কবিতা।। কানিজ পারিজাত।। ফেব্রুয়ারি কবিতা উৎসব সংখ্যা
স্মৃতির ইথানল
ফোনবুথগুলো অচল;
ডাকবাক্সগুলোয় মরিচা;
ইথারে নেই চেনা কম্পন;
ফিকে হয়ে আসে ঘ্রাণ;
ক্ষয়ে গেছে আয়না—
মনের আয়না;
ধূসর কাচে ঝাপসা তোমার মুখ—
অস্পষ্ট অবয়ব;
ইথানল খুঁজে ফিরি—
স্মৃতির ইথানল;
কাচ ঘষে দেখবো তোমায়
স্পষ্ট— আগের মতো!
মগ্নচৈতন্যে নগ্ন সাপ
স্বপ্ন— অদ্ভুত এক স্বপ্ন
উষ্ণ— গাঢ় অনুভূতিমাখা
কোনো এক স্বপ্ন-ঋষি
হাত রেখেছে খোলা পিঠে—
মানবীর মসৃন-মোম পিঠে
যেনো খোলা চাতালে
গড়িয়ে যাচ্ছে ফুল—
হলুদ হলুদ বুনো ফুল!
তারা তাকিয়ে থাকে পরস্পর
স্পর্শহীন সময়ের কণায় কণায়
ডুবে ডুবে ভিজে ভিজে
তারা তাকিয়েই থাকে
স্ফটিক স্বচ্ছ চোখে!
মুহূর্ত ক্ষয়ে যায় অক্ষয় আবেশে
বুনো আবেশ— মগ্নচৈতন্যে
মগ্ন ঋষি— মগ্ন মানবী—
খোলা পিঠে খেলছে হাত
মগ্নচৈতন্যে নগ্ন সাপ!
ক্যারামেল
সীমানা প্রাচীর নিয়ে আমরা কোনো যুদ্ধে লিপ্ত হইনি;
বংশপরম্পরায় কোনো হিংসাও ছিলনা আমাদের;
তুমি ঠগী নও—
আমিও নই ঠ্যাঙাড়ে;
তবু আমাদের দ্বন্দ্ব হলো—
ঘোর দ্বন্দ্ব!
আমরা দিলাম আড়ি—
ভীষণ আড়ি!
আমাদের সরস অনুভূতির মিষ্টি প্রলেপ
পুড়ে পুড়ে ক্যারামেল হয়ে গেল—
শক্ত আর তেতো !
জলমানুষের অপেক্ষায়
যেখানে সময় এসে থমকে আছে বহুকাল;
যেখানে বুলবুলি উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে
শুনিয়ে গেছে বাতাসের শিস;
যেখানে ধূসর কাকতাড়ুয়া সোনালি গম ক্ষেতে দাঁড়িয়ে
বুনে যায় স্বপ্নের বীজ;
যেখানে একাকী ডাহুক কেঁদে কেঁদে
শুনিয়ে গেছে তমসা বিলাপ;
সেইখানে— দাঁড়িয়ে আছি একা—
নি:সঙ্গ দেবদারুর মতো!
দূরে দিগন্ত ছুঁয়ে হেঁটে আসবে কেউ;
গায়ে যার সমুদ্র-ঘ্রাণ;
চোখে বনপলাশের কাব্য;
অমৃতক্ষরা কণ্ঠে যে ডাক দিলেই
ঘন হয়ে আসে ফুল-পাখি-পাহাড়!
তামাটে বুকে নাগকেশরের ঘ্রাণ মেখে
যে হেঁটে আসে ধীরে—
জলছাপ এঁকে এঁকে!
দাঁড়িয়ে আছি— বহুকাল;
শরীরে জমেছে নুড়ি— বালি— কাঁকর— সময়ের প্রলেপ;
কাঁকইবিহীন চুল— যেন ডুবে যাওয়া জাহাজের ছেঁড়া পাল;
মলিন চোখ— যেন বিষন্ন ঘুঘুর ধূসরতা !
দৃষ্টি স্হির—
দূরে সফেদ মোহনায় ঢেউ এসে এসে
পাড় ভেঙে দেয় যেখানে;
সেখানেই জলের তলা থেকে উঠে আসবে মানুষ—
জলমানুষ— সোনার মানুষ!
দাঁড়িয়ে আছি— জলমানুষের অপেক্ষায়;
অপেক্ষার শেকড় মাটি খু্ঁড়ে খুঁড়ে পৌঁছে যায় অতল-গভীর;
অপেক্ষার রঙে শাদা শাদা মালবেরীও হয়ে ওঠে রক্তলাল!