রিজোয়ান মাহমুদ- এর কবিতা

লালখুনের পরাগ মিছিল

কখনো কোথাও কেটে গেলে রক্ত ঝরে
কেউ বলে রক্ত
লা…ল রক্ত!
কেউ ভাবে খুন; দুটোর–ই একই ধরন
ব্যাকরণ সম্মত উত্তেজনার রঙ নিয়ে
আমারা সবুজ প্রকৃতির দিকে হেঁটে যাই
রক্তজলেরা প্রভোকেটিভ
লাল– দেহের নেটিভ
যদি মানুষের রক্ত শাদা হতো
টিকটিকির মতন শাদারক্ত ক্ষুরে
একটি পোকার মৃতদেহ,
তবুও কখনো হয়না জানাজা পোকার!
শাদা যেহেতু উত্তেজনার রঙ নয়
জাগ্রতচিত্তের নয়
লাল রক্তের জানাজা নিয়ে সারিবদ্ধ দাঁড়ানো মানুষ
ভাবতে শিখেছে; আগামীকল্য সমস্ত ভুলে যাওয়ার
ভালোবাসিবার…

জেনেসিসের ধূসরপাতা

কবুতরের মতন দেখতে তুমিও
অথচ দুর্ভাগ্য কবুতর নও
নিকষ আঁধার কালো তোমার দেহের
ধোঁয়া হতে এসেছে কী!
কিতাবে তোমাকে ফাসিক বলেছে;
যুগে যুগে প্রতারণার দেবতা রূপে
পূজিত হলেও কারো কারো জঞ্জাল নিমিষে
সাফ করেছ তুমিও।
জানি তুমি কর্ভিডি গোত্রের
প্রতিদিন ভোরে আমার উঠোনে তীক্ষ্মস্বরে
চেঁচাও উচ্ছিষ্ট খেতে।
যে তুমি নিপুণ দাফন শেখালে হাবিলের
সে তুমি আমাকে দেখে কেন এতো লজ্জা পেলে
ভাবছি অধম আমি আজ তোমার চেয়েও…
জেনেসিসের ধূসরপাতা কান্না করে।

ভিন্ন এক দেয়াল

দেয়ালটি সবার আড়ালে বিষণ্ণতা দিয়ে তুলেছি এবার
এক কলস দুপুরে যখন ঘুমেছে পাতা
যখন ঘুঙুট রাগ নেমেছে আঁধার করে,
দেয়াল নির্মাণে মনিব ছিলনা পাশে;
এটি আমাদের দুর্ভাগা মনন বৈষম্যের বিরুদ্ধ আকর।
শাদাচুনকামে খুব সুন্দর দেখায় জ্যোৎস্না প্লাবিত আঁধারে
দেয়ালচিত্রটি গুডবুকে ছিলনা কখনো
একটিপ নদী এঁকে তাতে জল দিলে
ঢেউগুনা শুরু হয়ে যায়।
দেয়ালটি দেশ ভাগের না, মন ভাগেরও না
অদৃশ্য সুতোর সুঁই নিয়ে ঢাকা বিধবার ছাপ
তোমার সকাল যাতে এ পাড়ায় না আসে, ব্যবস্থা নিতে
প্ররোচিত দেয়ালটি …

ফড়িঙ বিপন্ন সময়

ফড়িঙ উড়ছে
যে বনের ফড়িঙ পাশের
তাকেও বুঝিনা, ধরি
ছায়াসঙ্গমের দুকূল হারিয়ে গেলে
আমারা দর্শন খুঁজি
রাত খুঁজি
খুঁজি না নিজেকে।
গতকাল বন্ধুর পাজামা ঘিরে
যখন অন্ধত্ব নেমে এলো,
অমাবস্যা যখন গোড়ালি বরাবর
অথচ তখনো আমাদের ঘিরে পার্কির ফড়িঙ
উৎসব;
এসবের মর্মাবধারণ আমাদের হয়না কখনো
আমারা অতীব উচ্চারিত শহরের
পচনের উন্মত্ত খেলায়…

কারে বানাও মহাজন

ফুলের পাতায় মেদ জমলে
বৃষ্টি পড়ে
বৃষ্টির নাম কাজলপাখি
জলকিতাবের ঘোরে সে মরমে
পাঠায় আকাশ,
কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই
জলে নাইতে নামে শাড়ির দেশ
আমাদের রক্তাক্ত মাতামুহুরি।
একটি কচি ডাবের দেহ মঞ্জুরি
বেয়ে নামে সর্পবিষ
ও দেহ কারে তুমি বানাও মহাজন।

নুনের অর্চনা

নুনক্ষেতে চাঁদ ওঠে
শুভদর্শী যে করেছে, তাকে মোটামুটি চিনি
এসবের কিছুই বোঝেনি সরোদ মাস্টর
পুঁথি নিয়ে তিনি হরহামেশাই মশগুল
যেন ওড়ে যাবে গাছ–পাখি–নিভৃত দুপুর।
নুনের নিচোল গোলাঘর
আরও নিচে রক্তারক্তি বিম্বিসার
কেন রে সরোদ দোজবর !
যে পুঁথি সেলাই করে মন– ভূতলের আম্বরখানা
সে বোঝে না ছত্রাবাস বোঝে নুনের অর্চনা।

তাম্রলিপি

আমি যে কি লিখি, ফেরেস্তা জানে না
যদিবা না জানে হরফ, বুকের তাম্রলিপি
কোন গরজে চাওনি ফিরে, এ শহর
প্রেতের আঁধার ,মানব প্রহার ছিপি।

মেঘ ধুরন্ধর ভাসে আসমানে, আহকাম
জানে জল ,কোথাও কি শান্ত সরোবর
হাওয়া বদলে দিয়ে ওড়ে কবুতর
ভুলে গেছে নিতে ডানার রুদ্রজ পয়গাম।
ক্ষমতা আকাশ ছুঁই, সেলাই পাঁজরে
মনসুঁই
প্রভাত দেখার আগে ছিন্নভিন্ন খাম!

বরফনামা

রাতে বরফকলের আওয়াজ
দৌড়ে যাই মাঝরাতে
আওয়াজ খুঁজি ডানে–বায়ে
পাইনা কোথাও।
নাকে গন্ধ টের পাই, জলের কূলের
মধ্যরাতে যা শুক্তির অতলে
দেখি, হৃদমাঝারে বরফ কাঁদছে এবার
বরফের নাম ক্লেদাক্ত আগুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *