ছোটগল্প //বড় বউ// তারেক হাসান

খুব ধুমধামে বিয়ে হলো ফজু মিয়ার। সাত বছর প্রেম করে অবশেষে ঘরে তুললেন প্রেমিকা মর্জিনাকে বউয়ের মর্যদা দিয়ে। বাসর রাত ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিলো ফজু মিয়া। খুব খাটাখাটুনির শরীর তো… বউ সারারাত জেগে ছিলো স্বামীর অপেক্ষায়। কিন্তু ফজু মিয়া ঘুমে অচেতন, ভুলেই গেছে সে আজ নতুন বিয়ে করেছে, বউকে কিছু বলতে হবে, চুম্বনে শিহরণ জাগাতে হবে কামুক দেহে, অন্তবিলাসে হারিয়ে যেতে হবে দুজন দুজনার মাঝে। স্বামীর এমন ঘুমে সব ভেস্তে গেছে, মর্জিনার সাত বছরের সাজানো স্বপ্নের বাসর। কিছুই করার ছিলোনা মর্জিনার, স্বামীর ঘুম ভেঙে গেলে যদি কষ্ট পায় সেই ভয়ে।কিন্তু এইদিন কি আর কখনো আসবে মর্জিনার জীবনে? আসবেনা তাই স্বামীর অপেক্ষায় থেকে থেকে চোখের জল বিসর্জন দিয়েছে বাসর রাতের প্রাপ্তি হিসেবে। ভোর হয়ে যায় নানান কিছু ভাবতে।বাড়ীর সবাই জেগে উঠেছে। কি করবে মর্জিনা ভেবে পাচ্ছেনা…
লোকে কিছু যেনো না বুঝতে পারে, সেই জন্য তোয়ালে হাতে ঢুকে পড়ে বাথরুমে, ফ্রেশ হয়ে আসে, এসে দেখে ফজু মিয়া এখনো ঘুমাচ্ছে। ভেজা চুলের দু’ফোটা জল ছুৎ করে ফজু মিয়ার মুখের উপর পড়ে। আর ওমনি ঘুম ভেঙে যায় তার। চোখ খুলেই দেখতে পায় মর্জিনাকে ভেজা চুলে।
-একি ভোর হয়ে গেছে নাকি?
-না জনাব মাত্র সন্ধ্যা হলো। আর একটু ঘুমিয়ে নেন।
তখন ফজু মিয়া বুঝতে পারে রাতটা তার ঘুমিয়েই গেছে। হয়তো অপেক্ষায় ছিলো মর্জিনা সারারাত।ভাবতে থাকে আর নিজেকে অপরাধী মনে করে।কারণ সাত বছরের প্রেমে আজ তাদের ঘর বাধা, এই একটি রাতের জন্য সাত বছর স্বপ্ন দেখেছে মর্জিনা। এখন তো আর কিছু করার নেই। তাই মর্জিনার অভিমান ভাঙাতে জড়িয়ে ধরে দুই গালে কষে দেয় চুম্বন। ফিক করে হেসে উঠে মর্জিনা।
-ছাড়ো ছাড়ো, লোকে দেখলে কি বলবে।
যাই হোক পরবর্তীতে কেটে গেলো কয়েক বছর তাদের ঘরে এখন তিনটি সন্তান। সংসার জীবন তাদের সুখেই কাটছে। হঠাৎ ফজু মিয়া চিন্তা করে শহরে কোন একটা ব্যবসা করার জন্য। একদিন রাতে মর্জিনার সাথে শেয়ার করলো…
-বউ আর কতদিন কৃষিকাজ করবো? এখন তো আমাদের সংসার ভালোই চলছে। বেশ কিছু এখন জমা হয়েছে।
-আপনি যা ভালো মনে করেন!
-আরে বলে কি? এ সংসার তো আমার একার না, তুমিই তো সবসময় পাশে থেকে আমাকে সাহায্যে করেছো।
-হুম…তবে আমার ভয় হয়!
-ভয় কিসের?
-যে লোকের বাসর ঘরে যে নতুন বউ আছে, সেটাই ভুলে যায়, আবার শহরে গিয়ে কি আমারেই ভুলে যায় কিনা!
-আরে পাগলী-আমার প্রতি তোমার বিশ্বাস নেই, আমি কি কখনো এমন করতে পারি?
-কি জানি…শুনেছি শহরে গেলে নাকি মানুষ বদলে যায়।
-না রে বউ তোকে কি ভুলতে পারি!
-হুম রাখো তোমার ন্যাকামি, চলো এখন ঘুমাবো।
তারা ঘুমিয়ে পড়লো, পরদিন সকালে ফজু মিয়া যায় শহরে, কিন্তু চিন্তায় পড়ে গেলো কি ব্যবসা করবে? তার এক বন্ধুর কাছে বুদ্ধি জানতে চাইলো। বন্ধু বুদ্ধি দিলো-
– যেহেতু তোর বাবায় চাউলের ব্যবসা করতো, তুই মাঝেমাঝে তুই ও তো হাটে যেতি। আমার মনে হয় সেটাই তোর জন্য ভালো হবে।
-ঠিক বলেছিস বন্ধু, তো কিভাবে শুরু করবো।
-গ্রামে তো তোর অনেক জায়গা জমি, ধান ও ভালোই হয়। আমার মনে হয় এখানে কোথাও একটা জায়গা কিনে। একটা ছোট করে রাইছ মিল দে।
-শহরে জায়গা কিনলে ব্যবসার টাকা কোথায় পাবো?
-আরে বন্ধু এখানে জায়গার দাম বেশি না।
-কত লাগবে?
-অল্পতেই হয়ে যাবে।
-আচ্ছা
ফজু মিয়া তার বন্ধু মিলে জমি কিনার কাজ শেষ করলো। কিছুদিনের মধ্যে রাইছ মিল চালু করলো। ব্যবসা ভালো চলছে… কিছুদিন পর সেখানে নিজস্ব একটা বাসা ও করে ফেললো।প্রতি সপ্তাহেই বাড়ি আসে মর্জিনাকে ভালোবাসার কমতি নেই।
হঠাৎ ফজু মিয়া বাড়ি আসা কমিয়ে দিলো।কারণ সেখানের এক স্থানীয় মেয়ে নাহারের সাথে গড়ে উঠে নতুন প্রেমের সম্পর্ক। একদিন হাতেনাতে ধরা খেয়ে যায় স্থানীয় লোকের কাছে। ডাকে কাজী বিয়ে দিলো ফজু আর নাহারের। মর্জিনার স্বপ্ন ভাঙার ঝড় উঠে, কিন্তু কিছুই করার নেই, নিজের সন্তানদের কোথায় ভাসাবে। সন্তানদের দিকে চেয়ে সবকিছু হজম করতে লাগলো। আর ফজু মিয়া বাড়ীর যত সম্পদ ছিলো সেগুলো বিক্রি করে জমা করতে লাগলো ছোট বউয়ের কাছে। মর্জিনা একদিন শুধু ফজু মিয়াকে বললো -আপনি যদি ভালো থাকেন, আমার কোন আপত্তি নেই, কারণ আমি আপনাকে অনেক বেশি ভালোবাসি। কিন্তু আমার তিনটা সন্তান কে আপনি ঠকায়েন না। সেদিন ফজু মিয়া কিছু বলেনি।
নাহারের ঘরের দুই সন্তান, তারা বড় হতে থাকে আর নাহার শুরু করে নতুন করে পরকিয়া। আর ফন্দি আটতে থাকে ফজু মিয়ার সমস্ত সম্পদ তার দুই সন্তানের নামে লিখে নিতে। এক সময় সফল হয়ে যায় নাহার। ব্যবসা বাণিজ্য নাহারের সন্তানদের কবজায় চলে আসে। শহরের সমস্ত কিছু লিখে নেয় ফজু মিয়ার কাছ থেকে। এখন ফজু মিয়ার সামনেই নাহার তার প্রেমিকের সাথে কথা বলে। একদিন ফজু মিয়া তার প্রতিবাদ করলে, সাথে সাথে ডিভোর্স দিয়ে দেয় ফজু মিয়াকে। এবং সেই বাড়ি থেকেও বের করে দেয়।
অবশেষে বাধ্য হয়েই আবার চলে আসে গ্রামে বড় বউ মর্জিনার কাছে, কিন্তু সবকিছু হারিয়ে।
বুঝাতে থাকে ফজু মিয়াকে মর্জিনা, আপনাকে সত্যিই আমি অনেক বেশি ভালোবাসি। পরের বাড়িতে কাজ করে হলেও আমার সন্তানদের মানুষ করবো…কিন্তু আমি আপনাকে আর দ্বিতীয়বার হারাতে চাইনা।আপনার কোন অপরাধ নেই…আমি আপনার উপর খুশি আছি…আমরা দুজনে চেষ্টা করলে অনেক কিছুই করতে পারবো…ফিরাতে পারে উপর ওয়ালা আমাদের সুখের দিনগুলো…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *