ছোটগল্প

ঈদসংখ্যার গল্প।। কেউ কেউ ভুল প্রেমে পড়ে।। আরিফ মজুমদার

দু’জনের সম্পর্কের সূত্রপাত ঘটেছিল ফেসবুক-ম্যাসেঞ্জারের সুবাধে। মাসছয়েক যা ওখানেই ছিল সীমিত। রাতদুপুরে টুকটাক চ্যাটিং চলতো। কখনো-কখনো চ্যাটিংয়ে তারা অতি আবেগতাড়িত হয়ে পড়ত। তখন কাব্যিক ব্যঞ্জনায় অত্যধিক প্রেমময় অনুভূতি বিনিময় হতো-
: দুচোখ আবেগে ভেজাক্ষণে তোমাকে ভালোবাসি; মহাকালের প্রতিটি মুহূর্ত বয়ে আনে বিষম শূন্যতা-শুধু যে তোমার অনুভবে!
: হুম, আমার মনের মাঝে যতো অনটন; সেতো শুধু তোমার প্রেমের কারণে !
: নিত্যদিনের ক্লান্তি ঝেড়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই তোমার প্রেমের অতল জলে ডুবে যাই; তোমার প্রেমের অদৃশ্যবানে খুন হই অবিরত !
: হুম, আমার চাওয়া-পাওয়ার সীমান্তে শুধুই তুমি; অজান্তেই নিজেকে সঁপেছি তোমার মাঝে…!
সম্পর্কের প্রথম দিকটায় ভালোবাসারা স্বর্গীয় অনুভূতিটুকু দুজনের মনের বাতায়নে দোলা দিত খুব। সামিয়ার রূপ-লাবণ্য যতটুকু, তাতে চিত্রজগতে রাতারাতি সুপারস্টার বনে যাওয়াটা একেবারে অসম্ভবের কিছু তো নয়; হালের আলোচিত-সমালোচিত- কুবলী, জরী, কমলা বিশ্বাস অমুক-তমুক নায়িকার চেয়ে সামিয়া যেন কোনো অংশে মোটেও কম নয়-এমনটি ধারণা সামিরের। একদিন যখন সামিরের বন্ধু তরুণ ফিল্মমেকার ফোন দিয়ে জানাল, নবাগত একজন নায়িকা লাগবে তার ফ্লিমের জন্য, অভিনয়ে আগ্রহী কেউ থাকলে যেন তাকে ইনফর্ম করে। তখন সামিরের দু’চোখে ভেসে ওঠে সামিয়ার মুখখানা। রাতে মেসেঞ্জারে চ্যাটিংয়ে পেয়ে ব্যাপারটা সামিয়াকে জানাতেও দ্বিধাবোধ করল না মোটেও। যদিও জবাবে সামিয়া বিরক্তবোধই প্রকাশ করল যেন- ‘ভাইয়া, আপনি কেমন মানুষ যেন! খেয়ে-দেয়ে বুঝি আপনার কাজকর্ম নেই! আমাকে নায়িকা হতে ওপার দিচ্ছেন! হাউ ডেয়ার ইউ সে দ্যাট! আপনি কী আমাকে কখনো দেখেছেন, ভাইয়া?’
এমন অপ্রত্যাশিত জবাবে সামির রীতিমত থতমত খেল। তবু সুযোগ মতো রেপলিটা ঠিকই দিল, ‘হুম, লেট’স উই মিট নেক্সট ফ্রাইডে!’
‘আই উইল ট্রাই টু-মিট। বাট, হোয়েন? হোয়ার?…’
‘এ্যাচ ইয়োর উইশ!’
দুদিন পর। ফ্রাই-ডে। সামিয়ার সাথে মিট করতে বেইলী রোডের কেএফসিতে যেতে পারি নি সামির। এদিন সন্ধ্যায় কিছু সময় ওয়েট করে অনেকটা বিরক্তবোধ নিয়েই বাসায় ফিরে যায় সামিয়া। পরদিন রাতে ঘুমোতে গিয়ে সামিরকে ম্যাসেঞ্জারে পেয়ে ইনবক্স করল, ‘সেদিন ফ্রাই-ডে সন্ধ্যায় আপনি এসেছিলেন?’
‘না, আমি ওখানে যেতে পারি নি। আপনি?’
‘কেনো আসতে পারেন নি সেটা জানতে পারি, ভাইয়া?’
‘ঢাকার বাইরে গিয়েছিলাম।’
‘ঢাকার বাইরে গিয়েছিলেন!’
‘হুম।’
‘আপনি যে আসতে পারছেন না, এইটুকু বলতে তো পারতেন, নাকি !’
‘সরি। এক্সট্রিমলি সরি।’
‘ঢাকার বাইরে কতদূরে গিয়েছিলেন!’ প্রশ্নে ক্ষাণিকটা তিরস্কার বুঝতে পেরেও ভদ্রভাবে জবাব দেয় সামির।
‘গ্রামে গিয়েছিলাম। আমার দাদু খুব অসুস্থ। মুমূর্ষু হয়ে পড়েছেন। আমাকে একটু ছোঁয়ে দেখতে চেয়েছেন। দাদুকে দেখতে তড়িগড়ি করেই গ্রামে ছুটে গিয়েছিলাম সেদিন।’
‘হুম। সরি-ফর দিস কোশ্চেন! ক্যান আই গেট ইউর সেল নাম্বার, প্লিজ?’
‘সিওর!’
সামির তার সেল নাম্বারটা ইনবক্স করতেই মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠল। রিসিভ করে বলল, ‘হ্যালো…’।
‘আমি সামীয়া।’
‘হুম।’
দুই.
ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় লেকের পাড় দিয়ে ছায়াপথটুকু ধরে আনমনে হেঁটে যাচ্ছে সামির। এই জায়গাটা নগরবাসীকে ক্ষণিকের জন্য হলেও গ্রামের শান্ত-শীতল নির্মল পরিবেশটা স্মরণ করিয়ে দিতে চায় যেন! সামিরের কাঁধ ব্যাগে ভারী বলতে তেমন কিছু তো নেই- দুটো বই আর দুইশ’ পেজের বাঁধাই করা একটা খাতা। তবু যেন বড্ড বিরক্তিকর লাগছে ব্যাগটা! বিকেলের শেষ মুহূর্ত। দিনের এই ক্ষণটায় কর্মব্যস্ত মানুষ নিজের দেহের ভারটুকুতেই যেন অসহ্য অনুভব করে। সারা দিনের ব্যস্ততার ধকল সামলাতে গিয়ে শরীরে ক্লান্তবোধ হচ্ছিল সামিরের। সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পূর্বের ঠিক এই মুহূর্তটুকু লেকের পাড়ের শীতল হাওয়ায় একটু জিরিয়ে নিতে পারলে তো মন্দ নয়, ভাবছে সামির। যদিও হাতে সময় খুব কম। সন্ধ্যার পরক্ষণেই থাকতে হবে পান্থপথের অফিসে। লেকের যে পাড়ে সামির বসেছে তার ঠিক উল্টো দিকটা ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়ক। শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর। বাড়িটির দিকে তাকিয়ে আনমনে কী যেন ভাবছে সামির! বইয়ের পাতায় পড়া মুজিবের বীরত্ব গাঁথা ইতিহাস সামিরের মনের আঙ্গিনায় জেগে উঠছে হয়তো। যদিও আশেপাশে লোকজনের কথাবার্তার ফিসফিস আওয়াজ ক্রমাগত বেড়েই চলছে। তরুণ-তরুণী যুগল দেহের ওপর দেহ ঢেলে কীসব অনবরত বকে যাচ্ছে! তাতে সামিরের বিরক্তবোধ হচ্ছে বৈকি! সামির পরম মমতায় তাকিয়ে আছে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটার দিকে। হঠাৎ পিছন থেকে সামান্য ডাক কানে পৌঁছতেই ফিরে তাকায় সামির। ‘সাহায্য দিবেন গো, বাবা…’ বলে লোকটা ক্ষীণ আকুতি জানায়। অশীতিপর বৃদ্ধ লোকটার বয়স আশির কমতো নয়! মুখে লাল বর্ণের ময়লাটে লম্বা দাঁড়ি। দেখে মনে হচ্ছে কোনো ভাবে আঘাত পাওয়া ডান পায়ে হাঁটার মতন তেমন শক্তি নেই। তার উপর বয়সের ভার। শক্তহাতে লাঠিটা ভর করে চলতে হচ্ছে ভাব। মালার মতন করে গলায় ঝুলানো বুকের ওপর এ-থ্রি সাইজের সাদা কাগজে লেমেনিটিং করা যে প্লেকার্ডটি ঝুলছে, তাতে মোটা অক্ষরে লেখা- ‘আমি মুক্তিযোদ্ধা’। সামির ক্ষাণিকটা বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে লোকটার দিকে। সামিরের বিস্ময়-হতবাক হয়টাকে বিরক্তিবোধ ভেবে বৃদ্ধ মানুষটি নিরাশ মনে পাশ কেটে এগিয়ে যেতে চায়। সামির হিপ-পকেট থেকে মানিব্যাগটা বের করে লোকটাকে কাছে ডাকল। সামির প্রথমে ভাবছিল কিছু জানতে চাইবে পরে আবার কী ভেবে চুপচাপ হাতের টাকাটা বৃদ্ধ লোকটাকে দেয়। বৃদ্ধ মানুষটা টাকাটা হাতে পেয়ে দৃষ্টি উচু করে কী যেন বলতে বলতে সামনে এগিয়ে যায়। আর তখনই সামিরের হৃদয়ে কেমন আবেগবর্ষণ- আহা! লোকটা কী সত্যি-সত্যিই মুক্তিযোদ্ধা! লেকের ওই পাশটার দিকে তাকায় সামির। শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটা থেকে কেমন অদ্ভুত হাহাকার সামিরে কানে ভেসে আসছে অনবরত! একটা স্বাধীন দেশে একজন মুক্তিযোদ্ধ ভিক্ষা করবে কেন! দুমুটো ভাতের জন্য তাঁরা পথে পথে আকুতি জানাবে কেন! তবে এই-যে চারপাশের বিশাল বিশাল অট্টালিকাগুলো কাদের প্রয়োজনে শোভা পাচ্ছে! কারা বিলাসিতায় আনন্দ-ফুর্তিতে এইসব আকাশচুম্বী বাড়িগুলোতে দিনাতিপাত করেছে! যাঁরা জীবনবাজি রেখে যে হাতে অস্ত্র ধরেছিলেন তাঁরা আজ সে হাতে ভিক্ষা চাচ্ছেন! ও-সেড! সামিরের ভাবনায় বিষম গড়মিল! মুহূর্তের ভেতর তার মনটা কেমন বিষিয়ে উঠে। তদপুরি গোধূলি বেলার আলোটুকু পশ্চিমাকাশে বিলীন হতেই সামির স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েছে। তার কানে ভেসে আসল সামীয়ার মুখের প্রেমময় সেই আওয়াজ- ‘ওঠো তো সামির, বাসায় ফিরতে হবে…!’ মাত্র কয়েকটা দিন আগেই তো সামিয়াকে সাথে করে মুজিবের স্মৃতি জাদুঘর ৩২ নম্বর বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখেছিল। আহা! ঘাতকরা কী নির্মম ভাবেই-না হত্যা করল শেখ মুজিবকে! সামিরের মনে পড়ে যায়- সামিয়া সেদিন বেদনকাতর নয়নে অপলক তাকিয়ে ছিল ৩২ নং বাড়িটার দ্বিতলার সিঁড়িটার দিকে। ঘাতকদের বুলেটের চিন্থগুলো এখনও কেমন জ্বীবন্ত! দেয়ালে রাখা শেখ মুজিবের বেধনাকাতর প্রতিকৃতিটা সামিরের মনের পর্দায় ভেসে উঠছে! মানুষ কতটা হিংস্র হতে পারে! মানুষ কী করে ক্ষমতার লোভে এতটা আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে! আহা! মানুষকে মানুষ এইভাবেও হত্যা করে! বুলেটের দৃশ্যগুলো সামিরের চোখের সামনে বারবার ভেসে আসছে। সামিরের মন আবেগপূর্ণ ভাবনায় বিভোর হয়ে পড়েছে। আকসাৎ নারী কণ্ঠস্বর কানে আসে। ডান পাশটায় তাকায় সামির। দুজন গায়ে হেলে অনবরত বলে যাচ্ছে কীসব হাবিজাবি। বোধহয় নব্য প্রেমে পড়া তরুণ-তরণী যুগল। ঠিক যেমনটি করে সামীয়া বসেছিল সামিরের পাশে সেদিন! ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নামছে। সূর্যটাও ডুবে গেল পশ্চিমাকাশে। ইদানিং লেকের পাড়ে মশার উপদ্রপ বড্ড বেশি মনে হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের লোকজন দীর্ঘ দিন লেকের পাশে বসার মতো ফুসরত পায়নি হয়তো। ইতোমধ্যে পরপর দু-চারটা মশার কামড়ও সামিরকে সহ্য করতে হয়েছে নিরবে। সামির কাঁধ ব্যাগটা নিয়ে স্মৃতিকাতর মনে সামনে পা বাড়ায়।
পান্থপথের অফিসে। সম্পাদকের টেবিলের সামনের চেয়ার দুটোতে বসে আছে সামির আর ফারিয়া শাহনাজ। দুজনকে সম্পাদক বললেন, ম্যাগাজিনের আগামী সংখ্যাটা হবে বিশেষ সংখ্যা। বিশেষ সংখ্যা মানে, বিশেষ কিছু তথ্য চাই। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই সংখ্যায় কভার পেজে কিছু চমক থাকা জরুরি। রাজধানীতে ঘটে যাওয়া অসামাজিক আর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে বিশেষ কেনো প্রতিবেদনের ওপর ম্যাগাজিনের কভার পেজটা করা যেতে পারে। সম্পতি ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক কোন্দল বা আলোচিত ঘটনাগুলোর পিছনের কোনো চিত্র তুলে ধরতে পারলেও ভালো হয়। এই ইস্যুগুলো মাথায় রেখে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত আর ছবি সংগ্রহে দুজন লেগে যাও…। এই নিয়ে সম্পাদকের সাথে কথা হলো আরও কিছুক্ষণ। সম্পাদকের রুম থেকে বেরিয়ে দুজন পাশাপাশি ডেস্কে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ম্যাগাজিনের বিশেষ প্রতিবেদনের জন্য পরিকল্পনা মাফিক একটা রোটিন করে নেয়- কোথায় কোথায় যাবে, কখন যাবে এ নিয়ে দুজন আলোচনাও করল। রাত তখন দশটা। ফারিয়ার অনুরোধে সেদিনের মতো মুলতবি হয় কর্মপরিকল্পনা। পরদিন বিকেলের দিকে অফিস থেকে দুজন একসাথে বেরোয়। সিএনজিতে করে ফারিয়া আর সামির রাজধানীর একটা বস্তি এলাকায় ঢুকল। দীর্ঘ দিনের অভিযোগ রয়েছে, সন্ধ্যাবেলায় এই বস্তিতে দেহ ব্যবসার পাশাপাশি গাঁজা-ইয়াবার আড্ডা জমে। সংশ্লিষ্ট থানা কর্মকর্তার নথিতে অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও পুলিশ নিবর। বস্তিটি উচ্ছেদের জন্য কয়েকবার মহল্লাবাসী জোর প্রচেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়েছে রাজনৈতিক নেতাকর্মীর কারণে। ফারিয়া একটা টিনের দরজায় নক করা মাত্র সাজগোজ করা একজন যুবতী বেরিয়ে আসল। সামির ক্যামেরা হাতে নিয়ে ফারিয়ার সামনে দাঁড়ানো যুবতীর দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটির চোখেমুখে একটাকে কৌতুহল ভাব, ‘কেরে চান?’ এমন প্রশ্নের জবাবে ফারিয়া দুজনের পরিচয় জানিয়ে বলল, ‘তোমার সাথে একটু কথা বলতে পারি?’
মেয়েটি বলল, ‘জে আপা, কন।’
‘ধন্যবাদ। তোমার নামটা?’
‘ববি। ডাক নাম হইল ববি সুন্দরী।’
‘ঘরে কী অন্য কেউ আছে? নাকি একাই থাক?’
‘সাথে খালা থাকেন। দূর সম্পর্কের খালা।’
‘তোমার দেশের বাড়ি কোথায়?’
‘ময়মনসিংহ।’
‘বিয়ে হয়েছিল তোমার?’
‘জে, হয়েছিল।’
‘তোমার স্বামী সঙ্গে থাকে না?’
‘সোয়ামি তো মারা গেছুন।’
‘মারা গেছেন!’
‘জে আপা, আগুনে পইড়া মারা গেছুন।’
‘কী ভাবে আগুনে পুড়ে মারা গেল?’
‘তহন অন্য বস্তিতে থাকতাম। এক রাইতে বস্তিতে কেরা যেন আগুন ধরাইয়া দেয়। অনেক মানুষ মইরা যায়। আমার সোয়ামিও মইরা গেছে তহন। লোকটার কথা মনে হইলে কইলজাটা চাইপা ধরে গো আপা! বুকটার ভেতর খালি ঠাস-ঠাস করে। মরার আগে বহুত জ্বালা সইছে লোকটা। আগুলে পুইড়ে গেছিল সারা শইল। হাসপাতালে ভালো চিকিৎসা করাইতে পারি নাই টেকার অভাবে। দিন-রাইত চিৎকার মাইরা বেহুশ হইত। মরার আগের দিন আমারে কাইন্দা কাইন্দা কইছিল, ববি-রে আমি আর বাঁচুম নারে…! আপা আমার সোয়ামিরে যারা মারল তাগো কী বিচার হইব না? আমি কত রাইতে কাইন্দা-কাইন্দা কই, আল্লাহ-গো তাগরে গজব দাও। হাবিয়া দোজখের গজব দাও। আপা-গো, এ দেশে আমার সোয়ামির হত্যার বিচার কীগো হইব না? আপনেরা একটা কিছু লেখেন গো আপা।’
ববির কথাগুলো কান্নার আওয়াজের সাথে মিইয়ে যায়। ফোঁপাতে থাকে মেয়েটি। ফারিয়া বুকে টেনে নেয় তাকে। সান্ত্বনাস্বরূপ ববির পিঠে একটা হাত বুলাল ফারিয়া। ববির কান্নায় ফারিয়ার দুচোখও জলে ভরে উঠে। সামির পরপর কয়েকটি ক্লিকে আবেগঘন মুহূর্তের দৃশ্যটা ক্যামেরাবন্ধী করে নেয়।
তিন.
রাজধানীর অভিজাত এলাকায় একটা ফাস্টফুডের কেবিন রুমে মুখোমুখি বসেছে সামির আর সামিয়া। সামিয়ার ফর্সা মুখবয়বের দিকে সামিরের সৌন্দর্যপিপাসু দুচোখের দৃষ্টি। দুজনের মাঝখানে একটা টেবিল। হোয়াট-ব্রাউন কালার চুলের আড়ালে সামিয়ার মুখখানা দারুণ ফ্রেস লাগছে। লাল লিপস্টি মাখা গোলাপস্বরূপ সামিয়ার রক্তিম ঠোঁট দুটো মধুলিপ্সু ভ্রমরকে যেন উষ্ণ স্বাগত জানাচ্ছে অনবরত।
‘পড়ালেখা কতোটুকু এগুলো?’ নিরবতা ভেঙে জানতে চাইল সামির।
‘বিবিএ ফাইনাল সেমিস্টার চলছে।’ বলল সামিয়া।
দুজনের চয়েজ করা মেনুতে খাবার সামনে এলো। একটি প্লেট সামিয়ার দিকে এগিয়ে দিতে গিয়ে চোখাচোখি হওয়াতেই একটু লাজুক হাসি চেপে নিল সামিয়া। তোমার হাসিটা ভীষণ সুইট, বলল সামির।
থ্যাংকস জানিয়ে সামিয়া বলল, ‘পত্রিকা আর ম্যাগাজিনে আপনার লেখা পড়েছি। আজ আপনাকে সামনে পেয়ে ভালো লাগছে।’
‘হুম, আমার লেখালেখি কলেজজীবন থেকেই চলছে। আজ তোমাকে আসতে বলেছি যে বিশেষ কারণে সেটি হল আমার এক ফিল্মমেকার বন্ধু সেদিন ফোন করে তার আগামী ফিল্মের স্ক্রিপ্টটা আমাকে লিখতে অনুরোধ করল। আমি অল-রেডি স্ক্রিপ্টটার নায়ন্টি-পাশ্চেন্ট কভারও করেছি। আর এই ফিল্মে নায়িকা হতে যাচ্ছে নবাগত কেউ। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে এই গল্পে নায়িকা হিসেবে তোমাকে বেশ মানাবে! অবশ্য এ বিষয়ে আগেও একবার তোমাকে বলেছি। সত্যি বলতে কী আমার কল্পনাতে নায়িকার ভূমিকায় তোমাকেই রেখেছি। তুমি কীভাবে নেবে ঠিক বুঝতে পারছি না…।
কথাগুলো শুনে সামিয়া রোমান্টিকতার অবয়বে মৃদু হাসি চেপে বলল, ‘হুম! নায়িকা হতে পারলে তো ভালো কিছু করা যেত নিশ্চয়ই। যদিও চিত্রজগতের প্রতি আমার তেমন এগারনেস নেই। বেশ কয়েক মাস ধরে আমরা ম্যাসেঞ্জারে-চ্যাটিং করে আসছি। যে কথাটি বলতে চেয়েও বলা হয় নি, ভাবলাম আজ সরাসরি বলে আপনাকে ক্ষাণিকটা সারপ্রাইজ দেয়া যাক। তাই চলেও এলাম।’
সামির ভাবছে, আমিও তো কখনো বলতে পারিনি অব্যক্ত কথাটি। যদিও বা এ-কথায় সে-কথায় বুঝাতে চেয়েছি। এতদিন না বলে তবে কী ভুল করে নি! সামিয়া বোধহয় ঠিকই বুঝতে পেরেছিল আমি যা বলতে চেয়েছি গত কয়েক মাস ধরে!
‘আমাকে শুনছেন?’ সামিরকে অন্যমনস্ক দেখে সামিয়ার প্রশ্ন।
সামির কৌতুহলী স্বরে বলল, ‘হুম, কী যেন বললে তুমি?’
