কবিতা

জিললুর রহমান এর কবিতা

একটি বিস্তীর্ণ মরা লাশের খপ্পরে

ক্ষেতের চারার থেকে আজ
সবুজ পাটের পাতা ভেঙেছে জমির কারুকাজ
শালার ঘুমটা ভাঙে না
ভাতঘুম ভাতঘুম কিছুতে ভাঙে না
স্বপ্ন আর স্বপ্নদোষে ঘরে বসে কাটে দিন
যেমন সূর্যের সোনা ঝরে প্রতিদিন
বিষণ্ন সূর্যের তেজ
এখনও হয়নি নিস্তেজ
তবু, আমাদের তেলতেলে স্বভাবের আলো
প্রদীপের তলা জুড়ে এতো এতো কালো
চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে কতো বীর্য
মধ্যাহ্ন গগনে হায় সৌম্যকান্তি সূর্য
জনপদে তারপরও আজ কেউ বীর্যবান নই
পাটের আঁশের বেশে আমরাও নেতিয়ে পড়ে রই

আমাদের আবাদী জমির যতো সোনালী পাটের আঁশ
ঘরকে ঘিরছে যেন চারিপাশ
মাঠ থেকে আজ থোকা থোকা পাটপাতা
গ্রাম হাঁট গঞ্জঘাট ছেড়ে শহরের দিকে ওত পাতা
ধীরে ধীরে গন্জের ঘাটের যত নৌকার গলুই
গুম হয়ে পড়ে থাকে নদীর দু’পাড়ে ওই
রাস্তাগুলো বেদখল সাড়ম্বরে
একটি বিস্তীর্ণ মরা লাশের খপ্পরে

বাংলার জংলার প্রান্তরের কুয়াশা কাতর হেমন্তকে ঘিরে
আজ আর কোনো উৎসব নেই ওরে
এখানে কেবলি লাশ
খেয়ে যাচ্ছে নিরাসক্ত স্বর্ণালী পাটের আঁশ
এখনও ঘুমের ঘোরে যারা দেখে স্বপ্ন দু’চারিটি
এই লাশ এই আঁশ এইসব ঘোলা ঘোলা স্বপ্নের চ্যারিটি
গিলে খাবে মহাকাল গিলে গিলে আয়ু
তেমাদের যত পরমায়ু
আজ সব ফাঁপা ফাঁপা জ্বলন্ত ফানুস
পাটের চারার ঘাম আমাদের হুঁশ
শ্রমিকের ঘরে নুন দিয়ে যাবে
তুমি সেই নুন শুষে শুষে কী করে বানাবে
রক্ত কিংবা একতাল মাংসের স্তুপ
গোধুলি আলোয় সেইসব স্বপ্ন কী স্বপ্নদোষেরা চুপ

সমস্তু ভূগোলে আজ সোনালী আঁশের
বোঁটকা গন্ধের মৌতাত; বিষণ্ন লাশের
চোখ থেকে কেবল পাটের দড়ি
আমাদের ঘরের ভেতরই
ঢুকে পড়ে হুকুম করেছে কোনো
দিগভ্রান্ত জেনারেল যেন
বলে যাচ্ছে মাখো তেল যতো পারো ধনবাদী গুহ্যদ্বারে
আমরা আসব ফের বারে বারে
আসবোই পাটকল থেকে লাশ হয়ে হয়ে
লাশ করে দিয়ে যাব এই রুগ্ন প্রেতের আলয়ে

ছবি

আরজ আলীর মা’র জানাজা পড়েনি ওরা ভয়ে
মায়ের লাশের ছবি তুলেছে আরজ বড় মায়া করে
আজ তুমি মদীনাতে কাবা শরীফের সামনে দাঁড়িয়ে
কতো যে সুন্দর ছবি তোলো স্বামীর দু’হাত ধরে

পানির ধরম কিন্তু তরল ও স্বাদহীন গন্ধহীন থাকা
বরফ জলীয় বাষ্প পানির স্বজন তবে তারা পানি নয়
আরজের মায়ের সমাজ আর তোমাদের আদব লেহাজগুলা
শীতল শান্তির পক্ষে তবু কিছুতেই এক নয় এক নয়

শৈশবে ফুফুকে পাই সিনেমা দেখেননি তিনি বেহেস্তের লোভে
এখন তো ঘরে ঘরে সিনেমা হলের যুগ যখন যেমন
মানুষের ধর্ম নয় সজল পানির বেশে শান্তি নিয়ে আসে
এখানে আগুন জ্বলে জাতে পাতে ঠোকাঠুকি চলে সারাক্ষণ

আগুনকে তারা বড় ভালবাসে কিংবা কোনো জ্বলন্ত বিক্ষোভ
অর্থ শিক্ষা ভেদাভেদে ইচ্ছে হলে নেভে জ্বলে যতো ক্ষুব্ধ স্টোভ

আমাদের গন্ডোলারা

আমাদের গন্ডোলারা চাক্তাই খালের কালো জলে
দিবারাত্র ঘষটে ঘষটে চলে
হয়ে পড়ে ঘনকৃষ্ণ এবং ফ্যাকাশে
ভেবেছি সমূদ্র যাত্রা শুরু করি একদিন ক্লান্তিজ্বরা শেষে
অথচ নদীর নাব্যতায় আজ সুতীব্র ঘাটতি
চকচক করে না আর গন্ডোলা বা মুদ্রার চাকতি
তবু এক অনন্তের নিত্য আবাহনে
কোনো দূর দিগন্তের পানে
সকলেরই যেতে হবে অন্য কোনোখানে
জীবনের স্রোতের উল্লাসে অথবা ভাটার টানে

আমাদের গন্ডোলায় জমে শ্যাওলা আর নর্দমার পাঁক
জল মজে থ্যাক থ্যাক করে মরে গেছে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ
গন্ডোলার ফুটোগুলি কালো শামুকের অযাচ দখলে
তবু ভাবি একদিন যাব — যাব, সুদূর সমুদ্রে চলে মহাকালে

ফানকুর পৃথিবী

ফানকুর কথা যে জানে সে জানে
একদিন এই পৃথিবী কিংবা আকাশ ছিলো না।

যারা মানে, মানে ফানকুর গড়া সেই মহাডিম
ভেঙে গড়া হয় আকাশ পৃথিবী
বিজুলি বজ্র মেঘ;
আঠার হাজার বছরের ঘুম
ভাঙে নাই, ভেঙেছে অশ্বডিম।
ফানকুর চোখ জ্বলে লাল রবি
চোখ থেকে সাদা চাঁদ
চারদিকে কতো পাহাড় খন্দ
কতো বেদনার ফাঁদ ও ফন্দি।

আমি খুঁজে মরি ফানকুর সে কুঠার —
যার আঘাতেই পৃথিবী হয়েছে,
ডিম হলো ছারখার।
বরফ হাতড়ে যতোটুকু যাই
যতোখানি ঘুরি চীন,
ফানকুর কোনো ফসিলের দেখা
মেলে নাই মেলে নাই।
বরফ যুগের হিম শীতলতা
দু:খগুলোকে ঢাকে
লাল চোখ থেকে সূর্যের তেজ
সাদা চাঁদ দেয় প্রেম।

One thought on “জিললুর রহমান এর কবিতা

  • জিললুর রহমান

    😍

    Reply

Leave a Reply to জিললুর রহমান Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *