সাজিদুল হক- এর কবিতা
সমবেত উচ্চারণ
মোরগের ডাকে এসেছিলো ভোরবেলা, গোলাপকে অপেক্ষায় রেখে সূর্য ডুবে রোদে পোড়া দুপুরে। ঘুমুচ্ছে শুকনো পাতারা; নিজেকে মূলধারার ভেবে মঞ্চে অনুপ্রবেশ। বিশাল শূন্যতা, অনেকেই কেন ফেরায় না চোখ? কোথাও নেই শব্দের ব্যঞ্জনে আরক্ত নারীর মুখ ; রঙবেরঙের উৎসবে ঘোড়ার পিঠে বসা রাজকুমারের হাতে শাহনামা। ডানাছাড়া যেন বকপাখি বুক পেতে দিয়েছে। চৈত্রের ক্ষোভে ঝরাপাতার বিলাপ কক্ষপথে ; কবিগণ আশ্বাস দিলো সূর্যদেবতার। মুখোমুখি বসে থাকে সমবেত জনগণ; বলে তারস্বরে, বাহ! অসাধারণ! শিকড়সমেত উপড়ে যায় ফুল গাছটা।
মতবিরোধ
কান দুটো আকাশে ভাসমান চিলের ঠোঁটে, এক কান থেকে দশ কান। পেছনে ছোটার অভ্যাস মানুষের ভীষণ পুরনো ; পায়ে জোর পাই না বলে অনেক বছর পিছিয়ে অনেকের থেকে। পরাজয় জন্মসঙ্গী, কী হবে অন্যের জয়ে। তারাবাতি জ্বেলে করুক উল্লাস ; সংখ্যালঘুর আপত্তি থাকতেই পারে। বাঁধভাঙা স্রোতের প্রতিকূল অতিক্রম সম্ভব! উল্লাস নিয়ে এই মতবিরোধ রেখে যায় প্রশ্ন, হায় চিল! সব দায় শুধুই তোমার ?
শহরে নবাগত
বেঁচে থাকার অভিনয়ে ভালো থাকবে টবের ফুলপাতাগুলো? উদার জমিনে নীল রক্তের চাষ হচ্ছে দ্বিতীয় পর্বে। ইদানীং বিশেষ আগ্রহ বুলেটে; আমিও মুখগুলোর একজন। প্রিয় বান্ধবী ডুমুর ফুলের নেশায় ভুলে গেছে চুমুর স্বাদ। মনে থাকে দৈবক্রমে, তা সবই একান্ত। অনুরাগ নিজের জন্য, ঘৃণার সুষমবন্টন। শহরে এলো নবাগত, স্বভাবে নেকড়ে। স্বাগত বক্তব্য জানিয়ে সবাই আমার অপেক্ষায়। ক্লান্তি কাউকে স্পর্শ করে না।
অনেকের চোখ নেই
ভেঙে পড়েছে আকাশ নিঃশব্দে
শুধুই কী আকাশ?
বাজারে বিধ্বস্ত কতগুলো মুখ,
অনেকের চোখ নেই
আস্থাহীনতা কিতাবে
আস্থা কী ব্যালটে?
অপচেষ্টা অক্ষর চেনার
যাদুবিশ্বাস সংক্রান্ত বই হাতে ব্যস্ত
আলো স্থিতিশীল চোখের মণিতে
এক লক্ষ ছিয়াশি হাজার মাইল দূর
সে সময় আসবে না,
হাতের মুঠোয় নিয়ে ফেরি করবে স্বপ্ন
রাখাল বালক,
কতটা পথ পেরুলে আমি যেতে পারি
আলোর আড়ালে?
যদি গতরাতে দেখা দুঃস্বপ্ন মিথ্যে হতো
ঘরের দুয়ারে কাটা খরগোশের রক্ত! কতোটা বিনয়ের সাথে বলেছেন মুছে ফেলতে অবাঞ্চিত এইসব দাগ। পুরনো কথার নৈরাজ্যে সুপ্রসন্ন হয় কেউ? প্রতিধ্বনি দিগন্ত ছাড়িয়ে, আমরা ক্লান্ত শুনে শুনে; দীর্ঘকালের অনুগত সমর্থক সবিনয়ে জানিয়েছেন অপারগতার কথা। ঝাপসা চোখে দেখলাম পাশ কেটে গেল অতি ক্ষুদ্রতম এক ইঁদুর; একাকিত্বকে অন্য রকম চোরাবালি ফাঁদ । পোষ্যপুত্রগণ অমাবস্যার রাতে পথ খুঁজছে পালানোর, সবই যদি গতরাতে দেখা দুঃস্বপ্ন মিথ্যে হতো।