কবিতাবিশেষ সংখ্যা

কবিতা।। সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল।। ফেব্রুয়ারি কবিতা উৎসব সংখ্যা

আলিফ

দুপুরে রিকশাওলা হয়ে লবনাক্ত পিঠে দেখলাম
ক্লান্ত পা ফোলে রগ টনটন করছে।
এক রাতে কাজের বুয়া হয়ে জানলাম
গৃহপালিত বিড়াল দুধ খেতে চায়!

এবং মাদ্রাসায় আরবি পড়তে পড়তে দেখলাম
আলিফের উত্থান!

একটি আত্মহত্যার প্রস্তুতি

খাতা খুলে দেখলেন তিনি সাহিত্য সম্পাদকের কাছে অনেক ঋণখেলাপি!
ছাতা ছাড়াই আজ একটু খোলা মাঠে যাবেন
কালি পায়ে হাঁটবেন।
শ্বাসকষ্টটা বাড়ছে,
মন ও মাস্ক খুলে ইনহেলার ছাড়াই অক্সিজেন নিবেন
এবং একটু কাঁদবেন।

পকেটে নিজের জীবনের মতো একটি অসমাপ্ত কবিতা
ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে
খাঁচার পাখির মতো মুক্ত করে উড়িয়ে দিলেন।
এবং একটু কাঁদলেন।

ভাবলেন, সিলভিয়া প্লাতের কথা
এতো উপায় থাকতে বেটি চুল্লিতে মাথা ঢুকাইয়া মরলি!
আত্মহত্যার কত পথ ছিলো,
এ বিষয়ে তিনি তিন মাস ধরে পড়াশোনা করছেন,
বই পড়ে পড়ে প্রচুর জ্ঞান অর্জন করছেন।
এবং একা একা কাঁদছেন।
কবি একগুচ্ছ প্রশ্ন নিয়ে
করোনা ভ্যাকসিনের মতো গবেষণা করছেন
কোন পদ্ধতিতে আত্মহত্যা সহজ,
মৃত্যুর পর কোন দৈনিক প্রথম পাতায় খবরটা ছাপবে্
কোন শালারা ছাপবে না‌,
কে কি ভাবে শোকাবিভূত হবে?
কবি-বুদ্ধিজীবীদের কবরেও কি সাপ-শেয়ালেরা যায়!
আর ভাবতে পারেনা।
চোখ ভিজে যায়; কান্না পায়। কাঁদে।

কবির খুব বাকরখানি খেতে ইচ্ছে করে।
খালি কবর দেখতে
এবং জিয়ারত করতে মন চায়
আর একটি অপ্রকাশিত সাক্ষাতকার রেখে যেতে চান।
তাঁর সাহিত্য কর্মের কোনো মূল্যায়ন হলোনা;
এই ভেবে একটু কাদঁলেন।

তিনি হিসেব করে দেখলেনঃ
কবিতা লিখতে লিখতে শেষ পর্যন্ত আর বিয়েটাও হলোনা,
এবং এবারও
তাকে বাংলা একাডেমি পুরস্কার থেকে বঞ্চিত করা হলো।
পুরস্কারের কথা মনে পড়তেই
কবি হাউমাউ করে কাঁদে উঠালেন!

আওয়াজ

হ্যা, আওয়াজ করতাম। অনেক অনেক আওয়াজ
আওয়াজে আওয়াজে…
পাশের ঘরের প্রতিবেশিরাও জেগে উঠতো,
বিব্রত হতো বাতাস
ভয় পেতো ভূত এবং বিড়াল।
আওয়াজের আনন্দে, মহানন্দে রাঁচি হয়ে উঠতো বাথরুম
অদ্ভূত আওয়াজে অর্জিত হতো শীর্ষ বিজয়।

এখন করি না। হর্ণ বাজে না।
ভেতর থেকে আওয়াজ আসেনা। ভণিতাও নেই।
হারিয়ে গেছ যুগ্ম-আওয়াজ; চুপসে যাওয়া বেলুন।

সহ অভিনেত্রীর ভাষ্য কি হাস্যকর?
‘ড্রাইভার পাল্টাও, আবার বেজে উঠবে হর্ণ’!


দারিদ্য ভাবনা

পাখিরা কখনোই দুপুরের লাঞ্চ নিয়ে ভাবে না
পিঁপড়ারাও ব্রেকফার্স্ট বা ডিনার নিয়ে চিন্তিত নয়
জেব্রা, জিরাফদের হাট-বাজার, রেস্টুরেন্ট নেই।

‘স্বামী দরিদ্র থাকলে সংসারে শান্তি আসে,
অর্ধেক অভাব পুষিয়ে দেয় ভালোবাসা দিয়ে’।
কি হাস্যকর হুমায়ুন আহমেদ!

দারিদ্র্য নজরুলকে মোটেও মহান করেনি,
বরং কেড়ে নিয়েছিলো-
শক্তি, বাকশক্তি, স্মৃতিশক্তি
আক্রান্ত করেছিলো পিক্স ডিজিজে।

‘কেবল শিক্ষাই পারে দারিদ্র বিমোচন করতে’
কিন্তু পাখি-পিঁপড়া-হরিণেরা দরিদ্র নয়,
তারা শিক্ষিতও নয়।
ধানমন্ডিতে, ব্লোর স্ট্রিট্রে বা বেগমপাড়ায় বাড়ি নেই,
তারা কেউ স্নাতকোত্তরও নয়!

দুর্বোধ্য দ্রৌপদী

দুর্বোধ্য দ্রৌপদী বনবাসে এসে অস্থির বন কুমারী, বনপরী
নিজেই নিজের বস্ত্র খুলে জল কুমারীর মতো নগ্ন স্নানে
জলাশয়ের জলগর্ভে ছড়িয়ে দেয় ডিম্বাণু
শুক্রাণুর নিষিক্ততায় জলসাঁতারে ভেসে উঠে
পিচ্চি পিচ্ছি পোনা।

মনপরী তার ভেজা স্তনগুলো শুকাতে দেয় বৃক্ষের বারান্দায়
গাছগাছালির শাখায় শাখায় স্তন ফুটে ফুটে ফুল হয়;
ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় অভয়ারণ্য, বসুন্ধরা।

রূপান্তরিত হবার মন্ত্রে হরিণ হয়ে ঘুরে বেড়ায় সুন্দরবনে
কস্তুরির ঘ্রাণে এবং ঘোরে পাখিরাও ঋতুবতী হয়।

বনপরী অতি আয়েশে তার হাত পা ছড়িয়ে চারিদকে
শুয়ে থাকে ঘাসে উপর, মাঠের বিছানায়।
মাঠের পর মাঠ আর মাটি হয়ে ওঠে-
শস্যবতী কৃষিক্ষেত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *