কবিতা

সাদিয়া সুলতানা বিভা’র কবিতা

তোমায় খুঁজি

নিস্তব্ধ একাকী গভীর রাতে,
চাঁদের নিয়নে গা মাখিয়ে ভাসি।
হঠাৎ হৃদয়ের আঙিনায় আনমনে,
খুব গোপনে আঁকতে থাকি তোমার
মাতাল হাসি।

আমার ক্লান্ত বিকেলে পরম হেলায়,
অবসরকে ঘিরে খানিকটা তোমায় ভাবি।
ভাবনার অবচেতন ঘোরে বিভোর হয়ে,
অস্পষ্ট বর্ণনায় শুধু মিছে কাব্য লিখি।

ব্যস্ত এ প্রকৃতি পাড়ি দিয়ে,
অবসরে এক চুমুক চায়ে যে অনুভূতি পাই।
আমার সমস্ত অনুভূতি কে ঘিরে,
স্বর্গীয় সময় আমি তোমার সাথেই
পার করতে তোমাকে চাই।

অজান্তে অকারণে মায়াবী হাসি দেখি,
তোমার অভিমান, হাসির অস্পষ্ট মানে
আমি বুঝি।
তাইতো আমার প্রতিটি ক্ষণে ক্ষণে,
ওহে নীলাঞ্জনা আমি শুধু তোমায় খুঁজি।

চিরসাথী অভিযাত্রী

আমার স্মরণে তোমার সিঁদুর
আমারো মরণে তোমারই মায়ায় অশ্রু।

আমার স্মরণে তোমার পদত্যাগ
আমারো জীবনে তোমারই শেষযাত্রার প্রাণ।
তোমার প্রিয় ধূসর নীল আমার প্রিয় গোলাপী
শঙ্খচিল,

আজ ধূসর কি রঙিন
পথ হারায় তোমাতে শব্দহীন।
দিকে দিকে করো পার
আমার এই তিক্ততার সব করা স্বভাব।

হয় তো দেখা হবে এক অন্তঃজ্বালের শেষে
হয় তো নাও হতে পারে
শেষ দেখা নতুন কোনো দেশেই।

কাগজের মলাটের উপন্যাসের চিত্ররূপ,
শহরের গলিতে আঁকা চিরসুখ!!
আচ্ছাদন আর জীবনরূপ

সেই নিসর্গ স্থপতির স্বপ্ন প্রেম নকশা
রয়ে যাবে এই সর্বক্ষণে, লিখা হবে
নতুন দেশের তারাতেই ।

সুখটান

আমিও সুখটান দিই—
বেদনার নীল সায়রে আমিও নৌকা নিয়ে ভাসি,
খানিকবাদে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে,
নৌকা নিয়ে কিনারায় ফিরে আসি—

স্থলে এসে তখন সুখের লাগি—
এদিক সেদিক চষে বেড়াই—
হায়, সুখ যে নাই, কোথায় তারে পাই?
খানিকবাদে মনকে বলি, শান্ত হ বাছা শান্ত হ।
তুই যদি এমন উতলা হস, আমি কোথায় যাই?

তাকে বলি—
মন আমার, ওরে মন, একবার মন দিয়ে শোন
তুই যদি এমন করিস আমি কোথায় যাই?
তুই আর আমি চল নির্বাসনে যাই।

আমার কথায় সায় দিয়ে বলে মনে—
তবে যাওয়া যাক নির্বাসনে।
তোর সুখটান নামক সেই পরিচিত গান গুলোর
হৃদয় স্পর্শী সুরের টানগুলোও সাথে নিস।
তবে আমিও আর উতলা হবোনা দেখিস!

প্রকৃতি

বিষন্ন পৃথিবীতে দহনের তীব্রতা
ক্লান্ত দুপুরে তপ্ত বাতাসে ফিসফাঁস
যেন এক মন খারাপের চৈত্র মাস
গুজবের ছড়াছড়ি ভাঙে নিরবতা!
অনাকাঙ্ক্ষিত গ্রীষ্মের আগমনী বার্তা
টেলিপ্যাথি যোগে উদয় হয় মানসে,
ক্ষুধার্ত শকুন ঠোক্কর খায় কর্টেক্সে;
চারপাশে কেমন বাড়তি বিহ্বলতা!

অপ্রত্যাশিত সব আবেগের প্রাচুর্য
ভেঙেছে আজ যত শাসনের শৃঙ্খল;
বিবেকের বন্দীশালায় রুদ্ধ আবেগ
নিয়েছে তুলি এক বেখাপ্পা রণতূর্য।
চেতনা হয়ে গেছে স্যাতস্যাতে,গাড়ল!
এবারে চাই আষাঢ়ে বর্ষণের বেগ।

বসন্ত বিকেল

মনে পড়ে, সেই বিকেল?
সেই বসন্ত বিকেল?
বাতাসে ভাসা সেই না জানা কিসের
মাতাল সুবাস,
হয়ত ফুলের কিংবা
হয়ত তোমার খোলা চুলের!
মনে পড়ে, আকাশে ওড়া
সেই কতশত রঙিন ঘুড়ি,
লাল-সাদা, বেগুনি-নীল!
পড়ন্ত বিকেলের আভা ছিল
তোমার মুখে
আর চোখে ছিল তীব্র আনন্দ
আর এক অজানা আবেশ।
মনে পড়ে সেই কোলাহল?
কি এক উৎসব ছিল সেই বিকেলে।
চারিপাশে আনন্দের স্পন্দন?
তুমি শুনছিলে সেই জীবনের কল্লোল
আর আমি দেখছিলাম তোমায়।
তবু জানি না কখন, কিভাবে
এক হল দুটি তৃষ্ণার্ত ঠোঁট
কিভাবে কপাল ছুঁলো কপাল
হাত জড়ালো হাতে,আর
এক হলো শ্বাস প্রশ্বাস,
মিলে গেল হৃদস্পন্দন।
জানি না
জানি না
শুধু এটুকু জানি
সে ছিল এক পড়ন্ত মাতাল বসন্ত বিকেল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *