ঈদসংখ্যার কবিতা।। আহমেদ শিপলু
মারচুয়ারি থেকে পাঠানো যে বার্তা
প্রতিটি দুঃখের একজন বা একাধিক জনক
থাকে, সুতরাং ব্যাপারখানা দুঃখজনক!
এমনটা বলে বলে তব্ধা খাওয়া রাজপথ।
আরও পিনপতনে জনতা। হঠাৎ খবর এলো!
রোগীর অভাবে হাসপাতালকে মুমূর্ষু
অবস্থায় ভর্তি করানো হয় রোগীনীর
পিত্রালয়ে। সেখানে এক প্রাচীন বটবৃক্ষের
ছায়ায় তাকে পর্যাপ্ত আক্সিজেনের
ব্যবস্থা ও নিবিড় পরিচর্যায় রাখা
হয়েছে। সুতরাং এম্বুলেন্সের চিৎকার ও
শোরগোল থেকে নগরালয়ের কর্ণ বিদীর্ণ
হবার আশংকামুক্ত এখন। ধবল
এপ্রনবালিকা এখন বরষা যাপনে যাবেন
ছুটির দরখাস্ত ছাড়াই। কোনোরূপ
ডায়াগনোসিস ব্যতীত শাপলাবিলে নেমে
পড়া, সারাদিন বাগান, ঝোপঝাড়, মাঠ-
প্রান্তর দাপিয়ে পান করা যেতে যেতে
পারে কাগজীলেবুর শরবত।
খেলার মাঠকে ভেন্টিলেশনে পাঠানো
বুদ্ধিমৃতদের জন্য খোড়া হবে মাটি, সেখানে
তারা ভয়ে জড়সড় হবার আগেই হাতে হাতে
বিলি হবে ফলদবৃক্ষের চারা। বৃক্ষরোপন
ছাড়া মুমূর্ষু হাসপাতালকে মারচুয়ারিতে
পাঠানো সম্ভব হবে কেন! কেন সৎকার
হীন পড়ে রবে খাদ্যে ভ্যাজালকারীর জীবিত
লাশ!
দূরত্ব। চেয়ার। মানবস্ত।
দূরত্ব। যতো বাড়ে। দৃশ্য ছোটো হয়
ক্রমশ। তুমি চেনো না তোমাকে, আমিও না।
আমি চিনি না আমাকে, তুমিও না। মাঝখানে
মধ্যরেখা। চেয়ার। টেবিল। ডাক নাম ভুলে
গেছে কেউকেটা। টাইয়ের ডগায় ঝুলন্ত
সাইনবোর্ড।
বাসের হাতল ছেড়ে দিলে বাস চলে যাবে।
গন্তব্য। পৌঁছে দেবে লাশবাহী শীতাতপ।
ট্রাফিকের সিগন্যাল নমনীয়। চাইলে
চুকিয়ে ফেলা যায়। পারি না। সাহস হারাচ্ছে
রাস্তাগুলো। গলি উপগলি পোঁছে যায়
গন্তব্যে। নদী দূষণ শেষ করে ভাষাকে ধরা
হলো। ভাষা কি নদী? রুচিদূষণ হলে ক্লাউন
হিরো হয়। যেহেতু মানবকূল অস্ত গেছে।
সম্মিলিত সহমরণের ডাক এসে
যাক। ফুল বিক্রি হবে খুব। ভোরের ধোঁয়াটে
বাজার সরগরম। উপচে পড়া শ্রদ্ধা
নিবেদন। উপর্যুপরি পুষ্প অর্পণ। তারপর
লোভ দিবস পালন করা যেতে পারে।
পুঁজিবাদের কেরানি ও কর্তা।
ইয়েস স্যার! সূর্য পশ্চিমেই ওঠে।
সরি স্যার! সূর্য ওঠেই না কখনো।
ইয়েস স্যার! সূর্য বলে কেউ ছিলোই না।
সরি স্যার! সূর্য আপনার এলসেশিয়ান।
ইয়েস স্যার! আপনি ডাকলেই সে ওঠে।
সরি স্যার!
বিভ্রম | পর্দা | বৃষ্টিতে রিকশায়
বিস্ময় ঢুকে গেলো পর্দা তুলে। চমক এবং
চকমকি ধুম। সরগরম মেলা ও মার্কেট।
বিপননের ধন্দে বিপন্নতা ঘিরে আসে।
ক্রমশ হারাচ্ছে জুতো ও রাস্তা। পাগুলো
পারলারে পারলারে সৌন্দর্যের খোঁজে।
ক্লিভেজ বরাবর ডুবে গেছে পম্পেই। অন্ধ
মেয়েটা রোজ বাড়ি ফেরে কি না ভাবা যেতে
পারে। আমি অন্ধ হলে দাড়ি কামাবো কি না
তা ভাবছিলাম। কেন যে দাড়ি কামাই! কার
জন্যে? কেন? সদুত্তরহীন আতঙ্কিত
রাত। মানুষ নিজেকে অন্ধ ভাবতে পারে না,
এমনকি মরে
যাওয়ার কথাও। ডেড বডি সবসময় অন্যের,
ওটা নিজেকে নিয়ে ভাবার নয় কোনো মতেই।
পর্দা নেমে গেলে দর্শকের ফেরার নির্দেশ
অথবা অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহে বাতি জ্বলে
উঠলে। যাবো না কেন তবে? কে ওখানে?
মঞ্চায়ন হচ্ছো? ক্লাউনেরও ক্লান্তি
থাকে, তোমাদের এতো এনার্জি! কোনো
পরীক্ষাই মানবিক নয়, কোনো
প্রতিযোগিতাও। প্রবন্ধে মিথ্যা বলা যায়,
জানোতো কবিতায় ওসব আসে না। তবে কেন
হাত পেতে আছো সার্কাসের মাঠে! ওপরে
দেখো বালিকার ঝুলনি, বিপন্ন-বিস্ময়ের
ঘোর তোমাকে নিয়ে যাবে উদ্যানের বাইরে।
ওখানে রোদ আর রাখালের খেলা জমে। হাত
নামাও, লজ্জিত হও, বৃষ্টি নামুক। রিকশায়
হুড আর পর্দা তুলে যুগল উত্তাপের
বিস্মিত যাত্রায় পানি জমুক, খোলা থাক
ঢাকনা, ম্যানহোল যেহেতু নিষ্কাশনের
দায়িত্বে।