে এটা লেখা হয়
ব্যক্তি বা বস্তু মাত্রই অাত্মরতি,
তাকেই সৃজন বলা হয়

জানি, নিজের থেকে বড় কেউ হবার নয়
যদিও কালে কালে জনসমাজে প্রচুর অভিনয় ফলবান রয়

তথাপি প্রতিটি মুহূর্তে এইমতো ফল ফলে, ফলে
লোভে, কামে আর সঙ্গমে চোখ জ্বলজ্বলে

বহুদিন পর বাড়ি ফেরাদের একজন

রক্তজবার বুকে রাখে হাত …!
জবা স্মৃতি হয়ে তেড়ে আসে
কোমল বাক্যের মতো,বাতাসে

গন্ধরাজের পাপড়ি ছুঁয় সে-জন
প্রজাপতি হয়ে উড়ে সময়ের দু’পাশে

লজ্জাবতীর বুকে হাত রাখলে
সে পাখি হয়ে ডানা মেলে

পাখির পালক খসে পড়ে জলে
জলে রাখে হাত, এ-যুবক

আগুন হলো কী অদ্ভূত!

কাদায় লেপা হলো আপন ঘর
আর ট্যাবুতে ও’ফুলের মন, আর
ফেরার পথে জন্মালো বাবা ও মায়ের অনুস্বর

ভ্রমণ ডাইরিতে উঁচুনিচু সঙ্গম
কেননা ফুলের বাগান ঘেঁষা তার ঘর

দেখো গুরুতর!
কাজলের ঘর ছেড়ে পালায় আহত শীৎকার
নিহত প্রহর…

ফেরা

আর সবাই একদিন চলে যায়
জানি তুমিও আজ নিরুপায়
চলে যাবে নীরবতায়!

ঘাসের নিচে পুরোনো কথায়
আমি রাখব সব ভালোবাসা
নিরবে লিখবো মনের এভাষা
স্মৃতির পাতায় স্মৃতির পাতায়!!

মাটির বুকে ঘাসের জন্ম
হয় যেভাবে
তোমার বুকের সবুজ বাতাস
এই স্বভাবে
ফিরবো নিয়ে এই আঙ্গিণায়
জোড়া শালিকের চপলতায়

গাইবো গান জনম জনম
প্রান্তরের ওই ক্ষেতের পর
মনের ডালে বাঁধবো ঘর
ভালোবাসা হবে-রে অমর
হবো নীল নীরবতায়
নতুনদিনের কথকতায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *