রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। শেষ পর্ব
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব এগারো
- রহস্য উপন্যাস।। রহস্যময় বারান্দা।। মালেক মাহমুদ।। শেষ পর্ব
বারো
ঘরে ঢুকে আলো জ্বালিয়ে দিল লাইলি। আলোর কিরণ মুখে পড়তেই জেগে গেল ঝন্টু। পাশেই দাঁড়িয়ে আছে হাশেম। বাহিরে জোছনার আলো ছড়িয়ে পড়ছে। চাঁদনি রাতে বাড়িটির পরিবেশ অন্যরকম মনে হচ্ছে। আজ বিড়ালের মিও মিও আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে না হাশেম। রাত মানেই হাশেমের কাছে বিড়ালের মিও মিও ডাক। সারাবাড়িতে কোনো বিড়াল দেখছে না।
হাশেমের কাছে অবাক মনে হচ্ছে! কোথায় গেল বিড়াল! কিন্তু হাশেমের মনে খুনের ঘটনা জানার ইচ্ছে জাগ্রত হতে লাগলো। এই আনন্দের ভেতর কাউকে কিছু বলতে চায় না সে। আনন্দঘন মুহুর্তকে মাটি করতে কে চায়?
না, কেউ চায় না। তাই হাশেমও চায় না।
জোছনার আলোতে গোলকরে বসে যায় ওরা তিনজন। এই আনন্দময় মুহুর্তে গোলম আলী কই গেল? না গোলাম আলীকে দেখছে না। একটু বিচলিত হয়ে লাইলির দিকে মুখ ফিরালো। লাইলি যেনো চাঁদ আলোতে ঝলমল করছে। ঝন্টুর চোখ-মন ঢুলুঢুলু। একটু চা নাস্তা হলে মনে হয় ভালো হতো। যেই ভাবনা সেই কাজ। ওমনি গোলাম আলী নাস্তা আর চা নিয়ে এলো। যাতে আনন্দঘন মুহুর্ত আরো জোরালো হয়। এদিকে আকাশের দিকে মুখ করে বসে আছে ঝন্টু। মুক্তমনে এক আনন্দ খেলা করে চলছে। কেউ কোনো কথা বলছে না।
শব্দহীন পরিবেশ। লাইলির কাছে বেশ ভালো লাগছে। হাশেমের মন যেনো উশখুখুশকু। খুনের ঘটনা তার মনে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠছে। আমরা যেখানে বসে আছে এইখানেই তো ঘটেছে কত ঘটনা। কতঘটনার
সাক্ষী এই উঠোন। কিন্তু এখন আমরা আনন্দঘন মুহুর্ত পার করছি। এটাই নিয়ম। এই হাসি। এই কান্না। এই কথাগুলো কেউ বুঝবে এমন করে বলছে না হাশেম। কীকরে বুঝবে! ভাবনার ভেতরে লুকিয়ে থাকছে কথাগুলো। কেউ
কিছু বুঝতেও পারেছে না।
চা নাস্তার পরে হাশেম বলছে, তোমরা ঘুমিয়ে পড়ো, আমি ও গোলাম আলী
বাড়ি যাই সকালে দেখা হবে আশা করি।
ঝন্টুও তাই চাচ্ছিল। চাঁদনি রাতের আড্ডা আর অড্ডা থাকলো না। কিন্তু লাইলির কাছে আড্ডা দেবার ইচ্ছে ছিল বেশ। বড় ভাই ঝন্টুর দিকে তাকিয়ে কিছু বলছে না লাইলি। ঘুমের পরিবেশে পরিণত হতে লাগলো। গোলাম আলী ও হাশেম চলে আসতেই ঝন্টু তার রুমে চলে গেল। লাইলি চলে গেল তার রুমে।
মুহুর্তেই ঘুমিয়ে যায় ঝন্টু। লাইলির চোখে ঘুম নেই। হাশেমের ডালিম ফুলের কথা মনে করছে লাইলি। ডালিম ফুলের কথা মনে করতেই জসীমউদদীনের কবর কবিতার কথা মনে পড়ে যায়।
‘ঐ খানে তোর দাদির কবর ডালিম গাছের তলে তিরিশ বছর ভিজিয়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।’
কবিতাটি মনে করতেই দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো।
ভালোবাসার ফুল তাও আবার ডালিম ফুল। ময়না পাখি লাইলির কাছে বলতে চেয়েছিল খুনের ঘটনা। কিন্তু লাইলির মনের যে আবস্থা তাতে এখন এই খুনের কথা না বলাই ভালো। লাইলির মন ভালো নেই। মন ভালো করে দিতে চায় ময়না পাখি। কিন্তু কীকরে ভালো করবে?।
লাইলি তো হাশেমকে ভালোবাসে। হাশেমও লাইলিকে ভালোবাসে। ভালোবাসার করণে মানুষ ভিকারি হয়,পাগল হয়, রাজা-বাদশা হয়, বৈরাগি হয়। পাওয়া, না পাওয়ার বেদনাই ভালোবাসা। লাইলি এমন ভাবছে কেনো? ভাবনার ভেতরে লুকিয়ে আছে দুঃখ। এই দুঃখের ভেতর কীকরে আর এক দুঃখের বারতা দেই। না,
তা হয় না।
ময়না পাখি বোঝে লাইলির মনের দুঃখ। বুঝলেই তো আর হলো না। এখন যদি সেই কথা না বলে, তা হলে সে আর কখনো লাইলির কাছে বলতে পারবে না খুনের ঘনটা। তাই আজ রাতেই তাকে বলতে হবে। এমন সময় লাইলি স্বপ্নে দেখতে লাগলো কে যেনো খুন হয়েছে। একটি কিশোর ছেলে খুন হয়েছে।
যে খুন করেছে তাকে দেখতে ঠিক জাদুকর জাদুকর মনে হতে লাগলো।
জাদুকরি কায়দায় খুন করেছে তাকে। জাদুকরি ছুড়িতে হয়েছে খুন। খুন করে লাশটি উড়িয়ে দিল। লাশটি উড়তে লাগলো। ঝরতে লাগলো রক্ত। এই রক্ত দেখে ভয়ে জড়সড় হয়ে যাচ্ছে লাইলি। ঘুমের ভেতর কুকড়ে যাচ্ছে লাইলি। ময়না পাখি দেখ আর ভাবছে এ কেমন কান্ড!
লাইলি কী ভয় পেয়ে গেল?
ঘুমের ঘরে কেউ কি ভয় পায়?
ভয় পেলে সে কি কুকড়ে যায়?
ময়না পাখি ভাবছে। এতো ভীতু কোনো লাইলি! এই ভীতু কীকরে সইতে পারবে আমার কথাগুলো। যে খুনের জন্য মানুষ ভয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। সেই ইতিহাস কীকরে তার কাছে না বলে থাকতে পারি? কিন্তু না বলে কী উপায় আছে?
লাইলিতো ঢাকা চলে যাবে। যে রহস্য নিয়ে হাশেম মেতে আছে। গোলাম আলী মেতে আছে। বাবুমিয়ার বাড়ি ঠিক দাঁড়িয়ে আছে আপন ভঙ্গিমায়।
একজন জাদুকর যে খেলা খেলেছে সেই খেলার ভেতরে মরণ রহস্য লুকিয়ে আছে।
জাদুকরের নাম জাদব বক্স। জাদুকরি খেলাই তার কাজছিল। সে এখন বেঁচে নেই। হাট-বাজারে জাদুকরি খেলা দেখাতো। রক্ত আর রক্ত। রক্তের ভেতরে ছিল ছুড়ির খেলা। নিখুঁত খেলা দেখাতে পারতো সে। তার খেলা দেখতো সাধারণ মানুষ।
মানুষ বুঝতেই পারতো না, এ কিসের আলামত। কি রহস্য লুকিয়ে আছে এই খেলার ভেতরে।
একদিন হাটে জাদব বক্স খেলা দেখাতে লাগছে। সেই খেলা দেখতে সাধারণ।
মানুষের ভীর ছিল অতি। সেই ভীরের ভেতর খুন, খুন খেলা দেখছে ইরফান মন্ডল। যে মন্ডল নাকি ফাদ পাতায় ভীষণ পটু। যার মাথার ভেতর খেলা করে কুটকৌশল। মন্ডল জাদব বক্সর খেলা দেখে আর ভাবে মূল খেলার সঙ্গে মিলিয়ে নিতে চায় কৌশল।
এই খেলাই মূল খেলার সঙ্গে কাজে লাগাবে বলে ভাবছে ইরফান মন্ডল। কিন্তু কী করে? ফানি জীবনযাপন দেখতে ভালো লাগলেও লোভ ছিল তার প্রবল। কাবলিওলা তার কথায় উঠতো আর বসতো। কাবলিওলাও নাই। ইরফান মন্ডলও নাই। চলে গেছে না ফেরাদেশে। বাবুমিয়ারবাড়ি দাঁড়িয়ে আছে ঠিক জায়গায়।
পরিবর্তনের হাওয়ায় এই বাড়ি এখন ঝন্টুদের।
হ্যা, ঝন্টুদেরই তো! আমি লাইলি এই বাড়ির কেউ না! মেয়েদের তো বাড়ি নেই। ময়না পাখি বুঝতে পারে লাইলি তার সব কথা মন দিয়ে শুনেছে। কিন্তু পাখিকে সে কখনো দেখেনি। আজও দেখেনি। ময়না পাখিকে হাশেম দেখলেও লাইলির চোখের অগচরেই থেকে গেল ময়না পাখি।
তেরো
দায় আজ এই চাঁদনি রাতে আলোকিত মনকে নতুন দিগন্ত দেখাতে চেয়েছিলাম। ভালোবেসে মানুষ মিলিয়ে যেতেই। আজ ঢাকা ফিরে যাবে না বলে মন স্থির করলো ঝন্টু ও লাইলি।