শিশুতেঅষগল্প ।। মহাচিন্তক দুধবিড়াল।। শাম্মী তুলতুল
বিড়ালটার রঙ ধপধপে সাদা। একেবারে দুধ সাদা। তাই কর্তা তার নাম রেখেছে দুধবিড়াল। জন্ম থেকেই তার কর্তা তাকে কোলে পিঠে বড় করেন। দুধবিড়াল সব সময় ঘরের সামনে বসে থাকে। আর একটু পর পর মিয়াও মিয়াও বলে ডাকে। এমন কারো সাধ্য নেই তার চোখ ফাঁকি দিয়ে তার মালিকের ঘরে কেউ ঢোকে। বিশেষ করে ইঁদুর জাতের সঙ্গে তার যত দন্ধ। মালিক তাকে অনেক অনেক আদর করেন। তাকে সব সুযোগ সুবিধা দেন। মালিক নিজের বাচ্চার জন্য যা করেন, বিড়ালছানাটির জন্যও তাই করেন। যেন মালিকের দ্বিতীয় বাচ্চা। দুধবিড়াল বলে ডাক দিলে সে দৌড়ে এসে চারপাশ ঘুরঘুর করে। কোলে উঠে আদর করে। কোন কিছুতে কমতি নেই তার। এমন একটা আরাম আয়েসের ঘরে সে কি চাইবে আর কেউ ভাগ বসাক? কখনো না।
একদিন বিড়ালছানাটি চুকচুক করে দুধ খেতে লাগলো। তার মালিকের বাড়ির সামনে অনেক ছোট- বড় গর্ত আছে। মাঝে মধ্যে ইঁদুররা সেখানে আশ্রয় নেয়। কিন্তু একটা পুঁচকে ইঁদুর প্রায় সেখানে লুকিয়ে থাকে।কোন সময় সে ঘরে ডুকে আস্তানা গড়ে তোলে এই ভেবে দুধবিড়াল মহাদুশ্চিন্তায় পড়ে গেল।একদিন দেখে ইঁদুরছানা উঁকিঝুঁকি মারছে গর্ত থেকে।বিড়াল তখন রেগে দৌড়ে যায় ইঁদুরের গর্তে। একটু পর ছোট্ট চোখ দুটো বড় করে এদিক ওদিক তাকায়। দেখল কেউ নেই চারপাশে। এমনিতেই বিড়ালের ভয়ে ইঁদুরদের মর মর অবস্থা। তার ওপর শত্রুকে এতো কাছে দেখতে পেয়ে প্রাণ যায় যায় ইঁদুর ছানাটার। যেই না ইঁদুরের নড়াচড়া দেখল সে গপ করে ইঁদুর ছানার লেজে কামড় বসিয়ে দিল।
ইঁদুর বেঁচেরা ব্যথা পেয়ে দিলো ভোঁ দৌড়। পেছন পেছন ছুটল দুধবিড়ালও।ইঁদুর খেতে না পেড়ে দুধবিড়ালের মাথা নষ্ট। রেগে তার মুখের গোঁফগুলো আঁকিয়ে বাকিয়ে মিয়াও মিয়াও ডাকে। ছুটতে ছুটতে ইঁদুর তার যত শক্তি আছে তা দিয়ে দৌড়ে একটা তাল গাছের ওপর উঠে পরল।দুধবিড়াল এবার একটু ভয় পেয়ে গেলো। বাঘের মাসী বলা হয় বিড়ালকে। দেখতে অনেকটা বাঘ বাঘ মনে হয়। এতক্ষণে তার বাঘের মতো ভয়ঙ্কর চেহরাটা একটু নরম হলো। সে ধীরে ধীরে যখন তাল গাছের নীচ থেকে সরতে লাগল, ঠিক তখনই ধূপ করে ইঁদুরছানা তার গায়ে ফেলল একটা তাল। ব্যথা পেয়ে কাতরাতে লাগলো দুধবিড়াল।
ইঁদুর তখন লেজ নাড়িয়ে বলে, “এইবার খাদক বেটা, বুঝবি আমায় খাওয়ার মজা” ।করুণ স্বরে মিয়াও মিয়াও বলে মাটিতে লুটিয়ে পরল দুধবিড়াল। উপাই না দেখে কাঁদতে কাঁদতে দুধবিড়াল ঘরের দিকে রওয়ানা দিলো।