উপন্যাস

উপন্যাস।।‘চরের মাস্টার কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার’ ।। রাহিতুল ইসলাম।। পর্ব সাত

শফিকের ব্যস্ততা ইদানীং বেড়েছে। সামনে পরীক্ষা। সিলেবাস শেষ হয়নি এখনো। তবে সে যেভাবে প্ল্যান করে এগোচ্ছে তাতে পরীক্ষার বেশ আগেই শেষ হয়ে যাবে। পরীক্ষার পর দ্রুতই একটা চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে। নইলে ফারিয়ার বাসা থেকে মানবে না। সে আর রাজু মিলে একটা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করানোর চেষ্টা করছিল ছয় মাস ধরে। কিন্তু প্রতিষ্ঠান দাঁড় করাতে যে পরিমাণ সময় ও শ্রম দেওয়া দরকার, তা তারা এখনই দিতে পারছে না। রাজু শফিকের ক্লাসমেট। বলা যায়, ঢাকা শহরে সে-ই তার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। রাজু ফারিয়ার সঙ্গে শফিকের সম্পর্কের ব্যাপারটা পুরোপুরি জানে। শফিককে যখন ফারিয়া নানা কারণে রিচ করতে পারে না, তখন সে রাজুর শরণাপন্ন হয়। শফিক মাঝে মাঝে ফোন বন্ধ করে ডুব দেয়, বলেও যায় না ছেলেটা। হয়তো কোনো একটা ট্যুর গ্রুপের সঙ্গে বান্দরবান চলে গেল।

জিজ্ঞাসা করলে বলবে, ‘আর বোলো না, এত হুট করে সবকিছু হলো যে তোমাকে জানানোরই সময় পাইনি।’ কিন্তু এসব ব্যাপার সব খুঁটিনাটি কিন্তু রাজু জানে। রাজুও মাঝে মাঝে শফিকের সঙ্গে ওরকম ট্যুরে চলে যায়, তখন ফারিয়া আর যোগাযোগের উপায় খুঁজে পায় না। এসব কারণে সে রাজুকে ধমক দিতে পারলেও নিজের প্রেমিক হওয়া সত্ত্বেও শফিককে সেটা পারে না। শফিক ধমক খেয়ে বসে থাকার লোক না। সে তখন কিছু না বললেও পরে এর ঝাল মেটায়। দেখা যায় সে আরও বেশি দিনের ট্যুরে চলে গেছে কয়েক দিন পরেই। তবে শফিক খুব সৎ ছেলে। তার কিছু মানবিক গুণ আছে। সেসব ফারিয়াকে মুগ্ধ করে। রাজুও শফিকের এসব মানবিক গুণের কারণে তাকে সম্মান করে। বন্ধু হলেও বলা যায় রাজু শফিকের গুণমুগ্ধ। আজ তাদের দুজনের ভবিষ্যৎ প্ল্যান নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। রাজু বড়লোকের ছেলে। তাদের যে ফার্মটা সেটার ভাড়া, স্টাফের বেতন, মেইনটেনেন্স সবকিছু সে-ই করে। সেখান থেকে এখনো বলার মতো তেমন কিছু আয় হয়নি। দু-তিনজন স্টাফ কাজ করে সেখানে, কিন্তু নিজেরা সময় দিতে না পারায় সেখান থেকে ভালো কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। রাজু বেশ বিরক্ত এসব নিয়ে। সে বলল, ‘তাহলে ফার্মটা উঠিয়েই দিই, কী বলিস?’

শফিক বলল, ‘আরেকটু ভেবে দেখতে পারিস কিন্তু।’

‘পরীক্ষার পর তুই সময় দে, আমিও বসি নিয়মিত। তাহলে হয়তো কিছু একটা দাঁড়াবে।’

‘তুই তো জানিস ফারিয়ার বিষয়টা। এই ফার্ম দাঁড় করাতে যতটা সময় দরকার, অত সময় পাওয়া যাবে না। তার চেয়ে চাকরির ট্রাই করা ভালো।’

‘তাহলে আমি কী করব? তোকে ছাড়া একা চালাব?’

‘আমার যে বাস্তবতা, তাতে এখন চাকরি ছাড়া উপায় নেই। তুই তো আমার বাবার কথা জানিস। গ্রামে বড় মুখ করে বলে ছেলে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে বড় চাকরি করবে। মা-বাবার স্বপ্ন আমি বড় চাকরি করি।’

‘আচ্ছা, আমাদের ফার্মটা বড় হলে তো চাকরির চেয়ে বেশি টাকা আসবে। আর তোকে আমি ফার্মের ফিফটি পার্সেন্ট শেয়ার হোল্ডার করে দেব। তুই আমার সঙ্গে থাক।’

‘আমি থাকতে পারলে অবশ্যই থাকতাম। কিন্তু ফার্মটা দাঁড় করাতে গেলে যে সময়টা দেওয়া দরকার, চাকরি করলে সেটা পাওয়া যাবে না। তুই তো জানিস।’

‘ঠিক আছে, তুই শুধু মানসিকভাবে আমার পাশে থাকিস। তাতেই হবে।’

‘আচ্ছা, দবির স্যারের কোর্সটার কী খবর?’

‘পড়া গুছিয়ে এনেছি। কিছু নোটস জোগাড় করতে হবে। তুই বিলাসকে বলিস। ওর কাছে সবগুলো নোট আছে।’

বিলাস ওদের ক্লাসের সবচেয়ে ভালো ছাত্র। রাজুকে সে দেখতে পারে না। একটা ইগো প্রবলেম আছে ওদের মধ্যে। কিন্তু শফিককে সে খুবই পছন্দ করে। বিলাসের ধারণা শফিক তার চেয়ে ব্রিলিয়ান্ট। তাকে বেশ হেল্প করে শফিক। এ জন্য শফিক যখন যা কিছু চায়, বিলাস সবকিছু দিয়ে হেল্প করার চেষ্টা করে। ভার্সিটিতে ফার্স্ট ইয়ারেই বিলাস আর রাজু দুজনেই এক মেয়েকে পছন্দ করত। নিশাও ওদের ক্লাসমেট। ওরা দুজনই নিশার সঙ্গে রিলেশনের জন্য প্রচুর কাঠখড় পুড়িয়েছে। একবার ওর বার্থডেতে দুজনেই কেক নিয়ে এসেছিল। কারটা আগে কাটবে এ নিয়ে সে কী ঝামেলা। পরে অবশ্য দুই হাত দিয়ে দুটো কাটতে হয়েছে। একসঙ্গে কাটার এই বুদ্ধিটা তাকে দিয়েছিল শফিক। নিশা অনেক দিন দুই বন্ধুর এই প্রতিযোগিতা দেখে খুব মজা পেয়েছে। কাউকে কিছু বলেনি। এদিকে দুই বন্ধুই অধৈর্য হয়ে পড়ছিল দিন দিন। পরিস্থিতি যখন চূড়ান্ত খারাপ হতে শুরু করেছে, তখন একদিন নিশা ওদের সঙ্গে তার বয়ফ্রন্ডকে পরিচয় করিয়ে দেয়। নিশাকে জ্বালাতন করা ছাড়লেও মাঝখান থেকে ওদের দুজনের সম্পর্কটা আর ভালো হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *