কবিতা

মজিদ মাহমুদ-এর বর্ষার কবিতা


বরষা মেয়ের নাম


বৃষ্টিতে ফোটে যে ফুল-সবগুলো নাম
কদম জারুল জুঁই শেফালি বকুল
মালতিকা ফুটেছিল তোমার বেণীতে
বর্ষা এসেছিল কাল-সেই ফুল নিতে
বর্ষা এসেছিল কাল-রাতের আঁধার
ঘুম তার ভেঙে গেল নদীর আহব্বান
দুকুল ভাসিয়ে নিল জলের ভেতর
কহ না মাধব তুহ-আমি কি যে তোর
গান গায়, তরী বায়–কেন আসে কূলে
আমি তো ছিলাম সখী-বনমালি ভুলে
সইসব, নয় শব মেঘ ডাকে আয়
জলের গহীনে তারা খেলিছে ঝাঁপাই
কোথায় গিয়েছে চলে আমাদের বর্ষা
বৃষ্টি-প্রসবে মেঘ-মা হয়েছে বিগতা
এ বাড়ি ও বাড়ি করে আমার বকুল
যেখানে পাই না কেন-ধরে তার চুল
নিয়ে যাব দেখি কোন বাপের ছাওয়াল
ঠেকায় ঠেকাক দেখি বৃষ্টির কামুক
সাগর শাশুড়ি মাতা-আমি কি ডরাই
বরষা মেয়ের নাম রেখেছি থোড়াই!
শ্রাবণে এসেছে মেয়ে নাম যে শ্রাবণী
নিরস দুপুর ধরে তার গান শুনি
অঝোর ঝরেছে মেয়ে নয়নের বারি
পুরুষ মানুষ-নাহি উপেক্ষিতে পারি
বাদলে গিয়েছে ডুবি একখানি ঘর
অবিরাম বারিপাত নীল নীলাম্বর
বাদলের কন্যা ঠিক বড় অসহায়
বুকের গহীনে দিই বরষাকে ঠাঁই

বৃষ্টি


ধান লাগাতে- ধান কাটতে আজ বৃষ্টির প্রয়োজন নেই
বৃষ্টি- বৃষ্টির জায়গায় বর্ষিত হোক
খাল ভরুক কিংবা নদী
আমাদের আফিসের রাস্তাগুলো কেন করে থাকে দখল
আমাদের কেন বলতে হয়-পৌর মেয়রগণ-
আপনার স্ত্রীদের একটি কলস দিলে-পাবেন বৃষ্টির মন
বৃষ্টি ছাড়াও আমরা নৌকা চালাতে পারি বাঁশের গেটে
ধান না ফললেও নিতে পারি চেটে
বৃষ্টির রোমান্টিক আকুতিগুলি যক্ষের কামনার ফল
বৃষ্টিতে স্নান করেছিলেন রবিবাবুর দয়মন্তী নল
এই বৃষ্টি বাংলার নারীদের প্রণয় চেতনা
এই বৃষ্টি ছাড়া তারা দিনে স্বামীদের পেত না
অথচ দেখ আজ এই বৃষ্টিতে বিশটি বালিকা
আফিসের পথে কাকভেজা নব্য মালবিকা
এখনো বৃষ্টি এলে সাহিত্য সম্পাদকগণ
সখের কবিতা ছাপেন কয়েক টন
একটি ক্রোড়পত্র নিয়ে দলবদ্ধ শিশুদের সাথে
বৃষ্টির কবিতার রূপকল্পে মাতে
আরে বাবা কবি তো ছিলেন একখান জীবনানন্দ
তাকে তো পারেনি ছুঁতে বৃষ্টির লাবণ্য-আনন্দ
তবু সুখে থাক আমাদের পাড়ার বৃষ্টি
সারারাত বৃষ্টিতে ভিজে করুক সৃষ্টি

অবিরাম ধারা


ব্যাথাটা একটু কোথাও বেশিই লেগেছে
গতরাতেও ঘুমাতে পারেনি
এত পানি কোথায় ছিল তার চোখে
কাঁদতে কাঁদতে নদী
সমুদ্র থেকে আবার লবণাক্ত জল
আকাশ এখন কি-ই-বা সান্ত্বনা দেবে তাকে
এ মেয়ে কি কোনো দিন বাঁধবে না ঘর
গ্রীস্মে কথা দিয়ে চলে গেছে কেউ এক পর
এখন ঈষৎ মেঘের স্পর্শ পেলেও কাঁদে
পিতারাও রয়েছে আজ তার শিয়রে বসে

ছোটভাই বোনটাও ইশকুলে যায় নাই
মা কেবল ত্বরিৎ খিচুড়ি রেঁধেছে
যদিও সে জানে-
মেয়েদেরও থাকে কান্নার সময়
তারাই তো যাবে মায়া থেকে মায়ায়
পথঘাট যদিও শুকিয়ে যাবে একদিন
পৌর মেয়রগণের ফিরে আসবে স্বস্ত্বি
কিন্তু এই বৃষ্টি যার হৃদয় কেড়েছে
এই বৃষ্টি কিছুতেই ফিরবে না শীতে
তবু এই কান্না কোনো এক কবির
হৃদয় ছুঁয়েছে..

মৃত্যুর দিনে বৃষ্টি


আমি যেদিন মরে যাব
সেদিন যদি বৃষ্টি থাকে
কয়েক পশলা হয় থেকে থেকে
রোদ হবে বৃষ্টি হবে
শিশুরা ছড়া কাটবে-
রোদ হয় বৃষ্টি হয়..
ভেজা বকুল ছড়াবে মৃদু সুবাস
গাছ তলায় থাকবে শিউলির স্তূপ
বৈঠকখানায় জড়ো হবে
পড়ার লোক
কেউ ঝাড় থেকে কেটবে বাঁশ
কেউ বলবে পানি হালকা গরম হলে
প্রতিবেশিরা পাঠাবে
খিঁচুড়ি আর ইলিশ
হাতে নিয়ে খাবে কেউ
অন্দরে মেয়েদের চাপা কান্না
ভেসে আসবে মৃদু গুঞ্জন
গভীর উচ্চারণের সুর
হালকা লোবানের ঘ্রাণ
আহা এমন উৎসবের দিনে
মরতে কার না ভালো লাগে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *