ছোটগল্প।। প্রেসক্লাব থেকে মীরপুর।। মোজাম্মেল হক নিয়োগী
দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা দুটি পাথরগাছ। অনেক্ষণ চেষ্টা করেও টেক্সি পেলাম না। ঢাকায় এখন টেক্সি ড্রাইভারদের টিকি ধরাও চৌদ্দ গোষ্ঠীর পুন্যের ব্যাপার। আমার চৌদ্দগোষ্ঠীতে হয়ত এমন পুন্যবান কেউ ছিল না। বাসের অপেক্ষা ছাড়া উপায় নেই। বিগড়ানো মেজাজ নিয়েই দাঁড়িয়ে রইলাম।
সূর্য ডুবে গেলেও এখনও একটু একটু আলোর রেশ রয়ে গেছে গাছের পাতায় পাতায়। রাতের সোডিয়াম বাতির স্যুইচ টেপা হয়েছে। জ্বলবে একটু পরে। বাসের প্রতীক্ষায় প্রাণ ওষ্ঠাগত। দুএকটা বাস আসে কিন্তু ভিড় ঠেলে ভেতরে ঢোকার জো নেই।
সন্ধ্যার অন্ধকারে গিলেছে শহর। একটা বাস আসলো। এবার ভিড় কম নয়। এবার আর ছাড়াছাড়ি নেই আমাকে উঠতেই হবে এমন সংকল্প নিয়ে গেটের পাশে বাসের হেল্পার আট দশ বছরের স্মার্ট ছেলেটি আমাকে দেখেই সচতুর চোখের পলক ফেলে অন্যদিকে তাকিয়ে জিগ্যেস করলো, কই যাইবেন?
আমি বললাম, মীরপুর।
মীরপুর যাইবো না। অন্য বাস দেহেন।
বাসের গায়ে মীরপুর-যাত্রাবাড়ি লেখা অথচ মীরপুর যাবে না; ছেলেটির কথা শুনে আমি স্তম্ভিত ও বিস্মিত হয়ে গেলাম। ব্যাপার কী? মীরপুর যাবে না কেন? সেকেন্ড কয়েক চিন্তায় নিমগ্ন হলাম। বাসের ভেতর থেকে আরেক জন বললো, মোটারে তুলবি না।
বুঝতে পারলাম আমি অতিরিক্ত মোটা বলেই কিশোর উপন্যাসের নায়কের মতো ছেলেটি এমন কথা বলছে। দুইজনের সমান জায়গা নেবো অথচ ভাড়া তো দেবো একজনের তাই হয়ত ছেলেটি আমাকে এমন বলেছে। কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকার মতো মনের এবং শরীরের অবস্থা নেই। আর দাঁড়িয়ে থাকার মতো ধৈর্য্যও আর নেই। সবাইকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠে গেলাম বাসে। ছেলেটি আমাকে উঠতে আবার বারণ করলে আমি চোখের আয়তন বড় করে ওর দিকে তাকাতেই সে অন্য দিকে মুখ ফিরালো। কিছু বলার সাহস পেল না। আমি উঠে গেলাম ভেতরে। কিছুক্ষণ পর হেল্পার ছেলেটি অসহায় দৃষ্টি মেলে বাসের কন্ডাক্টরকে বললো, মোটা উইঠ্যা গেছে। ওর কথা শুনে খারাপ লাগেনি, মুখ লুকিয়ে হাসলাম। পাশের দুই একজনও মুখ টিপে হাসলো বুঝতে পারলাম। যাক তবুও বাসে উঠতে পেরেছি এটিই বড় কথা। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে দাঁড়ালাম।
ট্র্যাফিক জ্যাম। বাসটি সরকারি ফাইলের মতো এগুচ্ছে। পাশের সীটে উত্তপ্ত রাজনীতির আলাপ হচ্ছে। চালের দামই মুখ্য বিষয়। খেদ, ক্ষোভ, যন্ত্রণার আস্ফালন চলছে মানুষের কথা বার্তায়। মানুষ চলবে কীভাবে? এভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে মানুষের রোজগার তো বাড়ে না মানুষ বাঁচবো কীভাবে? প্রতিদিন জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে প্রতিদিন বাড়ছে সরকার কী (মুদ্রণ অযোগ্য শব্দ) ছিঁড়ে?
পিছনের সীট থেকে আরেকজন চেঁচিয়ে উঠলো, আরে ভাই বাড়ি ভাড়ার লাইগ্যা অহন গলায় ফাঁস লওন লাগবো, অন্যজন বলে ওঠলো, বাড়িওয়ালাদের গর্দান মোটা অইয়্যা গেছে। যে যেভাবে পারে ভাড়া নিতাছে। ডাকাতের মতো ব্যবহার। এইসব দেখার কোনো (মুদ্রণ অযোগ্য শব্দ) পুত নাই। বাড়ি বাড়ার লাইগ্যাই দেশের দুর্নীতি অয়। মানুষের চলা তো লাগবো নাকি লাগবো না? বাড়ি ভাড়ার অব্যবস্থার কথা কোনো (মুদ্রণ অযোগ্য শব্দ) পুতে না জানে, হ্যা? মানুষ যখন চলতে ফারবো না তখনই গলায় ফাঁস লইবো?
সামনের সীটের আরও একজন ক্ষ্যাপা। তার কথা বেশি শুনতে পারছি না। কিছু কিছু বোঝা যাচ্ছে। দুর্নীতির লাইগ্যা দেশটা ছারখার হয়ে গেছে। এত বড় বড় চোর এরা এই সরকার না আইলে তো বোঝাই যাইতো না। দেশটা খাইয়্যা শেষ কইর্যা ফেলছে। অহন দেশের কী অইবো? দেশের টাকা বিদেশে পাঠাইয়া দেয়। আরে ছেঁড়ার গেঞ্জির চিপায় এত টেহা থাকে কেমনে?
এইসব খিস্তি খেউড় এবং ছেঁড়া গেঞ্জি, দামি স্নানগ্লাস থেকে জাতির পিতা অতঃপর রাজাকার ও যোদ্ধাপরাধী এবং তাদের জেলে যাওয়ার নানান ফিরিস্তিতে মিনি বাসটির ভেতরটা গুঞ্জরিত হচ্ছিল। অন্য আলোচনার ফাঁকে মুখ লুকিয়ে ম্যাকি মুখে একজন বললো, দেশের অর্থনীতির বারোটা বাজছে। তাকে মনে হলো ক্ষুদে অর্থনীতিবিদ, সমালোচনা করতে জানে কিন্তু উত্তরণের পথ দেখাতে জানে না কতিপয় বুদ্ধিজীবীর মতো। বাসের অন্যান্য লোকের তর্কবাক্যের সামনে কথা বলার সাহস হলো না বলেই যতটা পারা যায় সে ততটা মুখ লুকিয়ে রাখলো। তার কথা পাশের লোকটি ছাড়া আর কেউ শুনেছে বলে মনে হয়নি। তবে পাশের লোকটি চোখ বড় করে তাকালে এই অর্থনীতিবিদ মুখ নিচের দিকে লুকাল।
তানারা রাজাকারদের বিচার করলেন না কেন?
