সংঘমিত্রা চক্রবর্তী’র কবিতা
কবিতা
কবি সংঘমিত্রা চক্রবর্তী’র পরিচিতি কবির
জন্ম তারিখ: ১৯৭২ সালে ১৭ জানুয়ারি কোলকাতা, ভারত
কাব্যগ্রন্থ : করমুক্ত উত্তাপ, সে তাকালেই বিশেষ দিন। ২০১২ কৃত্তিবাস পুরস্কার প্রাপ্ত। শরীরের বিশ্বযুদ্ধ, কে আছো বিবাহযোগ্য, পৃথিবীকে দু’চার লাইন, সাত লক্ষ চুমু।
২০০০ থেকে ভারতের দেশ, সানন্দা, কৃত্তিবাস সহ বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও লিটিল ম্যাগাজিনের নিয়মিত লেখিকা। ২০১২ সালে কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত থেকে কৃত্তিবাস পুরস্কার পান। কলকাতার সবচেয়ে নামী ও জনপ্রিয় প্রকাশনা আনন্দ পাবলিশার্স থেকে নিয়মিত কবিতার বই বের হয়। বইয়ের দেশ পত্রিকায় আলোচিত হয়েছেন বহুবার। আনন্দবাজার রবিবাসরীয়তে গল্পও লেখেন মাঝেমধ্যে। শঙ্খ ঘোষ, জয় গোস্বামী, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়সহ অনেক বিখ্যাত কবিরাই কবিতার প্রশংসা করেন।
স্বপ্ন মধুর খেলা
সোনার অতীত প্রতারণা নয় ফিরে দাও ছেলেবেলা
উত্তর চাই কেন ছিঁড়ে দিলে স্বপ্ন মধুর খেলা
কমদামি হোক, গরিবের হোক তবু তো আমার সোনা
কোথায় খুঁজবে আমি তা জানি না শেষ কারো দিন গোনা
কাজ পারছি না, ঘরে বসে বসে কুঁড়ে হয়ে গেছি আজ
অথচ সেদিন রকমারি কত সুনিপুণ কারুকাজ!
ভোর ভোর উঠে মড়াই তলায় স্বস্তি চিহ্ন এঁকে
কাঠ চেলা করে উনুন জ্বালানো সকালের রোদ মেখে
নিষেধ মেনেছি বড়দের কথা স্নান করে ভাত ছুঁবি
আসলে একুশ কবিতার মেয়ে মনে মনে রুবি রায়!
দুপুরের ঘুমে বাড়িটা যখন তন্দ্রা জড়ানো চোখে
আমি লিখতাম টুকরো-টাকরা মাকে হারানোর শোক
বাতিল কাগজ ফেলে দেওয়া পেন কষ্টের গাঢ় কালি
কখনও ভাবিনি এত খাঁটি প্রেম শেষে কিনা চোরাবালি!
কুসংস্কার
পেছনে ঘুরছে স্পাই
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে গেলেই পালিয়ে যায়
কালো ছায়া দেখি পাশে পাশে যায়
দাঁড়ালে দাঁড়িয়ে থাকে
বসলে বসে
দূর থেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে
আমার রুটিন
নড়াচড়া
জীবন যাপন
আমি মাছ রান্না করলে ও আঁশটে গন্ধ শুঁকে খায়
নজর বসায় মাংস হলে
আমরা একটু ফেলে দিয়ে খাই
মনে মনে বলি খা, ডান দিস না বাবা
স্বভাব
কি গো ঘরে ফিরবে না
ভাদ্র মাস শেষ হল এখনও এত কাজ
এই মরসুম তো কুকুর উপভোগ করে
তোমার আবার বুড়ো বয়সে স্বভাব দোষ হল নাকি?
এ দিকে মেয়ের জন্য হন্যে হয়ে আমি মাস্টার খুঁজছি
সংসারের কর্মসূচি পালন করছি গৃহবন্দি হয়ে
একটা সিনেমা নেই, দিবানিদ্র নেই
বালের জীবন বটে
বিয়ে করে কোন আশাটা আমার পূরণ হয়েছে বলো
তুমি মদ, মেয়েবাজি সবেতেই আছো
আবার রাতেও আমার ম্যাসাজ চাও
পা টিপে দিতে হবে, স্বামীর সেবা না করলে
স্ত্রীর একঘেয়ে ভুলে নাকি ঢুকে যাবে পরিদের ফ্ল্যাটে
সেখানে ওদের আঠারো কলার বিনোদন আছে
কতরকম সুখের টিপস
খুশির ফোয়ারা
কিন্তু চুক্তি হল পকেট ফাঁকা করে বাড়ি ফেরো
পরিচয়
ঠিকানা ফেলে রেখে উধাও হবে মন
খোনে অনিয়ম যা খুশি করা যায়
শাসন রাতদিন বারণ সব কাজে
মানি না সাবধান ছাড়ো তো, ছেড়ে দাও।
উদাসী সন্ধ্যায় নিজের মতো করে
উড়ব এলোমেলো সঙ্গে যুবক
অবাক হয় হোক ওদের কাজ নেই
প্যাঁচানো কথা নিয়ে মরুক, মরুকগে।
আমার ভালো থাকা আমার কথা,গান
মেলে না উত্তর সবই খাপছাড়া
একলা বসে থাকি একলা বেশ আছি
দু’চোখ সন্ধানী কত কি খুঁজে মরি!
মানুষ বোঝে নাকো, মানুষ বেশি বোঝে
আমাকে খুলে খুলে ছাড়ায় নুন ছাল
চরিত্রহীন ভাবে ভাবছে নকশাল
অথচ আমি চাই শান্ত নির্জন।
বিরহগাথা
ডানা ভেঙে গেছে খসেছে পালক তবু আকাশেই চোখ
আনাগোনা করে নির্জন ঘরে শব্দ জব্দ শোক
শরীরের পাশে রাখা আছে কিছু কড়া ওষুধের শিশি
তেতো তেতো স্বাদ কত যে ওষুধ ওষুধেই দিবানিশি
মন খাবি খায় ভাবে মরে যাবো তার আগে একবার
প্রিয় ঠোঁট থেকে চুমু চেয়ে নেবো ভালো থেকো সংসার
ভালো থেকো তুমি নাম লিখব না আমি বেইমান নই
লিখে যাবো প্রেম শেষ চিঠিখানা তোর নামে কিছু বই
বৃষ্টির রাতে যখন একলা পড়ে দেখো সব ব্যথা
একমাত্র তুমি তুমি শুধু তুমি তুমি ছাড়া কেউ নেই!
হয়তো শুনবে বন্ধুর লিস্ট হাজার পেরিয়ে গেলো
এগুনো কি প্রেম শুধু ছেলেখেলা ঢপ সব এলোমেলো।
হিংসুটি
মনের নজরে রাখি কার দিকে হাসি হাসি মুখ
কী এমন মধু আছে উড়ু উড়ু
এদিকে ওদিকে
গেলে দেবো চোখদুটো মনে রেখো রাগলে আগুন
একটু পুরনো হলে ভালোবাসা এতটাই ফিকে?
অথচ পাওয়ার আগে এই নাম ধুয়ে খেতে জল
সারাদিনে দশবার ঘুরেফিরে দেখবার ছল
শেষ কথা শেষ হলে তারপর আবার প্রথম
পাশাপাশি গাঢ় হলে সেই রাত চুটিয়ে সফল।
এখন পালিয়ে যাও মিছে কথা হাজার বাহানা
যদি চাই পাছে তাই নতজানু ক্লান্ত হয়ে নুয়ে
এমন ন্যাকামো করো মনে হয় আহারে বেচারা
দেহ মন সবই গেছে এর ওর সঙ্গে শুয়ে শুয়ে!
সন্দেহপ্রবণ
আবার নতুন হবো মাদকতা ছড়ানো বিকেলে
ফুরফুর উড়ে যাবো যুবকের নীল সাইকেলে।
পড়শিরা ট্যারা চোখে মেপে যাবে গাঢ় প্রেমলীলা
একমাত্র ছেলে জানে আমি কত সুপার কিলার!
শুনে বুঝি দমে গেলে চলবে না
আর একসাথে?
সবটুকু সত্যি নাকি অভিমানে
দোর দিলে রাতে!
পারবে তো জানেমন ছেড়ে দিতে গায়ে গায়ে ঘুম
মনে রেখো আমাদের কেউ নেই
একলা নিঝুম
তবে কেন, কেন সোনা বুঝলে আমায়
ওহ্ গড লাল দাগ কার ঠোঁট
কাচানো জামায়!