আজিজ কাজল-এর কবিতা
আজিজ কাজল-এর কবিতা
সোনারোদ
মাঝে মাঝে অশোক, আরো-পালার দেরাজে টোকা মেরে ফেলে আসি
সিন্ধু পাড়ের কতো সহস্র ঘরবাড়ি—নসুলিমার বাড়ির ভেতর ঘাসলতা বন;
ক’দিন আগেও পাওয়া গেলো অজস্র সোনাপাতি, তামাটে মুদ্রার ঘট
আলগা পুঁতির নোলক, ঘসেটিপাতা লেগে আছে তোমার পাললিক বুকে।
আমিও নতুন করে ছড়াই ধান। বড়ো-বাড়ির ওঠোন জুড়ে
প্রতিদিন বুলবুলি, ময়না পাখিটি আসবে; তাদের রোদ-পালকে সবাক হবে
রেনু-বাড়ির পোনা পোনা সোনালুরা।
ম্রো পাখি
বন পাতার খোল থেকে একটু আগেই ঝরে পড়লো ম্রো পাখি
তার বাঁশি ও ঢোলের লম্বা পিচ্ছিল শরীর, রক্তময়;
উর্দ্ধবাহু-মুখ ও মুখোশ থেকে ঝরছে ঘৃণার কর্কট বিষ।
অরণ্যের ভাঁজে গড়া নিখুঁত সরল শরীর
আছে ব্যূহ—ঝরণা-ঝরোকা বাঁশ ও শন,
আছে মায়া—ঝরণা-ঝরোকা শন ও বাঁশ।
এই অপ্রতিরোধ্য সবুজ ইকো-শরীরে লেগেছে
ডোরা-ভাঙা ডাঙর মশা ও লাল আঁঠালি।
ছায়া দীঘল পাঠ
ওমপাড়ায় আমার চাচা বাড়ি; তাদের উঠোন-অন্ধকারে
প্রতিদিন একটি রাজহাঁস এসে কিসের সোনালু ডিম পেড়ে
যায়—ছন্দমাখা পায়ের ডাঙুলি ঘুরিয়ে পাখির উল্লাসে সেই-যে লাফ!
তখনই বুঝতে পেরেছি শুধু মানুষ বলে কথা নয়;
এই পৃথিবীর এমন সম্ভাবনা ঐশ্বর্যের পেছনে
পশু আর পাখিপ্রবরের দারুণ অবদান আছে;
আছে ইকো-ধ্বনি বস্তুবিদ্যা
কিভাবে ঘোরাও কনুই-বাঁক?
চোখের নজরে মুছে ফেলো এই সব সহযাত্রী কূল, শাশ্বত পায়ের চিহ্ন!
নাগর বৃশ্চিক
এসব কাহিনি আমি আগেও শুনেছি আর বলো না, সন্ধ্যালগনে
এ-পাড়ায় ভূত আসে বা আগের মতো প্রতিদিন শেয়ালের হুক্কা-ডাক তোমার পথ ডিঙায়
সামান্য পোড়ালঙ্কা আর লাল মরিচের ঝাঁজে
প্রতিদিন যেভাবে সন্ধ্যা নামতো—
এই রসুইঘরে পারবে কি ধরতে সেই প্রকৃত সাহসের
কিছু লাগাম?
কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে হঠাৎ বেগানা-বাতাস
সুগন্ধে রৌদ্রজ্বলা—আহা! বেশতো, ভারি আয়োজন;
শুধু টেস্ট গুলিয়ে ফেলছো—বুঝতে পারছো না তুমি আসলে কী খেলে?
সবকিছুর মজা আজ তোমার কাছে এলেবেলে।
মার্চ জাগুয়ার
চোখের তূণ থেকে বর্ষা বর্ষা নরম বৃষ্টি নয়
মাঝে মাঝে নেমেছিলো আগুন বর্শাও;
তুমুল বাগ্মিতায় আম-জনতার হাতে হাতে তুলে দিয়েছিলে রণ-শিঙা—
প্রিয় শস্য শ্যামলার নতুন খসড়া।