অহন লাফায় কেন? সব শালা হিজড়া।
হা… হা… হা…। ঠিকই কইলেন ভাই। বাসে হাসির রোল পড়ে গেল। এই হাসির ভিতরেও হাসি। সবাই হেসে উঠলেও আমার সামনের সীটের এক পৌঢ় ও তার পাশে বসা তরুণী হাসেনি। কারণ পৌঢ়ের হাতের মুটোয় তরুণীর হাত নিয়ে খেলা করছিল। এরপর জমাট হাসির বুক চিড়ে বললো, ভাই এরশাদকে বাদ দিয়া কন। এই প্রসঙ্গের পূর্বে মানুষ হাসি-খরায় ভুগছিল এবার প্রবল বারিসন। টাকা খোয়া যাওয়া ব্যক্তিটি, এক পৌঢ় এবং তরুণী ছাড়া সবার বুকের ভেতর থেকেই উতলে উঠলো দমফাটা হাসি।
উত্তেজিত বাসযাত্রীদের আলোচনায় কখনও রাজনীতি, কখনও ধর্মনীতি, কখনও সমাজনীতির অনুবিষয়গুলি স্থান করে নিচ্ছে। এই সময় বাসটি এসে থামলো শাহবাগে। দুর্ভাগ্যবশত হোক আর সুভাগ্যবশত হোক আমি একটা সীট পেয়ে গেলাম মিনি বাসটির পেট বরাবর। শরীরের অর্ধেকটা সীটে দিয়ে ঠেস মেরে বসলাম। অর্ধেক শরীর ঝুলিয়ে বসা সুখ না দুঃখ জানি না। তবে সীট নিয়ে বসতে পারা মনে হয় একটা অধিকার আদায় করা। অধিকার আদায়ের অন্য রকম সুখ আছে। সীটে বসে আরও একবার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। সারাদিনের ধকলে চোখে ঘুম এসে গেছে। তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লাম কিছুক্ষণের মধ্যেই।
ট্র্যাফিক জ্যামে গাড়ি আটকা পড়লো বাংলামোটরে। ভয়ঙ্কর জ্যামে স্থবির শহর। আশেপাশ অখণ্ড স্থবিরতায় আটকা পড়ে আছে। বাসের ভেতরে ভ্যাপসা গরম, মানুষের গরম নিশ্বাস, লোকজনের চেঁচামেচি বাসের ভেতরটা বাষ্পরুদ্ধ হয়ে গেছে। হঠাৎ বাসের ভেতরে একজন চেঁচিয়ে উঠলো, আল্লাগো আমার সর্বনাশ অইয়া গেছে। কয়েকজন বিষয়টা বোঝার জন্য গলা বাড়ালো, কী অইছে ভাই? লোকটি ভেজা গলায় বললো, মায়ের চিকিৎসার লাইগ্যা জমি বেইচ্যা দশ আজার টেহা আনছিলাম … ও আল্লাগো … আমার টেহাডি লইয়্যা গেছে গা গো। আল্লাগো…
সামনের সীটে জবরদস্ত জোয়ান লোকটি বললো, গাড়ি থামান। সবার বডি চেক করলেই পাওয়া যাইবো। এই ড্রাইভার গাড়ি থামান। তার কথায় আরও দু-একজন গাড়ি থামানোর কথা বললো। এর মধ্যে হেল্পার ছেলেটি বললো, গাড়ি তো থামাই আছে।
ছেলেটির কথা লোকটির গায়ে সইল না। সে উত্তপ্ত বাক্যে বললো, এই চুপ কর বেয়াদপ। তুই বেশি বাড়াবাড়ি করছিস। এক থাপ্পড় দেয়া গাল ফাটায়া দিমু। ছেলেটি আর কোনো কথা বললো না। সে তার কাজে মনোযোগ দিল। কাজ আর কি, সামনে দেখছে জ্যাম কমলো কি না
মিনি বাসটি কচ্ছপের মতো গড়গড়িয়ে চললো।
কিছুক্ষণ পর টাকা খোয়া যাওয়ার লোকটি ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করেছে। তার কান্নার দিকে আর কেউ মনোযোগ দিলো না। নিজেদের কষ্টের কথা চলতে লাগলো পূর্বাপর।
গেটের পাশের সীটে একটা কড়া মেজাজের লোক। মাঝে মাঝে সে গরম হয়ে উঠছে কারণে-অকারণে। হয়ত বাসের গরমে না হয় অন্য কোনো গরমে সে নাকাল। মাঝে মাঝেই সে ড্রাইভারকে ধমক মারছে। এত জোরে ব্রেক চাপো কেন? বিশ মিনিটের রাস্তা তুমি দুই ঘণ্টা লাগাইতাছো। তুমি ড্রাইভার না হেল্পার? তোমার রিক্সা চালানো উচিত। ড্রাইভার নিরুত্তর। ভাল শ্রোতা। অর্থবিষয়ক বুদ্ধিজীবী আবার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, আমাদের জীবন থেকে এভাবে কত সময় ছিনিয়ে যাচ্ছে। কারো জীবনের একটা মিনিট সময় কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবে? এবার তার কথাটা আমার মনে ধরেছে। মরার মাস্টার ডিগ্রীর জন্য আমার জীবন থেকেও চার বছর ছিনিয়ে নিলো দায়িত্বজ্ঞানহীন তথাকথিত অথর্ব নীতি নির্ধারকরা কিংবা দায়িত্বজ্ঞানহীন অথর্ব শিক্ষকগণ। লোকটির দিকে তাকালাম। গোবেচারা। মনে মনে বললাম, বুদ্ধিজীবীরা মাঝে মাঝে ভাল কথা বলে বটে তবে তারা পরিবর্তন করতে পারে না।
কিছুক্ষণের মধ্যেই কন্ডাক্টর এসে ভাড়া চাইতেই সে রেগে গেল। কয়বার ভাড়া নিবি। এই বেটা মনে থাকে না তো এই কামে আইলি কেন? কন্ডাক্টর কিছু না বলে অন্যজনের ঘাড়ে হাত রেখে বললো, ভাড়া দেন, ভাড়া দেন। অন্যজনও ক্ষেপে গেলো, এই বেটা গায়ে হাত দিলি কেন? এমনি চাইতে ফারিস না? কন্ডাক্টর কোনো কথা না বলে আরেকজনকে বললো, ভাড়া দেন ভাড়া দেন।
একজন বলে উঠলো, এই কন্ডাক্টটরটা যোগাযোগমন্ত্রী বেহুদার মতো। বাসে আবার হাসি উঘরে উঠলো।
ফার্মগেট এসে বাসটি থামলো। যাত্রীরা নেমে গেল। বাসটি অর্ধেক খালি হয়ে গেল। মুহূর্তের মধ্যে। এখন ড্রাইভার অন্য রকম কাজ শুরু করেছে। বাসটি এক ফুট দুইফুট করে সামনে গিয়েই থামিয়ে বসে থাকে। ড্রাইভারের চোখ যেন তীর্থের কাক। সে এদিক সেদিক তাকিয়ে যাত্রী খুঁজছে। হেল্পার ছেলেটির গলাফাটা চিৎকার, আঁগারগাও, মিরপুর… পর্যায়ক্রমে বলে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে তার গলার স্বর ভারি হয়ে আসছে। কড়া মেজাজের লোকটি বারবার গর্জে উঠছে, এই ফাইজলামি শুরু করছোস ক্যান? গাড়ি চালা। এরমধ্যে আরও কয়েকজন নানা বিদ্রƒপ করছে। কেউ কেউ ড্রাইভারের সাতগোষ্ঠীকে উদ্ধার করছে। কিন্তু গাড়িটি এগুচ্ছে না। বাসের মাঝখান থেকে একজন বিড়বিড় করে বললো, এই ড্রাইভার আমাদের দেশের সরকারের লাহান। নিজের স্বার্থ ছাড়া জনগণের স্বার্থ দেহে না। যার যা ইচ্ছে বলুক এতে ড্রাইভারের কিছু যায় আসে না। সে যেন পাথরমানুষ।
আরেকজন বললো, এইসব ড্রাইভারের মতো সরকারের লাইগ্যাই দেশটাও মিনি বাসটার মতো অবস্থা। তাকে সমর্থন যোগালো কয়েকজন, ঠিকই বলেছেন। পার্টস তো সব চুরি কইর্যা খায়।
এক দুই জন করে অনেক যাত্রী বাসে উঠে গেছে এর মধ্যে। বাসের চেহারা পূর্ববৎ। কিন্তু ড্রাইভার এখনও বাস ছাড়ছে না। আগের মতই একফুট বা দুইফুট করে এগিয়ে আবার থামছে, আরও যাত্রী তোলার পায়তারা করছে। একবার একটু সামনে এগিয়ে হঠাৎ ব্রেক চাপলে কন্ডাক্টর ছেলেটি কাত হয়ে গেটের পাশে কড়া মেজাজের লোকটির গায়ে একটু লেগে যায়। লোকটি বিকট চিৎকারে বললো, এ্যাই গাঁয়ে লাগলি ক্যান? ঠিক কইর্যা দাঁড়া।
হেল্পার ছেলেটি দরজার হাতল ধরে রেখে বললো, আস্তে কইতে পারেন নাই।
কড়া মেজাজের লোকটি বললো, তুই চুপ কর। তুই বড় বেয়াদব। একটা থাপ্পড় দিয়া দাঁত ফেলে দিবো।
ক্যান্? থাপ্পড় দিবেন ক্যান্?
আবার কথা কস? একটা থাপ্পড় দিবো।
দেন দেহি থাপ্পড়?
কড়া মেজাজের লোকটি একটা থাপ্পড় দিলো কষে। বুদ্ধিদীপ্ত ছেলেটি অসহায় চোখ মেলে চেয়ে রইলো কড়া মেজাজের লোকটির দিকে। তাকে দেখে ভীষণ মায়া লাগলো। কিন্তু কিছু করার নেই ভেবে চুপ করে বসে রইলাম।
ফার্মগেটের পরের রাস্তায় এতটা ভিড় নেই। গাড়িটির গতি একটু বেড়ে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যে গাড়িটি আগারগাঁও এসে দাঁড়াল। কড়া মেজাজের লোকটা নেমে গেল। ড্রাইভার হয়ত লক্ষ করছিল তাকে। লোকটি নেমে যেতেই ড্রাইভার বললো, এ্যাই মইন্যা বকা দেয়। বকা দেয় কইলাম।
হেল্পার ছেলেটি অসহায় দাঁড়িয়ে রইল।
ড্রাইভার আবার চেঁচালো, বকা দে মইন্যা। না অইলে গাড়িত নাইম্যা যা।
হেল্পার ছেলেটি অনুন্যপায় হয়ে সলাজ বিনম্র উচ্চস্বরে বললো, এই খানকির পুত।
কড়া মেজাজের লোকটি কিছুটা দূর চলে গিয়েছিল। সে দূর থেকেই এই কিশোর নায়কসদৃশ্য হেল্পারটিকে হাত উঁচিয়ে থাপ্পড় দেখালো।
বাসটি থামাই ছিল। ড্রাইভার জিগ্যেস করলো, ‘বকা দিছোস মইন্যা?’
হ দিছি।
কী কয়?
থাপ্পড় দেহায়।
তুই কী কইলি?
আমি চেইন খুইল্যা ফক্ষী দেখাইছি।
বাঘের বাচ্চা।
বাসের যাত্রীরা হেসে উঠলো যেন বর্ষার বিল থৈ থৈ করে উঠছে। আমি হাসতে পারলাম না। হঠাৎ বুকের ভেতরাটা কেন যেন জমে গেল? পরিবেশটা শুরু থেকেই অসহনীয় লাগলেও কিশোর নায়ককে আমার ভাল লাগছিল। তাকে মাঝে মাঝে তাকিয়ে দেখছিলাম সারা পথেই। ওর এই কথার পর আবার ওর দিকে তাকালাম। তার নামটিও বিকৃত হয়ে গেছে। তার মন ও মনন পূঁজিবাদের দুমড়ানোমুচড়ানো অসাড় আবর্জনায় জারিত হচ্ছে। মনে হলো সে কড়া মেজাজের লোকটিকে পক্ষী দেখায়নি পক্ষী দেখিয়েছে অচল পূঁজিবাদী সভ্যতাকে যে পূঁজিবাদী সভ্যতা এই বয়সে তার পায়ে দাসত্বের শিকল পরিয়ে বাসের হেল্পার বানিয়েছে।
চমৎকার। আমরা যারা নিয়মিত বাসে চলাচল করি তাদের সামনে এমন নানান ধরনের ঘটনা ঘটে যায়। কিন্তু খুব কম সময় উপলব্ধি করার চেষ্টা করি কিশোর কন্ডাক্টরদের টিকে থাকার অশ্লীল সংগ্রামকে। সূক্ষ্ম রসবোধ, তীব্র রাজনৈতিক সচেতনতা আর গভীর জীবনবোধের মিশেলে একটি সাধারণ বাস যাত্রা পরিনত হয়েছে আকর্ষণীয় গল্পে। ভিষনভাবে উপভোগ করলাম।
আমাদের প্রতিদিনের চিত্র। বিশেষ করে যারা নিয়মিত সিটি বাস বা লোকাল বাসে চলাচল করি। গল্প পড়তে পড়তে মনে হলো, আমি মোটা লোকটি, সব শুনছি, দেখছি কিন্তু কিছুই বলছি না। অচল পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থাকে…. দেখানো, এ গল্পে খুব সুন্দরভাবে তোলে ধরা হয়েছে।
লেখকের জন্য অফুরান ভালোবাসা।