লেখকের রাজনৈতিক মতাদর্শ // মোজাম্মেল হক নিয়োগী
পৃথিবীর বড় বড় লেখকদের জীবনী পাঠ করে অনুধাবন করতে পারলাম যে তাঁদের প্রায় সবাই কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন, অনেকেই সক্রিয় রাজনীতি করতেন এবং তাঁদের লেখা তাদের মতাদর্শের আলোকে রচিত ও উদ্ভাসিত। এ-কারণেই মতাদর্শ-গত কারণে লেখকের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন দল/গোষ্ঠী তৈরি হয় এবং পারস্পরিক বৈরী ভাবাপন্নও হয়। এক আদর্শের লেখকরা অন্য আদর্শের লেখকদের বলে থাকে দালাল, দলকানা, ইত্যাদি আরো আজেবাজে শব্দও ব্যবহার করে মনে যা আসে।
বাংলাদেশে লেখক শিবিরেও কয়েকটি বিভক্তি স্পষ্ট। এখানেও পরস্পরকে গালাগালি হয়, অকথ্য ভাষায় বক্তব্য প্রদান করা হয়। কিন্তু যখন কেউ কাউকে গালাগাল করে তখন নিজের অস্থিত্বের কথা ভুলে যায় যে, নিজেও কোনো না কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী।
নিজের অবস্থান, মতাদর্শ বিবেচনা না করে অন্য কাউকে কটাক্ষ করা উচিত নয় বলে।
লেখক সমাজের রাডার। তারা সমাজের বিভিন্ন দিক লেখায় তুলে আনবেন একথা সত্য। তাঁর চিন্তায় লেখার প্রভাব কী হবে সেটাও তিনি বিবেচনা করেন।
বাংলাদেশের লেখক শিবিরে স্পষ্টই দুই/তিনটি ধারা বিরাজমান। যিনি কোনো ধারাতেই নেই তিনি হয়তো অলৌকিক মানুষ অথবা অতীব ধূর্ত। কোনো কোনো লেখক আবার ঘোমটার আড়ালে থাকেন ঘাপটি মেরে। তাদের রূপ প্রকাশ পায় রাষ্ট্রের ক্ষমতা বদলের পর। নিজেদের স্বার্থে এটাও ভালো দিক। কারণ, ঘাপটি মারা ধূর্ত ব্যক্তিরা সমাজে, রাষ্ট্রে, বৈশ্বিক আবহে বেশি সুবিধা গ্রহণ করে থাকে। জীবিত অবস্থায় মানুষ তাকে কি বলল না বলল তা সে ধার ধারে না। এবং সুবিধাজনক কাজ বাগিয়ে নেয়। খেতাব, পদবি, পুরস্কার ইত্যাদি কি না? তবে একথা জোর দিয়ে বলা যায় যে, ঘাপটি মেরে থাকা লোকগুলো অতিশয় বিপজ্জনক, ধুরন্ধর এবং দুর্বল চিত্তের মানুষ।
আরো জোর দিয়ে বলা যায় যে, যাদের বুকে সাহস আছে তারাই কেবল প্রকাশ্যে নিজের মতাদর্শ লেখায় প্রতিফলন ঘটায়। কে কি বলল, কী হলো বা হবে তা নিয়ে ভাবে না। এরা সমাজের ক্ষতিকর মানুষ নয়।