মহসিন খোন্দকার এর বিজয়ের কবিতা
স্বাধীনতা, মুক্তি, বিজয়
ভূ-খন্ডিক স্বাধীনতায় ঘুমুতে ঘুমুতে এক টোকাই
দেখে সে এক দারুণ কাঁচঘরে বন্দী,
তার কথা বাইরে যাচ্ছেনা, সে সব দেখতে পাচ্ছে,
একটি দেশের কর্পোরেট হাসি,
দু’টি রাজনৈতিক নদী পাশাপাশি, আকাশের অকৃত্রিম
আলো,কালোর ভেতর আরো কালো, মানুষের
ভেতর হাঁটছে মানুষ, নানান কথার ছুঁড়াছুঁড়ি,
বিজয় বাতাসের উড়াউড়ি,সে একবার চিৎকার দিয়ে
বলেছিল,”বিজয়বাতাস কোন দিকে যাচ্ছ”?
তার কথা বাইরে যাচ্ছেনা,
সে এক দারুণ কাঁচঘরে বন্দী,
একের পর এক নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে, রাজা যায় রাজা আসে,
দেখছে জল্লাদের উল্লাস,হত্যা,খুন,ক্যু,
আগুনসন্ত্রাস,অমানুষ অমানুষ খেলা,অদ্ভুত আঁধারের
হাঁটাচলা,স্বদেশধর্ষণের সময় সে আবার
চিৎকার দিয়েছিল, “ওখানে কে”?
তার কথা বাইরে যাচ্ছেনা।
আমার নরোম রঙিন স্বাধীনতা
মোগল রাজন্যের মতো আমিও রাতের ঢাকায়
হাঁটি,অবলীলায় ঢুকে যাই চোরাগলিতে, কেউ আমাকে
জিজ্ঞেস করেনা আমার বাড়ি কোথায়, জন্মের ফিরিস্তি
টানেনা কোনো বদ আদম;
আঁধারের ভেতর চোখ দেখলেই বোঝতে পারে
এরা তিন “ব” এর লোক,
স্বপ্নের চেয়ে উঁচু যাদের বুক।
আমি আমার সবুজ বাতাস পেয়েছি, কচি বটপাতার
বাঁশি বাজাতে বাজাতে আমি
একরাত রূপবান নিয়ে ঘরে ফিরি, মদির মহুয়া দরজা
খুলে দেয়,আমি মুহূর্তে গার্হস্থ্য ঘ্রাণে
আটকা পড়ি অকাতরে,তারপর চোখে পেলব পাপড়ি
ঝরে থরেবিথরে।
আমি আমার শ্বাসের স্বত্ত্বাধিকার পেয়েছি, বাতাসের
দরজা পেয়েছি “বঙ্গোপসাগর”
পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ধলেশ্বরীর জানালা দিয়ে দেখি
আমার আমিকে,দেখি তিতুমীর,সূর্যসেনের নিষিদ্ধ
স্বপ্নের সাবলিল হাসি, সবুজের ভেতর আরো এক দুরন্ত
সবুজ, পাতার ভেতর হিয়ার মতন আরো এক
হৃদয়পাতা, আমাকে জড়িয়ে রাখে পরম মমতায়,
নদীর মতন আরো এক প্রেমার্দ্রনদী মুছে দেয়
জীবনের ক্লেদ ক্লান্তি, বোধভাবনার করুণ কষ,
তারপর শীতের দাওয়ায় বসে সুখ চিবায় আমার অস্ট্রিক অস্তিত্ব,
সব সময় বামপাশে বাজতে থাকে বঙ্গের বুকস্পন্দন,
আমার নরোম রঙিন স্বাধীনতা,
প্রিয় বাংলাদেশ, আমার একান্ত আদৃতা ।।
আমার সোনার বাংলা
সাহসের ভেতর থেকে উঁকি দেয়া অনুসূর্যটা চুবুৎ করে
ঢুকে গে’ল বুকে,মুহূর্তে উড়ে গে’ল ভয়ার্ত
ভাঙ্গচূড়া সময়,একটি সাদা-কালো দোয়েল শিস দিয়ে
আমার চোখে লিখল “বিজয়”, আমি মাইল মাইল
হেঁটে গেলাম ভেজা ঘাসের ভেতর, লাউ-মাচার নিচ
দিয়ে যেতে যেতে কুমড়োফুল
আমার মুখে আনন্দ আভা ঢেলে দিয়ে
বলল,”জয়বাংলার লোক তোমাদেরকে ধন্যবাদ”
তার কথার সাথে টুনটুন করে স্বর মেলালো একটি টুনটুনি;
শুকনো রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে প্রাণভরে
আকাশ দেখলাম,মাথার ওপর একটি পাটকিলে চিল
“আমার আকাশ” ডাক দিয়ে উড়ে গে’ল
পুব মেঘনার দিকে,তার ডানার ভেতর
এখন জেঁকে বসেছে প্রণয়ের প্ররোচন,একটি রাখাল
কোমড় থেকে বাঁশি বের করে বাতাসের ঠোঁটে চুমু দিয়ে
বলল,”আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি”।।