সামিয়া চোখ তুলে সামিরের দিকে চেয়ে নিল একবার। তারপর বলল, ‘সামনের মাসে আমার এনগেজমেন্ট রিং…, নিউইয়ার্ক প্রবাসী আমার এক কাজিনের সঙ্গে…। হয়তো বা কিছুদিনের মধ্যে ওর সঙ্গে আমিও চলে যেতে পারি নিউইয়ার্কে…।’
সামিয়ার এমন কথায় সামিরের মাথার ওপরের বৈদ্যুতিক বাতির আলোর তীব্রতা যেন কয়েকগুণ বড়ল! নিজের ভাবাবেগ কন্ট্রোল করে সামির বলল, ‘হুম, গুড নিউজ!’ তারপর মাথার ওপরে জ্বলা বাতিটির দিকে তাকিয়ে সামিয়ার দিকে ফের নজর ফিরিয়ে জানতে চাইল, ‘তোমার মতামত কী?’
‘ফিল্মের নায়িকা হবার কথা বলছেন?’
সামির সরাসরি উত্তরটা না পেয়ে আরেকটু সময় নিয়ে বিশ্লেষণ করে তাকে বুঝাতে চাইল, ‘সাপোজ, তুমি ফিল্মে কাজ করতে আগ্রহী। কিন্তু দেখা গেল তোমার হাজবেন্ড বাধা দিয়ে বসল। তোমাকে বিয়ের আগে মানে এখনই ভেবে নিতে হবে যে, চিত্রজগতে পা রাখবে কী রাখবে না।’
সামিয়া একটু সময় নিয়ে বলল, ‘আমি ফিল্মে কাজ করবো কী-না এই নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথাই নেই। তবে কাজ করতে কখনো ইচ্ছে হলে অবশ্যই আপনাকে জানাব কিন্তু!’
‘হুম, তার মানে আগে বিয়েটা সেরে ফেলতে চাচ্ছো?’ এই প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে সামিয়া নত দৃষ্টিতে চুপ হয়ে থাকল। সামির জিজ্ঞাসু নয়নে তাকিয়ে আছে সামিয়ার মুখের দিকে কিছু একটা উত্তর পাবার আশায়।
‘মন খারাপ আপনার?’ নিরবতা ভেঙে চোখ তুলে সামিয়া দরদ স্বরে বলল।
‘মন খারাপ কীনা বুঝতে পারছি না। এক্ষুণি যে উঠতে হবে। সন্ধ্যার পর পান্থপথের দিকে যেতে হবে। যা-হোক, আশা করি তোমার অনাগত দিনগুলো ভালো যাবে।’ কথা শেষে সামির উঠতে প্রস্তুত হল। সামিয়া ডান হাতটা বাড়িয়ে অনুনয় স্বরে বলল, ‘আমরা আরও কিছুক্ষণ বসতে পারি। আজকের সন্ধ্যাটা সত্যি খুব ভালো লাগছে আমার। প্রতিপক্ষের উত্তর না পেয়ে সামিয়া প্রশ্ন করল, ‘আপনি কি বিরক্তবোধ করছেন, ভাইয়া ?’
‘না, আমি বিরক্তবোধ করছি না। কখনো হয়তো বা এভাবে ক্লোজলি বসার মতো সময়-সুযোগও হয়ে ওঠবে না। তবে এই সন্ধ্যেটা বড়ই স্মৃতিময় হয়ে থাকবে আমার জীবনে। আর স্মৃতি মানেই কিন্তু বেদনার হাতছানি। সামির দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল একটা।
‘স্মৃতি মানেই বেদনার হাতছানি, ভাইয়া!’
‘হুম।’
‘কেন?’
‘জানি না।’
‘না জানলে এমন করে বললেন কেনো, ভাইয়া?’
‘মনের ভেতর অনুভূত হয়েছে, তাই বলেছি। মানুষের মনে তো কতো নিষ্প্রয়োজন ভাবনারও উদয় হতে পারে। এই সন্ধ্যায় আমার ভেতরও তেমন কিছু হয়তো হচ্ছে…! এইসব বলতে বলতে সামিয়ার মুখের দিকে নজর পড়তেই চমকে যায় সামির। একি! তুমি কাঁদছো কেন?’
সামিয়া হাতের পিঠে চোখের পানি মুছে বলল, আপনি আমার ‘মতামত’ জানতে চেয়েছেন না! ডিসিশনটা কিন্তু এখনো নেই নি। তবে এতটা পাষাণ মনের মানুষ আপনি, সেটা ভাবতে পারি নি!’ সামিয়া কেমন যেন আহত গলায় কথাগুলো বলল। একইভাবে সামিরও প্রশ্ন করল, আমি পাষাণ?’
‘হুম, ইউ রেয়েলি কুয়েল! কী করে ভাবতে পারলেন আমি অন্য কাউকে… আমি কী এত নিষ্ঠুর হতে পারব!’
‘না। কক্ষণও তুমি এত নিষ্ঠুর হতে পারবে না। তুমি তো খুবই দরদিয়া! সোনা একটা….। তোমার দিকে তাকাতেই আমার ভেতর কী যে ঝড় বয়ে যায়! আবেগের ঝড়! ইচ্ছে করছে অনন্তকাল সে ঝড়ে উড়তে থাকি, নয়নে নয়ন রেখে জীবনভর শুধু তোমাকে দেখি!’
কিছুক্ষণ নিরব থাকল দুজন। তারপর সামির বলল, ‘আই ওয়েন্ট টু নো, হু ইজ হি? তুমি যাকে নিয়ে জীবন কাটাতে চাও! সেই বিশেষ মানুষটি দেখতে কেমন!’
‘আমি বলতে পারছি না, সত্যি বলতে পারছি না, ভাইয়া।’
সামির আহ্লাদভরা গলায় বলল, ‘আজব তো!’
ফের চোখে চোখ পড়তেই আবেগী হাসি ফুটে উঠল দুজনের মুখে। সামিয়া দুষ্টমীভরা চোখে সামিরের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কেনো যে শুধু শুধু এত প্রশ্ন! তিনি নাকি আজও কিছুই বুঝতে পারছেন না…!’
সামির হাতটা এগিয়ে সামিয়ার হাতের ওপর রেখে বলল, ‘কী হচ্ছে, আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না!’
‘আমার কিন্তু আর এত ভণিতা ভালো লাগছে না। রাতভর যখন-তখন উল্টা-পাল্টা চ্যাটিং। আর এখন বলে বুঝতে পারছি না। আমাকে বোকা পেয়েছো নাকি ! তুমি আস্ত একটা নিরামিশ বয়!’ এবার সামিরকে তুমি সম্বোধন করে কথা বলতে গিয়ে মুখজুড়ে হাসির ঢেউ উঠে সামিয়ায়, যে হাসিতে সামিরের মনের আকাশ ভরে যায় কৌমুদী রাতের আলোয়। দুজন দুদিকে থেকে হাত বাড়িয়ে দেয়। ফাস্টফুডের মিউজিক প্লেয়ারে দরদভরা কণ্ঠে লাভ-সং বাজছে তখন, ‘প্রেমের ছোঁয়ায় পড়েছি মায়ায় উড়ছে মন আজ মেঘের ডানায়।’
দিনের ক্লান্তি ঝেড়ে সূর্যটা পশ্চিমাকাশে ডুবে গেল কখন। এমন সন্ধ্যা বেলায় দুজনার মন পরম তৃপ্ততায় প্রেমজলে স্নানরত। মায়া ছড়ানো স্পর্শের এই ক্ষণে অজানা সুখে আবেগাপ্লুত দুটি মানুষ। আর বাইরের প্রকৃতির শো-শো বাতাস যেন তাদের অদম্য প্রেমের বার্তা বয়ে নিয়ে যায় দূর দূরান্তে!
চার.
হঠাৎ কী কারণে কী হয়ে গেল! সামির কিছুতেই বিষয়টা মেলাতে পারছে না। সামিয়ার সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। সামিয়ার সেল নাম্বার বন্ধ। ফেসবুক-মেসেঞ্জারেও পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিদিনের ব্যস্ততা শেষে রাত নামতেই সামিরের মন স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ে। আবেগাক্রান্ত হৃদয়ে সামিয়ার মুখের কথাটি মনে পড়ে যায়, ‘আমিও চলে যেতে পারি নিউইয়ার্কে…’। এদিন সন্ধ্যায় বড্ড ক্লান্ত হয়ে রুমে ফিরেছে সামির। রাতের খাবার খেয়ে বিছানায় যেতেই চোখে ঘুম ধরে যায়। পাশে রাখা মোবাইলে রিংটোন বেজে উঠে। সামির রিসিভ করে ‘হ্যাঁলো’ বলল। ওপাশ থেকে ভেসে আসল পরিচিত কণ্ঠস্বর, ‘আজ সন্ধ্যায় আমি রবীন্দ্র সরোবর থাকব। তুমি এসো’। সামির তড়িগড়ি করে বাইক নিয়ে ছুটে যায় রবীন্দ্র সরোবর। সামিয়াকে সামনে পেয়ে সামির আবেগে উন্মাদপ্রায়। নীল শাড়িতে নীল পরী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সামিয়া। সামির হাত বাড়িয়ে সামিয়াকে ছুঁতে চায়। সামিয়া বাধা দেয়, ‘আমাকে স্পর্শ করবে না, আমি তোমার নেই!’ এমন স্বপ্নে সামিরের ঘুম ভেঙে যায়। সামির বিছানা থেকে আঁতকে ওঠে পাশে রাখা মোবাইলটা হাতে নেয়। রাত তো বেশি হয়নি। নয়টা বাজে মাত্র। ভালোবাসার দুর্নিবার আকর্ষণে সামিয়ার নাম্বারটা চেপে কল দেয়। কল হয় না। সিম-অফ। সামির বেদনাকাতর হয়ে পড়ে। তার বুকের ভেতর বিষাদের কামান আঘাত হানছে অবিরত! ঘুমভাঙা বিষন্নতায় মুখের ওপর দুহাতে চেপে ধরে সে অনুচ্চ স্বরে বলছিল, ‘আই মিস ইউ সামিয়া। ইউ ডন্ট বিট্রে উইথ মি!…’ হঠাৎ কে যেন রুমের দরজায় নক করছে। সামির উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখে ফারিয়া শাহনাজ! চমকে উঠে সামির। তুমি! রুমের দরজা আগলে দাঁড়ায় সামির।
‘আমাকে রুমের ভেতরে যেতে দাও সামির।’ কথাটা কেমন অসহায় গলায় বলল ফারিয়া শাহনাজ। তারপর সবকিছু শুনে সামির বলল, এটা কী করে সম্ভব! ফারিয়া শাহনাজ অনুতপ্ত গলায় বলল, ভুলটা আমারই। এখন তুমি যদি আমাকে ফিরিয়ে দাও সুইসাইড করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই আমার! প্রথম বেবি আমি অ্যাবরশন করাতে পারব না! প্লিজ সামির, ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড মাই সিসিয়েশন!
দুদিন পর। ফারিয়া শাহনাজের তৎপরতায় নব-দম্পতির ছবিসহ কয়েকটি পত্রিকায় তাদের নিউজ হল। এদিন পত্রিকা হাতে নিয়ে এমন খবরে থমকে যায় সামিয়া। তারপর আরও কয়েকটা দিন কেটে যায়। এক রাতে বিছানায় সামিরের পাশে ঘুমিয়ে আছে ফারিয়া শাহনাজ। কিন্তু সামিরের চোখে ঘুম ধরছে না। মোবাইলাটা হাতে নিয়ে অকারণে ওয়াইফাই সংযোগ দিতেই ম্যাসেঞ্জারে পাওয়া গেল সামিয়াকে ! দীর্ঘ ম্যাসেজ সেন্ড করেছে সামিয়া, ‘আমার সন্দেহটা ভুল ছিল না সামির! যাকে বিয়ে করেছো তাকে নিয়ে সিএনজিতে চড়ে যখন-তখন শহর ঘুরে বেড়াতে তুমি। তোমার কলিগ জেনে আমি কখনও প্রতিবাদ করতে পারি নি। কিন্তু সহ্য করার মতোন এত ধৈর্য-শক্তিও আমার ছিল না। তাই তোমার সাথে কমিউনিকেশন অফ রেখেছি। কিছুদিন নিজেকে দূরে রাখতে চেয়েছি। যদিও আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। যখন তোমার বিয়ের খবর জেনেছি তখন যেন মুক্ত হলাম! তোমার প্রেমে পড়ে যে যাবজ্জীবন সাজা খাটছিলাম তা থেকে আমি মুক্তি পেয়েছি! তারপর বাবা-মায়ের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়েছি। নিউইয়র্ক প্রবাসী কাজিনকে বিয়ে করে দেশ ছেড়েছি কিছু দিন হল। এই জনমে আর কখনো দেখা হবে কীনা জানি না। তোমার কলিগকে নিয়ে ভালো আছো, সুখে আছো নিশ্চয়…!’
রাতের নিরবতা ভেঙে বাইরে তখন মুষলধারে বৃষ্টি ঝড়ছে। সামিরের দুচোখের ভেতর থেকে বেদনার জল বেয়ে বেয়ে পড়ছে। প্রকৃতির প্রবল বর্ষণের সাথে সামিরের চোখের জল একাকার হয়ে বেদনাকাতর প্রহর কেটে যায়। এমন নিশুতি রাতে আনমনে কত কিছু ভাবছে সামির, এক জীবন কখন ফুরিয়ে যাবে তবু যে ভোলা হবে না তোমাকে! আবেগতাড়িত নীরব স্বরে আশীর্বাদ করে সামির, ‘সামিয়া, অনেক অনেক ভালো থেকো…।’
রাতের গভীরতা যত বাড়ছে বিরহ যাতনায় তত অস্থির হয়ে পড়ছে সামির। বড় নিষ্ঠুর রকমে তার বুকের ভেতর আঘাত হানছে স্মৃতিময় অতীত; কেউ কেউ ভুল মানুষের প্রেমে পড়ে যাবজ্জীবন সাজা খাটছে নিশ্চয়ই!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *