অণুগল্প।। স্পর্শ।। নুসরাত সুলতানা
সময় টা ২০৫০ সাল। কি এক দুর্বিষহ সময়। মরে যাচ্ছে সব পাখি আর প্রজাপতি কি এক অজানা সংক্রমণে। বিশ্ব কি এবার এক ধু ধু মরুভূমিতে পরিনত হবে? ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো গবেষক মাহবুবা আক্তার দিনরাত এক করে ফেলছেন। কি উপায়ে পাখিগুলো কে বাঁচানো যায়! দুই মাস পর আবিষ্কৃত হয় ঔষধ।
সমস্ত ফুলের ওপরে ছিটিয়ে দেয়া হয় ঔষধ। প্রায় প্রত্যেক প্রজাতির যত পাখি আছে কিছু দম্পতি কে বিশেষ ভাবে ধরে খাইয়ে দেয়া হয় ঔষধ। পরের বছর নোবেল প্রাইজ পেয়ে যান মাহবুবা আক্তার। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা তাঁকে সংবর্ধনা দেবার জন্য বড়সড় একটি আয়োজন করে। একে একে মহামান্যগণ ভাষণ শেষ করে। মঞ্চে ডাকে উপস্থিত সকলে যার ভাষণ শুনতে অধির আগ্রহে বসে আছেন। ভাষণ শুরু হবার পর, স্তব্ধ হয়ে গেছে পুরো অডিটোরিয়াম। যেন ভাষনে কাঁদছে পুরো পৃথিবী। ভাষনটি ঠিক এমন।
আমার জন্ম ২০২০ সালে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত পৃথিবীতে। আমার বাবা মায়ের স্বাভাবিক ভাবে সন্তান হচ্ছিলনা দেখে আমার মা পাশের দেশ ভারতে চলে যান টেষ্ট টিউব বেবির জন্য চেষ্টা করতে। সুদীর্ঘ নয় বছরের চেষ্টার সুফল হয়ে আমি আসি মায়ের কোলে। ২০২০ সালের ১৮ মে আমার ব্যাংকার বাবা খবর পান তিনি প্রিন্সিপাল অফিসার পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। মা করোনা পরিস্থিতির কারণে আমাকে নিয়ে পাশের দেশ ভারতে। ঐদিনই করোনা বাবাকে পাঠিয়ে দেয় আকাশে। জীবনের সমস্ত আয়োজনকে অগ্রাহ্য করে বাবা চলে যান। বাবা না আমাকে দেখেছেন, না আমাকে কোলে নিয়েছেন! আমি জানি না বাবার স্পর্শ কেমন হয়!
মা সুদীর্ঘ জীবন আমাকে নিয়েই পাড়ি দিয়েছেন।
যখন খুব কাঁদতাম বাবার জন্য, মা বলতেন, আমাদের নবীও তো বাবাকে দেখেননি। আমি তোমার বাবা, আমি তোমার মা। আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধর! মা চাইতেন আমি ডাক্তার হই। কিন্তু আমি সাইন্টিস্ট হতে চেয়েছিলাম। আজ মনে হচ্ছে আমার বাবা আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছেন। আমি বাবার স্পর্শ পাচ্ছি! এই পৃথিবী হোক শান্তি আর সমৃদ্ধির এই বলেই হাউমাউ কান্না শুরু হলো….