গুচ্ছ কবিতা মামুন রশীদ
আলিঙ্গন
সম্রাজ্ঞীর মতো চরাচর জুড়ে তোমার বিভা-
অবাক তাকিয়ে দেখে যতো মুগ্ধ পাগল আর
খ্যাতির বৃত্তে আছড়ে পড়া যুবকের দল।
তোমার প্রসারিত হাত- করতল থেকে ঝরে
পড়ে স্নেহ, কেউ কেউ তাকে ভালোবাসা বলে
কুড়িয়ে জমা রাখে কাঁচের বয়ামে।
চাপা পড়তে থাকে সকল নিঃসঙ্গতা।
যজ্ঞের শিখা চোখের তারায় মেখে যখন-
আমার শাহ্জাহান বলে বিত্তহীন প্রেমিককে
জড়িয়ে ধরো বুকের ভেতর, তখন কুঁচকানো শরীরও
আনন্দ ও হাসির হররার ভেতর থেকে জেগে উঠে
বহুদিনের বিষাদ ও হতাশাকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।
খ্যাতির আড়ালে
খ্যাতির আড়ালে লুকিয়ে থাকা যে নাম
তাকে শুনিয়েছো ব্যাঙ্গমা-ব্যঙ্গমির গল্প।
বলেছো হারিয়ে যাওয়া নভোযান
ফেরে না পৃথিবীতে। বলেছো-
চোখের সীমানা অসীম। যতোদূর দেখা যায়,
চোখে চোখ রেখে, রেলস্টেশনে অপেক্ষা-
মেজাজ খারাপ করিয়ে দেয়া, আর
বাসস্টপে বিদায়ে বেদনার মুহূর্তে,
খুব বেশি পার্থক্য রয়েছে কি-না সেই গল্প বলোনি।
তবু অপেক্ষার দৃষ্টি মরুচিকার মতো চলে যায়
দূরের রাস্তায়; তোমার চোখের সোনালী উজ্জ্বলতা,
গঙ্গার মাতাল হাওয়া, মায়াবী বিভ্রম-
হে বয়ে যাওয়া তটিনী।
রাফখাতা
একেবারেই অনীহা মাখা, জোড়াতালি দেয়া
যত্নের সুখহীন দূরত্বে, মাঝে মাঝে টেনে
আলোছায়াহীন, এক কোনে ফেলে দেয়া
আমি তোর রাফখাতা?
নিরুদ্বিগ্ন দুপুর, ঘরে কেউ নেই, হঠাৎ ডোরবেলে
উঠবে না বেজে পোষা গানের কলি। সারাবাড়ি খা খা,
হাওয়া তার স্পর্শ বুলিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে
খোলা পাতার রহস্যের ভাঁজে। অনেক জীর্ণ,
দুমড়ে যাওয়া মলাট, খুলে খুলে, খুব ব্যস্ত
লুকনো স্মৃতি থেকে হঠাৎ বেরিয়ে পরে আত্মপরিচয়
যত্নের আড়াল থেকে টেনে তাকে পরিচয়ে বেঁধে দেয়
দূরে হেঁকে চলা ফেরিওয়ালার ঝাঁপিতে।
বল, সত্যি আমি তোর রাফখাতা?
মন, তুই
অধরাই থেকে গেল তোর মন। নিঃস্ব,
দৃষ্টির বাহিরে-একা, ব্যক্তিগত বেদনার
সুর থেকে ভাবনার পাখা মিলিয়ে দিয়েছো
দূরে; -উত্তরাধিকার খুঁজে দেখো নাই।
স্রোতে স্রোতে-ঢেউয়ে সমুদ্রের মাঝে
জানিনা বিক্ষিপ্ত আজ কথামালার ভেতরে
সার্বভৌম হয়ে ওঠে কিনা তোমার হৃদয়?
নিজস্ব জগৎ থেকে শুধু একটি শব্দ-ভালোবাসি
কতোটা দোলায় আর ঢেউয়ে ভাসায়
পাতায় পাতায় দাগ রাখে- ক্যালেন্ডারে;
জমিয়ে রাখে ফেলে আসে ট্রেনের টিকিট।
খুন হবি? তবু মন, তুই কখনই অধরা থাকবি না।
প্রতিজ্ঞা
প্রতিটি ব্যর্থতার পর, আমিও পারি
এই মুষ্ঠিবদ্ধ প্রতিজ্ঞা বেসুরো হয়ে ওঠে।
দৃঢ়তা, সকল ছলাকলা, জমানো আগুন
তেড়েফুঁড়ে, লেলিহান শিখায় ছড়িয়ে পড়ে।
শীতের মেহগুনির খোলশ ফেটে
থরে থরে সাজানো বীজগুলো, শুকনো,
বিকট শব্দে চিৎকার তোলে।
এরাও জল পেলে, রোদ মেখে ফুঁড়ে উঠতে
চাইবে আকাশ। এও তো ছলাকলা, জীবনের
রঙ্গলীলা, এও তো আমন্ত্রণ ব্যর্থতাকে উপেক্ষা করে
বসন্তকে সবুজে সবুজে ছেলেখেলায়।