শামসুল বারী উৎপল-এর কবিতা
প্রিয়জন একজন
(অকালপ্রয়াত বিশিষ্ট ব্যাংকার শ্রদ্ধেয় সাইদুল হাসান স্মরনে)
সে ছিলো বৃষ্টির মতন
কিংবা আকাশের মত
মৃদু জ্যোৎস্না
আলোকিত সকাল
একরাশ রোদ্দুর অথবা
খুঁজে পাওয়া হারানো নাকছাবি,
সে ছিলো তারও বেশি
কিংবা কিছুই ছিলোনা সে,
কেবল হৃদয়ের কার্নিশ বেয়ে
ছুটে যাওয়া মাতাল ছায়ার মত,
সে ছিল কেবল
জীবনেরই সুউচ্চ প্রাচীর
একজন শ্রমজীবী সেনাপতি।
কে বলে এখন আর নেই কোনখানে,
ঐ যে দায়িত্বের স্বনির্ভর চেয়ারটায়
বুদ হয়ে থাকা জায়নামাজের নিমগ্ন আসনে
আর,
দারিদ্র্যপীড়িত অর্থনীতির আমুল বিন্যাসে
কিংবা স্বর্ন-কড়ির সচলতায়
হৃদয়ের তেলরং ক্যানভাস জুড়ে
বুকের এই পোড়খাওয়া রাজপথে
অগোছালো আত্মার খোয়াড়ে
অনিঃশেষ তুমি আছো
যতকাল রেটিনায় স্বপ্নের বসবাস।
২
পাললিক পৃথিবীতে
পাললিক পৃথিবীর উর্বরা মাটিতে
আটপৌরে জীবন ছিন্নভিন্ন করে
খুঁজে চলি বর্ণাঢ্য বিলাস স্বপ্ন সকাল,
নিয়ত পুতুল খেলার প্রকরণ শিখে
রাজ্য শাসনের প্রায়োগিক ব্যাখ্যায়
খুঁজে চলি সফলতার আস্বাদ।
ফুলতোলা চাদরে
বাড়তে থাকে কফিনের ঘ্রাণ।
৩
তোরই মতন আমার সেই এক তুমি কে চাই
এই তো সেদিন সকাল বেলা, আড়মোড়া ঘুম
পাশ ফিরতেই খুব মনে হয়
দারুণ হ’ত গরম লুচি চা ডুবিয়ে ঐ রনিদা’র টং দোকানে,
ঠিক তখনি তোর টেলিফোন
চা আর লুচির তৃষ্ণা আমার স্বর্গ ছুঁয়ে।
ক’দিন বাদেই দুপুরবেলা বৃষ্টি দারুণ
ভিজছে আকাশ এই পৃথিবীর পথ মাঠ গাছ
নদীর জলে কালো পথের দূরত্বটা ঘুচিয়ে দিয়ে
খুব মনে হয় এক কাপড়েই বৃষ্টি ভিজি,
ঠিক তখনি তোর আহ্বান
“চলনা দু’জন জলের ছটায় হারিয়ে ফিরি”,
কেমন করে বুঝতে পারিস
এই আমাকে
বুকের তুমুল ইচ্ছেগুলো কখন কী চায়!
চাঁদের আলোয় ভিজছে সেদিন তাবৎ আকাশ
মধ্যরাতের ঘুম পেরিয়ে মন ছুটে যায় নদীপাড়ে
কিংবা হলুদ জ্যোৎস্না বিলাস
ঠিক তখনই তুই ও হাজির
অধিকারের দারুণ সাহস মুখে এনে
ডেকেছিলি জ্যোৎস্না ভেজার অবাধ ঠোঁটে।
হঠাৎ কোন মধ্যরাতে ঘুম ভেঙে যায়
দুঃস্বপ্নের লাল চাঁদোয়ায়
ডুকরে কাঁদে এ চোখ যখন
খুব পেতে চায় একটু ছোঁয়া
ঠিক তখনি তোর টেলিফোন
বিস্ময়েরই ঘোর কাটিয়ে তলিয়ে যাই
আমার আমি তোর আঙ্গিনায়।
হৃদয় যেদিন হারায় দূরের ঐ পাহাড়ে
আকাশ ডাকে মন যেতে চায় স্বপ্ন চূড়ায়
ঠিক তখনি তুইও তেমন বায়না ধরিস
“চল চলে যাই দূর পাহাড়ে মেঘের নীলে”।
আমার সেই এক তুমি কে চাই,
তোরই মতন, আমার সেই এক তুমি কে চাই,
মন খারাপের ব্যামো যখন একটু বাড়ে
নীল মোহিনী সুরটা বাজে ভাটিয়ালী
অপার নেশায় ছুটতে যে চায় দূর আকাশে
ঠিক তখনি তোর সুরেতেই মুগ্ধ করিস
মন ভরে যায় দারুণ গানের মুর্ছনাতেই,
কেমন করে বুঝতে পারিস
এই আমাকে,
বুকের তুমুল ইচ্ছেগুলো কখন কী চায়!
মাঝে মাঝেই মনটা কেবল প্রশ্ন করে
আমার যেমন তোরই মতন তুমি কে চাই
এমন ইচ্ছে তোর করেনা,
ভুল করেও সাধ জাগেনা রাত্রি দুপুর কোন বেলা?
জানতে ভীষণ ইচ্ছে করে,
খুব জানতে ইচ্ছে করে
আমার যেমন…
৪
বরং মৃত্যুতেই বেঁচে উঠি এই আমি
আগন্তুক কোন সময়ের হাত ধরে
মাতৃজঠর থেকে নতুন গন্তব্যের
লাল নীল পৃথিবীতে পৌছে যাই
পরিশুদ্ধ আমি নতুন কোন এক
ঠিকানার কাছাকাছি,
অপূর্ব জলাভূমির সীমান্তজুড়ে
যত সব কুৎসিত কদাকার মানুষগুলো
ঘুরেফেরে ফরাসি মেকআপে
উদভ্রান্ত ঘড়ির কাঁটায় পার করে নষ্টসময়
আর যতসব অসৎ ভাবনার ঘোলাজলে
বিষাক্ত বাষ্পায়িত কালোমেঘ
ছড়িয়ে দেয় নষ্ট বৃষ্টি,
সেই বিষাক্ত জলের স্রোতে বাড়তে থাকে
নষ্ট উদ্ভিদ কার্বন প্রেম,
বাড়তে থাকে প্রকৃতির নিখাদ অশুদ্ধতা
বাড়তে থাকে কালো রক্তের চোরা-স্রোত
বাড়তে থাকে বিকলাঙ্গ মানুষের জন্মহার
অতঃপর একদিন আগামী পৃথিবীতে
কেবল মৃত্যু ঘৃণা আর নষ্ট বীজের
পারমানবিক চিৎকারে ভস্মীভূত হওয়ার চেয়ে
বরং মৃত্যুতেই বেঁচে উঠি এই আমি।
জ্বলজ্বলে আকাশের নির্দয় অন্ধকার ঠেলে
জীবাশ্ম প্রকৃতির কালো চাঁদ জ্যোৎস্নায়
আরেকটা দাও নূহের প্লাবন
আমার মৃত্যু যুদ্ধের অগ্নিমুল্যে
নতুন করে জন্ম হোক পবিত্র পৃথিবী।