গুচ্ছ ছড়া মহসিন খোন্দকার
জীবন
জীবনটা কী? জিজ্ঞেস করলাম, দিয়ে একটু প্রেষণ
সন্ত বললেন, চলার পথে রেলের একটি স্টেশন
জিজ্ঞেস করলাম, এক কবিকে, এই জীবনের মানে
কবি বললেন, আগুনবিড়ি, কমছে টানে টানে
দার্শনিককে প্রশ্ন করলাম, এই জীবনের অর্থ
তিনি বললেন, আর কিছুনা, পূরণ করা শর্ত
জিজ্ঞেস করলাম, এক সাধুকে, কাছে গিয়ে চুপি
তিনি বললেন, কেরোসিনের জ্বলন্ত এক কুপি
জীবনটা কী? বাউলকে কই, পথের ধারে পাইছি
বাউল বললেন, জীবনসংগীত, নানান তালে গাইছি
জীবনটা কী? জ্ঞানীর কাছে আর্জি করি পেশ
তিনি বললেন, কী জানি ঠিক! বুঝতে বুঝতে শেষ।
উঠতি নেতা
ব্যবসা নেই তার, চাকরি নেই তার, তবু হাসে ফিক করে
কোত্থেকে যে কী আসে তার, কেউ জানেনা ঠিক করে
কাড়ি কাড়ি বৌ’য়ের শাড়ি, ছেলে চালায় পালসার
বাপ মরেছে না খেয়ে তার, রোগ ছিল তার আলসার
হঠাৎ করে পেয়ে গে’ল কোন ভান্ডারের চাবি সে
ভাবে সাবে মনে হবে, সব ক্ষমতার নাভি সে
যাকে তাকে ধমক মারে ভয় দেখায় সে পুলিশের
গরীব জেলের মাছ নিয়ে যায়, দাম না দিয়ে ইলিশের
উল্কার বেগে কথা বলে, সাথে ছাড়ে খিস্তি সে
একে শাসায় ওকে ভাসায় ভেঙ্গে ফেলবে অস্হি সে
মাঝে মাঝে বাজার থেকে এটা সেটা তোলে নেয়
নানান জনের ক্যাশের টাকা নিজের মতো খুলে নেয়
কফি শপে কফি খায় সে, বিশেষ রকম কাপ দিয়ে
চাঁদা তোলে, খুব সাবধানে, আস্তে আস্তে চাপ দিয়ে
যান বাহনে চড়ে বেড়ায় ফাও অথবা হাফ দিয়ে
পরের রিলিফ চুরি করে নিজ আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে
সবার সামনে থানায় ফোন দেয় সব যেনো তার মুঠোতে
মাঝে মাঝে তেল মবিল দেয়, বসের নানান ফুটোতে
সামনে খায় সে, পেছন খায় সে, খেয়ে খেয়ে তরতাজা
সে আমাদের উঠতি নেতা মেনে চলছে শর্ত যা।
শ্রমিক শোষণ
শ্রমিক জীবন ভাড়াটিয়া দাঁড়ায় না সে শক্ত পায়
মালিক তাদের যন্ত্রে ফেলে নিংড়ে নিংড়ে রক্ত খায়
বোকা শ্রমিক কথা কয়না মালিক সামনে দাঁড়িয়ে
তাইতো মালিক রস খেয়ে নেয় আখের মতো মাড়িয়ে
যা পাবার তা পায়না শ্রমিক শোষণ করে মালিকে
ফিঙ্গে কাড়ে মুখের খাবার যা ধরেছে শালিকে
দেখায় হীরা দিচ্ছে পীড়া ছলনার এক জাল
শ্রমিক শুষে সারাবিশ্ব আজকে লালে লাল।
গুচ্ছ ছড়া মহসিন খন্দকার অতিমাত্রায় বাস্তবচিত্রপট কবি তুলে ধরেছেন।এতার চারপাশ্বের পোঁড়খাওয়া ভাঁজাভাঁজা অভিজ্ঞতার রূপালি ফসলের স্তুপ। রিলিপখোর চালচোরের কথাও বাদ যায়নি।গুচ্ছ গুচ্ছ কথা, গুচ্ছ গুচ্ছ ভাবের প্রকাশ। ফাওখায়, শ্রমিককে ঠকায়,কবিকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
কবি শওকত আলম