ইলিয়াস ফারুকী’র কবিতা
তিনি
(সদ্য প্রয়াত শ্রদ্ধেয় আবুল হাসনাত স্মরণে।)
বটের ছায়ার মতো বড়
অথচ প্রশান্তিময় হরিয়ালে
ঝিরঝির যে কম্পন হতো
তার দোল থেকে ঝরে পড়ত বিরল
নন্দন রূপের তথ্য,
যেন ভোরের কুয়াশা ভাঙা রোদ
কিংবা আশ্বিনের সন্ধ্যায় ফেরারি বোধ।
বধির চিন্তায় শোকের সময় চাঁদ
ব্যথিত হৃদয়, কান্না ও অভিমানে
কুঁকড়ে গুটিয়ে নেয় প্রসস্থ কাঁধ।
অহর্ণীশ পুড়ছি
যেখানে মাটির শকুন ঠুকরে খায় অজর জীবন
যেখানে উইয়েরাও হামলে পড়ে করতে বপন,
সেখানে, ঠিক সেখানেই আমি শুরু করি
জীবনের ধারাপাত এবং ঐকিক নিয়ম।
আমার নিকট দুই টাকা ছিল কাল
আজ আমি কপর্দকহীন
তাই বলে ভাবিনি কখনো
যে আমার থেমে গেছে বীন।
আমি শৈশব হারিয়েছি অবহেলা আর উষ্মায়,
কৈশোরে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় মানব মনন
যৌবনে পাথরের চাক হয়ে কেটেছে সময়
প্রৌঢ়ত্তে বিদ্রোহে মাতি ভোঁতা অস্ত্র নিয়ে।
আমি নজরুল নই হব ধুমকেতু
কিংবা ধান শালিকের জীবনানন্দ,
তবে হ্যাঁ, হতে পেরেছি আমি
রবি ঠাকুরের সেই “দুই বিঘা জমি।’
আমি চিত্তহীন এক অন্ত
আমি পুস্পহীন এক বৃন্ত
অস্তিত্বহীন একটি মানুষ জবর
আমার ভেতরে আমার কবর।
বিপ্লব কিংবা অন্যকিছু
চোখ রাঙ্গায় শাহবাগ,
বিপ্লবের তীব্র প্রসব বেদনা নিয়ে
নিদ্রা ভাঙ্গে এবং বুঝে
উপেক্ষা, অপেক্ষা
এ দুটোর মাঝে কত অদ্ভুত যোগাযোগ,
দুটোতে রয়েছে অস্থিরতা।
অপেক্ষা রোদের থালা
ক্ষণে ছায়া দেয়, ক্ষণে জ্বালা।
উপেক্ষা মৃত্যুর চেয়ে ভয়ংকর
যার শেষ অমিমাংসিত সুখে কিংবা দুঃখে,
কিন্তু চুড়ান্ত ফলাফল
ভালোবাসাহীন শুন্য জীবন।
অথর্ব শান্তির খোঁজে
এমন কেন হচ্ছে যেন সাদার সাথে নীল,
ভূবণ ভুলে ব্যথার ঘোরে উড়ছে একা চীল।
জুজুর ভয় বিভেদ ভুলে নিরেট চলে খেলা,
বিকেল বেলা চায়ের সাথে আড্ডা চলে মেলা।
এবেলা দোল ওবেলা দোল নদীর জলে ঢেউ,
নাগর দোলা দুলছে দোলে সঙ্গে তবু ফেউ।
লুকিয়ে থাকা আবির মাখা মানুষ খোঁজে সখা,
সবাই খোঁজে নগর জুড়ে পায়না তবু দেখা।
দুখেরা সব সভায় জড় পীড়ন রোধে বেলা,
এবার কিছু করতে হবে ভেঙ্গে ফেলে হেলা।