গদ্য।। লিটল ম্যাগ: আকাশ ছুঁতে পারে।। সুমন বনিক

লিটল ম্যাগ- বামুন হয়ে চাঁদ ছুঁতে চায় এররকম তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে যারা নাক সিটকান; তাদের মুখে চুনকালি মেখে বলতে চাই- লিটল ম্যাগ শুধু চাঁদকেই ছুঁবে না বরং সেই চাঁদের পৃষ্ঠাদেশ ঘনন করে তুলে আনবে কাঁকড় পাথর মৃত্তিকা জানিয়ে দেবে প্রাণের স্পন্দন, জলের বার্তা। লিটল ম্যাগকে সাহিত্যের ব্রাত্য অস্পৃশ্য অনুষঙ্গ ভাবাটা মূঢ়তা। কেননা সাহিত্যের সুনীল আকাশে যারা দ্যুতি ছড়ান তাদের সুতিকাগৃহ লিটল ম্যাগ। মনের দরোজায় একটি প্রশ্ন বার বার টোকা মারে কেনো লিটল ম্যাগের উদ্ভব? একটু পেছনে ফিরে যাই। ১৮৪১ সালে Ralph Waldo Emerson I Margaret Fuller সম্পাদিত The Dial এর মাধ্যমে লিটল ম্যাগাজিনের অভিযাত্রা শুরু হয়। ইমার্সনের নতুন দর্শন Transcendentalism এর যারা অনুসারী ছিলেন তাঁরাই Dial ম্যাগাজিনে লিখতেন। Ralph Waldo Emerson তাঁর দর্শনে Self- Reliance এর উপর আলোর প্রক্ষেপন করে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তনের আঁচড় কাটেন। তাঁর দর্শনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়  ছিলো ‘A  Core belief of Transcendentalism is in the inherent goodness of people and nature. Adherents believe that society and its institutions have corrupted the purity of the individual and they have faith that people are at their best when truly ‘self- reliant’ and independent. ধান ভানতে শিবের গাজন গাওয়া হলেও এর পেছনের কুযুক্তি (?) হলো লিটল ম্যাগ বাঁকা চোখে দেখে সমাজ মানুষ ধর্ম ও রাষ্ট্রব্যবস্থাকে। স্রোতের উজানে কিংবা গড্ডালিকা প্রবাহে ভাসতে চায়না। ইমার্সনের দর্শন ভারতবর্ষ পর্যন্ত  স্পর্শ করেছিলো। আর Dial এর ভূমিকা ছিলো আগুনে ঘি ঢালার মতোই। ১৮৯৬ সালে The Savoy বের হয়। জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই স্বল্পকালে আটটি সংখ্যা প্রকাশিত হয় লন্ডন থেকে। প্রকাশক ছিলেন Leonard Smithers. The Savoy এর আবির্ভাব ঘটেছিল “A Manifesto in revolt against Victorian materialism” ভিক্টোরিয়ান পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে Savoy  প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠে। উদারপন্থী ও সাম্যবাদের চিন্তা চেতনার ধারক-বাহক হয়ে উঠে Savoy । যদিও এর আয়ুকাল ছিল ক্ষীণ। মাত্র আটটি সংখ্যা বের হলেও নাড়া দিয়েছিলো সাম্রাজ্যবাদের প্রস্তর স্তম্ভে। লেখক Arthur Symons তার Savoy -র জীবনকালের ব্যর্থতা সীমাবদ্ধতা স্বীকার করে নিয়েছিলেন। সাহিত্য ক্ষেত্রে বিশশতকের গোড়ার Poetry: A magazine of verse (Chicago.১৯১২)  লিটল ম্যাগটি সাড়া জাগিয়েছিলো। এটি সম্পাদনা করেছিলেন হেরিয়েট মনরো Harriet Monroe  এই লিটল ম্যাগ যে উদ্দেশ্য নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছিল সেটি ছিলো এরকম: ‘‘The Magazine was instrumental in launching the Imagist and objectivist Poetic movement’ Poetry তখনকার সময় কবিতার নতুন ধারায় সূচনা করেছিল। T.S. Eliot’s এর কবিতা প্রফেশনালী প্রকাশিত হয় এই লিটল ম্যাগে। কবিতাটি ছিল  ‘The Love Song of J. Alfred prufrock’।  পাশ্চাত্য দুনিয়ার  The Germ, The Savoy, The Dome, Blast, The Dial, The Egoist, Horizon ইত্যাদি  লিটল ম্যাগ ছিলো এক একটি দেশলাই কাঠি, যা অগ্নি স্ফুলিঙ্গ ছড়াত। প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যের সাহিত্যের সেতুবন্ধন লিটল ম্যাগাজিনের ভূমিকা ধনাত্মক প্রবাহে বহমান হতে থাকে। বাংলা সাহিত্যের উত্তরণকালে কাঠামোগত Structural Change of literacy ঘটে লিটল ম্যাগের হাত ধরে। ১৮৭২ সালে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত বঙ্গদর্শনকে বাংলা ভাষার প্রথম লিটল ম্যাগাজিন হিসেবে ধরা হলেও পশ্চিমা দুনিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রথাবিরোধী, মননশীল ব্যতিক্রম ধারার সাহিত্য নিয়ে লিটল মাগাজিনের যাত্রা শুরু করেন প্রমথ চৌধুরী ১৯১৪ সালে। ‘সবুজপত্র’ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে শুধুমাত্র বাংলাভাষাকে সাধু ভাষার প্রভাবমুক্ত করে চলতি বা কথ্যভাষাকে প্রাধান্যর জন্যই চিরস্মরণীয়ের তালিকায় থাকবে। সবুজপত্রের প্রথম সংখ্যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত এবং প্রমথ চৌধুরীর লেখা সন্নিবেশিত হয়। ধূর্জটি প্রসাদ মুখোপাধ্যায়, কিরণ শঙ্কর রায় সবুজপত্রে লিখতেন। কান্তিচন্দ্র ঘোষ, কিরণ চক্রবর্ত্তী এবং সুরেশ চক্রবর্ত্তী ও কবিতা লিখতেন। বাংলা সাহিত্যের নানান বিষয়ের উত্থান ঘটাতে সবুজপত্রের ভূমিকা, অবদান স্মরণীয়। তবে বাংলা সাহিত্যে লিটল ম্যাগ যে আলোর  বিচ্ছুরণ ঘটেয়েছিলো সেটি ছিলো বুদ্ধদেব বসুর ‘কবিতা’ ১৯৩০ সালে। রবীন্দ্র পরবর্তী শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে স্বীকৃত জীবনানন্দ দাশের আবিষ্কারক সম্পাদক বুদ্ধদের বসু। পাকা জহুরির চোখে তিনি জীবনানন্দকে চিনে লোকচক্ষুর অন্তরাল থেকে বের করে এনেছিলেন। তার ‘কবিতা’ পত্রিকায় ‘প্রকৃতির কবি’ শিরোনামে জীবনানন্দের ‘ধূসর  পান্ডুলিপি’ কাব্যের পূর্ণাঙ্গ আলোচনা করে তাকে প্রাপ্য মর্যাদা দিয়েছিলেন। জীবনানন্দ যখন উপেক্ষিত ছিলেন ‘কবিতা’ তাঁকে আলোর নিচে নিয়ে এসেছিল। শুধু জীবনানন্দই নয়, আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম স্রষ্টা সুভাষ মুখোপাধ্যায়কে খুঁজে বের করেছিলেন বুদ্ধদেব। কবিতা পত্রিকায় তার কবিতা প্রথম প্রকাশিত হয়। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের, কাব্যগ্রন্থ ‘পদাতিক’ জন্মলাভ করে বুদ্ধদের বসুর ‘কবিতা ভবন’ থেকে। বাংলা কবিতার সম্ভাবনাময় কবি ও কবিতার আতুরঘর লিটল ম্যাগ- ‘কবিতা’। বিষ্ণুদে, প্রেমেন্দ্র মিত্র, সমর সেন, সঞ্জয় ভট্টাচার্য্য, সুধীন্দ্রনাথ, অমিয় চক্রবর্ত্তী, অজিত কুমার দত্ত, ‘কবিতা’য় ঠাঁই পেয়েছেন। সচেতন পাঠকের সঙ্গে নবাগত কবিদের যুৎসই সেতুবন্ধন নির্মাণ করেছিলেন বুদ্ধদেব বসু। কবিতার কৌলিন্য বৃদ্ধিতে তিনি আজো নমস্য।

 ষাটের দশকে কবি পবিত্র মুখোপাধ্যায়ের ‘কবিপত্র’ ঘিরে Third literature আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। ষাটের দশকে বাংলাদেশের লিটল ম্যাগাজিনের আন্দোলন শুরু হয়। সে সময় মানুষের চেতনা জগতে স্বতন্ত্রধর্মী পরিবর্তন লক্ষ করা যায়, যা সাহিত্যেও রাজনীতিতে প্রভাব ফেলে। পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণনীতি সামরিক জান্তার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে লিটল ম্যাগ হয়ে উঠে প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর। ১৯৪৯ সালে ফজলে লোহানীর সম্পাদনায় বের হয় ‘অগত্যা’। নাগরিক জীবন, মধ্যবিত্ত এবং বুর্জোয়া মানবতাবাদী মানসিকতাকে ব্যঙ্গ করে এর প্রতিফলন তোলে ধরা হয়েছিল ‘অগত্যা’য়। প্রতিশ্রুতিশীল মেধাবী তারুণ্য উচ্ছ্বাস চিন্তা-চেতনা অগত্যাকে দ্যুতিময় করেছিলো। কবি সিকান্দর আবু জাফরের ‘সমকাল’ ১৯৫৭ সালে বের হয়। পঞ্চাশদশক থেকে প্রকাশিত হলেও এর প্রকৃত সমৃদ্ধি ঘটে ষাটের দশকে। প্রগতিবাদী সৃষ্টিশীল একটি ভিন্ন ধারার লেখার সঙ্গে পাঠকের পরিচিতি ঘটে সমকাল এর মাধ্যমে। এনামুল হকের সম্পাদনায় উত্তরণ, ফজল শাহবুদ্দিন সম্পাদিত কবিকণ্ঠ প্রভৃতি কাগজ লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলন ও প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানসহ প্রতিটি আন্দোলনের অগ্নিশিখায় উত্তাপ ছাড়িয়েছে, আলো জ্বেলেছে লিটল ম্যাগ। মানুষের চেতানাকে মুক্তচিন্তাকে শানিত করেছে বারবার। সপ্তক, বক্তব্য, স্বাক্ষর, সাম্প্রতিক, কালবেলা, না, শিল্পকলা ইত্যাদি কাগজের সৌরভে সুরভিত হয়েছে বাংলা সাহিত্য ভান্ডার, দীপ্ত হয়েছে অন্ধকারে আচ্ছন্ন চিন্তাজগত। মধ্যষাটের দশকে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ সম্পাদিত কণ্ঠস্বর কিংবা আবদুল মান্নান সৈয়দ  ও আবদুস সেলিম সম্পাদিত শিল্পকলা ছিলো ভিন্নধর্মী লিটল ম্যাগাজিন। ‘শিল্পকলা’-তে কবিতা চর্চার পাশাপাশি চিত্রকলা ও সাহিত্যের অন্যান্য শাখাও ঠাঁই পেয়েছে। উজ্জ্বল করেছে নন্দনতত্তে¡র জগতকে। লিটল ম্যাগাজিনের চরিত্রকে ধারণ করে ১৯৮২ সালে আবুল কাসেম ফজলুল হক সম্পাদনা করেন ‘লোকায়ত’। বদরুদ্দীন উমর  ‘সংস্কৃতি’ পত্রিকা বের করে বাঙালির চেতনা জগতে পরিবর্তনের ধারা সূচিত করেন। নিরীক্ষাধর্মী সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি, শিল্পকলা, চর্চায় পরিবর্তনের হাওয়া বইয়ে দেন। খোন্দকার আশরাফ হোসেন সম্পাদিত ‘একবিংশ’ গদ্যমাধ্যমের কবিতা ও কবিতা বিষয়ক লিটল ম্যাগাজিন। ‘একবিংশ’র ল্যাবরেটরীতে কবিতা ও সাহিত্যের অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা পাঠককুলের মনন জগতে দাগ কেটেছে।

লিটল ম্যাগ কি চায়? উদ্ভট উটের পিঠে চড়ে স্বদেশ যখন বিরানায় যায় কিংবা অদ্ভুত আঁধার যখন পৃথিবীতে নেমে আসে, যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি চোখে দেখে, তখনই লিটল ম্যাগ এসব অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ফলা হাতে দাঁড়ায়। পূর্ণিমার চাঁদ যখন কবির চিত্রকল্পে ঝলসানো রুটি মনে হয়; লিটল ম্যাগ সেখানে চাঁদকে রুটি-ই দেখে প্রেমের অভিসারে হাবুডুবু খায়না। ঝলমলে কার্পেটের নিচে জমে থাকা ধুলোময়লা সাদা চোখে দেখে লিটল ম্যাগ। রোদচশমা পড়ে আকাশ দেখেনা, পলাশের গায়ের রঙ দেখে বসন্তবিলাসে মত্ত হয় না বরং পলাশের গায়ে শহিদের রক্তের ঘ্রাণ শুঁকে জ্বলে উঠে লিটল ম্যাগ। লিটল ম্যাগের চরিতামৃত হচ্ছে প্রতিবাদি ও সনাতনী প্রথাবিরোধী। মুক্তচিন্তা সৃষ্টিশীলদের সাহিত্য চর্চার উৎকৃষ্ট চারণভূমি লিটল ম্যাগ। পার্কের বেঞ্চে বসে হিমহাওয়ায় প্রাণ জুড়ানো, নদীর কলকল ধ্বনীতে জীবনের স্বরলিপি শোনা, পূর্ণিমার রাতে চাঁদের জোছনায় স্নান করা এসবই লিটল ম্যাগের এলার্জি। বরং শ্রমিকের ঘামের উটকো গন্ধে আতরের সুবাস শুঁকা কিংবা কৃষকের লাঙ্গলের ফলায় ঝলসানো চাঁদকে দেখা, কৃষানীর উঠোন জুড়ে পাকা ধানের মো মো গন্ধে লিটল ম্যাগ তার প্রাণ জুড়ায়-বিকশিত হয় । লিটল ম্যাগাজিনের কুলধর্ম বাছ-বিচার করতে হলে বুদ্ধদেব বসুর দ্বারস্ত হতে পারি। দেশ পত্রিকার ১৯৫৩ সালের মে মাসের সংখ্যায় ‘সাহিত্যপত্র’ প্রবন্ধে বুদ্ধদেব বসু  লিটল ম্যাগাজিনের চরিত্র চিত্রণ করেন এভাবে: ‘‘এক রকম পত্রিকা আছে যা আমরা রেলগাড়িতে সময় কাটাবার জন্য কিনি, আর গন্তব্য স্টেশনে নামার সময় ইচ্ছে করে গাড়িতে ফেলে যাই যদি না কোনো সর্তক সহযাত্রী সেটি আবার আমাদের হাতে তুলে দিয়ে বাধিত এবং বিব্রত করেন। আর এক রকমের পত্রিকা আছে যা ষ্টেশনে পওয়া যায় না, ফুটপাতে কিনতে হলেও বিস্তর ঘুরতে হয়, কিন্তু যা একবার হাতে এলে আমরা চোখ বুলিয়ে সাজিয়ে রাখি না চেয়ে চেয়ে আস্তে আস্তে পড়ি, আর পড়া হয়ে গেলে গরম কাপড়ের ভাঁজের মাধ্যে ন্যাপথালিন গন্ধি তোরঙ্গে তুলে রাখি-জল, পোকা আর অপহারকের আক্রমণ থেকে বাঁচবার জন্য। যেসব পত্রিকা এই দ্বিতীয় শ্রেণির অর্ন্তগত হতে চায় কৃতিত্ব যেটুকুই হোক অন্ততপক্ষে নজরটা যাদের উঁচুর দিকে, তাদের জন্য নতুন একটা নাম বেরিয়েছে মার্কিন দেশে; চলতি কালের ইংরেজি বুলিতে এদের বলা হয়ে থাকে লিটল ম্যাগাজিন’’। লিটল ম্যাগাজিনের মাধ্যমে সাহিত্যের গতি প্রকৃতি, তরুণ লিখিয়েদের আনকোরা উপস্থাপন ও সাহিত্যের নানামুখী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়ে থাকে। কালের পরিক্রমায় অর্থনীতি ও প্রযুক্তির মেরুকরনে হারিয়ে যাচ্ছে লিটল ম্যাগ-এরকম হতাশায় ডুবে যেতে চাই না। ফেইসবুক, ইউটিউব কিংবা যে কোন প্রযুক্তি নির্ভর সামাজিক মাধ্যম লিটল ম্যাগের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে না । কারন লিটলম্যাগের গা জুড়ে রয়েছে সোঁদা মাটির গন্ধ, শেকড়ের টান। রয়েছে নদীর ছলছলানি, প্রতিবাদের ঝাঁঝানো উত্তাপ, প্রতিরোধের লৌহপ্রাচীর। যদিও লিটল ম্যাগের আয়ুকাল ক্ষীণ তবুও ভোরের প্রথম আলোর মতোই তিমির বিনাশী-মায়াবী। যুগের এই পরিবর্তনে লিটল ম্যাগাজিনের ভাগ্যাকাশে টিকে থাকার মন্ত্রনা দিয়েছেন বুদ্ধদেব বসু। এভাবেই: “মনে হতে পারে আর্থিক কারনেই এসব পত্রিকা দীর্ঘজীবী হতে পারে না, কিন্তু সেটা শুধু আংশিক সত্য। স্বল্পায়ু হওয়াই এদের ধর্ম। বিশেষ কোন সময়ে, বিশেষ কোন ব্যক্তির বা গোষ্টির উদ্যমে বিশেষ কোনো একটি কাজ নিয়ে এরা আসে, সেটুকো সমাপ্ত করে বিদায় নেয়। সেটাই শোভন, সেটাই যথোচিত”।

কিছু সম্পাদক নিজের গাঁটের টাকা খরচ করে, কখনো বউয়ের সাধ-আহ্লাদকে এড়িয়ে গিয়ে লিটল ম্যাগ প্রকাশ করছেন। এযেনো এক বাঁধা না মানার নেশা। দৈনিক ইত্তেফাকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেছিলেন “লিটল ম্যাগাজিন আর ব্যবসা এক সাথে হয় না ”। কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর ব্যক্তিগত কলামে বলেছিলেন “এক একটি লিটল ম্যাগাজিন বড় জোর চার বা পাঁচ বছর টিকে থাকে তারপর নিঃশব্দে মারা যায়। এদের নিয়ে কোন শোকসভা হয় না।” লিটল ম্যাগ  সমাজের অসঙ্গতি অনিয়মের ছিদ্রগুলো খেঁজে বের করে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। তারপর চলে যায়। তার চেতনা অনুরণিত হয় সমাজের হৃদপিন্ডে। লিটল ম্যাগের গল্পকথা প্রায় একই রকমের হয়। সৃজনশীলতা, প্রতিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি নিরপেক্ষ ও নির্ভিক প্রকাশ। লিটল ম্যাগ  স্বপ্ন নিয়ে ঘুমোতে চায় না, স্বপ্ন নিয়ে জেগে ওঠে। লিটল ম্যাগের আকৃতির আকার যা-ই হোক না কেনো লিটল ম্যাগ: বামুন, আকাশ ছুঁতে পারে-নির্দ্বিধায় বলা যায়।

সকল লিটল ম্যাগের নাম আসেনি। দৃষ্টান্ত হিসেবে কতিপয় লিটল ম্যাগের নাম উচ্চারিত হয়েছে এই লেখায়। সকল লিটল ম্যাগের প্রতি আমি সমান গুরুত্ব প্রকাশ করছি।

সুমন বনিক: কবি, সম্পাদক- ‘অগ্নিশিখা’ সাহিত্যের ছোটোকাগজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *