প্রবন্ধ// গর্দভ বিলুপ্ত হলে সমাজের কী হবে// হরিপদ দত্ত
গর্দভ, প্রবন্ধ, ফরাসি বিপ্লব, সাড়ে সাতশ কোটি, হরিপদ দত্ত
গর্দভ বিলুপ্ত হলে আগামী দিনের ফরাসি বিপ্লব, রুশ বিপ্লব, মাওয়ের লংমার্চ, একাত্তরের যুদ্ধ করবে কারা… বিশ্বের মাত্র কয়েকশ ধনাঢ্য পরিবার, যারা ৯০ ভাগ সম্পদের মালিক, তাদের টিকিয়ে রেখেছে সারাবিশ্বের সাড়ে সাতশ কোটি গর্দভ। সাধারণ মানুষ নিয়ে হরিপদ দত্তের প্রবন্ধ
সবিনয় নিবেদন এই, তোরা দুনিয়ার মাটি থেকে বিলুপ্ত হোসনি ভাই। এমনটা ঘটলে মানবসভ্যতা মহাসংকটে পতিত হবে। এই যে আমি বা আমরা, বাল্যকালে এবং ছাত্রজীবনে তোদেরই তো বংশধর ছিলাম। জিন বিবর্তনের ফলে ঘোড়া আর গাধা যেমন আলাদা প্রাণী হয়ে গেছে, আমরাও কিন্তু তাই। বাঙালির সবচেয়ে প্রিয় শব্দ এবং প্রচলিত বচন হচ্ছে ‘গর্দভ’ বা ‘গাধা’। মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, অসম্মান করতে গেলে এই শব্দের চেয়ে জুতসই শব্দ বাংলা অভিধানে আর নেই। স্কুলজীবনে সহপাঠী উত্তম ছাত্র তো বটেই, শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী, কেরানি, পিয়ন, ঘণ্টাবাদক পর্যন্ত আমাদের এই নামেই চিনত, জানত। শিক্ষক তো ছাড়, ঘরের পিতা, মাতা এবং পড়শিরাও একই নামে ডাকত। কেবল কি তাই, গৃহপালিত স্ত্রীরাও। কেন এই সম্বোধন? কেননা মনুষ্য আকারের এই প্রাণীটি বোধবুদ্ধিহীন, মগজশূন্য, অপদার্থ, অকর্মণ্য, অসুন্দরও বটে।
গর্দভ নামের প্রাণীটির প্রাণীবিজ্ঞান বৈশিষ্ট্য, সামাজিক বৈশিষ্ট্য, অরণ্য থেকে বন্দি করে গৃহে এনে গৃহপালিত করে দান করা নতুন বৈশিষ্ট্য, সবকিছুই কৌতূহলের। এমন দাবিও পাওয়া যায়, গরু, ভেড়া, ছাগল, মহিষ, হরিণ, ঘোড়ার দুগ্ধপানের অভ্যাসের আগেই মানুষ গাধার সন্তানকে তার অধিকার হরণ করে মায়ের দুগ্ধ পান করতে শেখে। এই প্রাণীর সন্তানকে বঞ্চিত করে মানুষ যে তাদের মাতৃদুগ্ধ লুণ্ঠন করে, তার ভেতর জীবপ্রেম নেই, আছে হিংস্রতা। এই হিংস্রতার সংবাদ জানার কথা নয় দুগ্ধজাত পণ্য ব্যবসায়ীদের। আরও জানার কথা নয় বাঙালি জননীদের, যারা আধুনিক এবং দৈহিক সৌন্দর্য সচেতন। কেননা তাদের একটি অংশ সদ্যোজাত সন্তানকে মাতৃদুগ্ধ পান করার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। তারা বাজারের শিশুখাদ্যের ক্রেতা। অনেকেই তারা জানেন না মধ্য এশিয়ার ঘোড়া এবং মঙ্গোলিয়া-তিব্বতের গাধার দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত করে শিশুখাদ্য হিসেবে বাজারজাত করা হয়। এটাও জানার কথা নয় গর্দভ দুগ্ধপানে মানবশিশুর ভেতর গর্দভ বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি হয় কিনা।
পশুদের জীবনচক্র নিয়ে গবেষণা করে বিশ্বের এমন অনেক সংস্থাই মাঝে মধ্যে তাদের গবেষণালব্ধ নানা তথ্য প্রকাশ করে। সম্প্রতি ব্রিটেনের ‘গার্ডিয়ান’ পত্রিকার ডাঙ্কি বা গর্দভের ওপর একটি প্রতিবেদন ছেপেছে। এই রিপোর্ট বিশ্বের সেরা পত্রিকাগুলো পুনর্মুদ্রণও করেছে। হিসাব দেখিয়ে তারা বলেছেন, বিশ্বে মাত্র সাড়ে চার কোটি গাধা রয়েছে। ভয়ঙ্কর সংবাদটি হচ্ছে, আসছে পাঁচ বছরে অর্ধেক গাধাকেই হত্যা করা হবে চীনে। চীন গাধার চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে যৌন উত্তেজক ওষুধ তৈরি করে। এর চাহিদা বিশ্বে ব্যাপক। চীনই পৃথিবীর একমাত্র দেশ যে কিনা বিশ্বের জীববৈচিত্র্যকে ধ্বংস করে প্রাচীন পদ্ধতিতে ওষুধ তৈরি করে। বাংলাদেশের দুর্লভ প্রজাতির লিজার্ড জাতীয় প্রাণী চোরাইপথে চীনে চলে যায়।
আমরা প্রাচীন এবং মধ্যযুগের ইতিহাসের দিকে তাকাতে পারি। ইসলাম, খ্রিস্ট, ইহুদি ধর্ম আবির্ভাব যুগে এবং বিকাশকালে পরিবহন ও চাষে গাধার ভূমিকা ছিল বিরাট। ইসলামি সাহিত্যে অর্থাৎ আরবি সাহিত্যে অসংখ্য বিবরণ রয়েছে এই প্রাণীটি সম্পর্কে। তা ছাড়া মধ্যযুগে আরবীয় বণিকদের যে পণ্য ইরান, ভারতবর্ষ আর চীনে আমদানি-রপ্তানি হতো তা সমুদ্রের নৌপথের চেয়েও ছিল তিন-চারগুণ অধিক। এই বাণিজ্যের উৎসই ছিল গাধার পরিবহন।
জীববিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, প্রাণিজগতে গাধার মতো ধৈর্যশীল এবং কষ্টসহিষ্ণু প্রাণী দ্বিতীয়টি নেই। এদের স্মৃতিশক্তি এতই প্রখর যে, নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থল ওরা স্মৃতিতে ধারণ করতে পারে দীর্ঘ বছর। আজকের পৃথিবীর পর্যটন বাণিজ্য গাধার ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। দুর্গম পাহাড়ি পথে এদের বিকল্প অন্য কিছু নয়। বরফঢাকা যে হিমালয় অঞ্চল তিব্বত থেকে নেপাল পর্যন্ত, যেখানে দেবতা শিব-দুর্গার বাসভূমি বলে বিশ্বাস করে হিন্দুরা, সেই স্থানে গিয়ে ঈশ্বর দর্শন গাধার পিঠারোহণ ভিন্ন বিকল্প নেই। এই যে দেবতা-ভগবান দর্শন গাধা বিনা চলে না তার প্রতি এত তুচ্ছভাব কেন?
বিশ্বসাহিত্য নিয়ে যারা খোঁজখবর রাখেন, তারা নিশ্চয়ই জানেন কেবল ইংরেজি নয়, ইউরোপীয় ভাষার সব ক্ষেত্রেই যে প্রাণীটির উপস্থিতি ব্যাপক, তা হচ্ছে ডাঙ্কি বা গাধা। সাহিত্যের প্রাচীন মধ্যযুগ এবং আধুনিক যুগের গোড়ার দিকটা দখল করে আছে গাধা নামের প্রাণীটি। যন্ত্রশক্তি আবিষ্কারে গাধার রাজত্ব পিছু হটে। আমরা প্রাচীন সিল্করোড বাণিজ্যকে ভুলিনি।
পলিমাটির সমতল ভূমি এবং আবহাওয়ার কারণে বাঙালি জাতি কৃষি ও পরিবহন ক্ষেত্রে গাধার বিকল্প গরুকেই প্রাধান্য দিয়েছে। গাধা তাদের কাছে অপরিহার্য প্রাণী নয়। তাই প্রাণীটি তাদের দুগ্ধ বা মাংস কোনোটিই দান করেনি যেমন, তেমনি চাষের কাজেও লাগায়নি। তাই তার আকার তাদের আকর্ষণ করেনি। তার দীর্ঘ কান কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। শিশুদের চোখে ছদ্মবেশী ঘোড়া হয়েছে গাধা।
কিন্তু মানবসভ্যতার ইতিহাস কী প্রমাণ করে? এটা কি প্রমাণ করে না যে, শৈশবে স্কুলশিক্ষক, অভিভাবক, সমাজপতিদের চোখে যারা ছিল ‘গর্দভ’ তারাই সভ্যতার কারিগর হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে? কারা সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী? কারা শিল্প-কারখানার ভেতর থেকে শ্রমে-ঘামে অর্থনীতির পরিচালক? কৃষি উৎপাদনে যোগ দিয়ে কারা বিশ্বমানবের ক্ষুধা মুক্তির ঈশ্বর? কারা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে শ্রমিক আন্দোলনে? কৃষক বিদ্রোহে? গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রাজপথে কারা দিয়েছে প্রাণ? একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে হাজার হাজার শহীদ মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে হাতেগোনা ক’জন শিক্ষক আর পিতা-মাতার ‘শিক্ষারত্ন’? এই শিক্ষারত্ন কাপুরুষরা যখন ভয়ে পলাতক তখন মানুষের অধিকার, গণতন্ত্র আর স্বাধীনতা আজাদির জন্য লড়াইয়ে রত ছিল ওই গাধারাই।
আমার স্কুলজীবন থেকে শুরু করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী যারা ছিল পিতা-মাতার স্বপ্নপূরণের ‘সুসন্তান’ তাদের কেউ কেউ মাঝপথেই হারিয়ে গেছে। আবার কেউ কেউ চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সরকারি আমলা, সফল ব্যবসায়ী, খুদে শিল্পপতিও হয়েছে। আর গর্দভরা? ঊনসত্তরের গণআন্দোলনে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের গুলিতে রাজপথে একজন শহীদ হয়েছে। আমার হিসাবমতে, অন্তত ষোলো জন একাত্তরের যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ছাত্তার আর যতীন্দ্র রণাঙ্গনে সরাসরি যুদ্ধে শহীদ হয়েছে। আর শিক্ষারত্ন সহপাঠীদের অনেককেই দেখেছি কলকাতা আগরতলা প্রবাসী সরকারের দপ্তরে সুবিধাপ্রাপ্তির জন্য দৌড়াচ্ছে। একজনকে তো দেখতে পেলাম গণহত্যার শিকার হচ্ছে যখন মানুষ মূল ভভূখণ্ডে, তখন সে কলকাতার চৌরঙ্গীতে নব্য ‘কলকাতাইয়া’ বান্ধবীর হাত ধরে হাঁটছে। হঠাৎ জীর্ণবসন পরা আমাকে সামনে পেয়ে জানতে না চাইলেও বান্ধবীকে ইঙ্গিত করে বলে ফেলে ‘মামাতো বোনের বান্ধবী, কলেজে পড়ে।’ কথা এড়িয়ে গিয়ে আমি তাকে জানিয়েছিলাম, ‘ছাত্তারের কথা মনে আছে তোর? ওই যে আমার মতোই গর্দভ মার্কা ছাত্র ছিল, গ্রামের প্রাইমারি পাস দিয়ে ঢাকা শহরের কেএল জুবলী স্কুলে ভর্তি হয়েছিল, আখাউড়া বর্ডারে পাকবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে মৃত্যু হয়েছে তার।’
আশ্চর্য এই, আমার সেই ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট শিক্ষারত্ন বন্ধুটির মনে এই দুঃসংবাদ কী প্রভাব ফেলেছিল, বুঝতে পারিনি। বরং এটা বুঝতে পারি বাঙাল সহপাঠীর সঙ্গে নব্যঘটি বান্ধবীর আনন্দ মুহূর্তকে বুঝি আমি মাটি করে দিলাম। এটাও আমি জানি না, স্বাধীন দেশে আমার ওই কলেজ সহপাঠী শিক্ষারত্ন বন্ধুটি ফিরে এসেছিল কিনা। একাত্তরের যুদ্ধকালের নির্মম সত্যটি দীর্ঘ বছর পেরিয়ে আমাকে লিখতে হলো বলে আমি বন্ধুটির কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
ছাত্রজীবনের ওইসব গর্দভ সহপাঠীর জন্য আমৃত্যু আমি গৌরব অনুভব করব। তাদের একজন বর্তমানে বাংলাদেশের খ্যাতিমান কবি, অন্যজন কথাসাহিত্যিক। একজন এক সময়ের খ্যাতিমান গীতিকার, গায়ক, যুদ্ধকালে তার রচিত একটি গান (গোবিন্দ হালদারের সুরে) আজও বাঙালিকে যুদ্ধ স্মৃতিকাতর করে। আরেকজন গর্দভ সহপাঠী বন্ধু মুক্তিযোদ্ধা থেকে রক্ষীবাহিনীর কমান্ডার হয়ে শেষে সেনা কর্মকর্তা হয়েছিল। দুঃখ লাগে সে আজ বেঁচে নেই। বড় আক্ষেপ এই, সেসব শিক্ষারত্ন বা গর্দভ মার্কা সহপাঠীদের কারও সঙ্গে আজ আমার কোনো যোগাযোগ নেই। সবকিছুই ছিন্নভিন্ন, বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
এই যে গর্দভ নামের প্রাণীটির সঙ্গে প্রতিকল্প হয়ে ওঠে কিছু মানুষ, তাদের বাল্যজীবনটা তাচ্ছিল্য, অসম্মান, ঠাট্টা-বিদ্রূপের ভেতর দিয়ে কাটে। কিন্তু সময় তাদের চিনে নেয়। সময়ই মহান শিক্ষক, যে জানে গর্দভরা কীভাবে সভ্যতার অভিভাবক হয়ে ওঠে। মহান ফরাসি বিপ্লব তো ঘটিয়েছিল বাবা-মা তাড়ানো, স্কুলশিক্ষকদের বিদ্রূপের পাত্র, শ্রেণিকক্ষ থেকে পলাতক শিক্ষাব্যর্থ যুবকরাই। শ্রমিক-কৃষক আর বিপ্লবী সৈনিকদের সহযোগী যোদ্ধা হয়ে রুশ জারকে উৎখাত করেছিল ওই গর্দভ ছাত্ররাই। বিশ্ব বদলের মহান কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, বিপ্লবী রাজনীতিবিদ, বিজ্ঞানী, চিন্তক, সৃষ্টিশীলদের বড় অংশই হচ্ছে গর্দভ থেকে রূপান্তরের দলের। চীন, ভিয়েতনাম বা বাংলাদেশের বিদ্রোহী-বিপ্লবী শক্তির বিপুল অংশই ছিল তারা।
তাই আমরা বিশ্ব থেকে গর্দভ বিলুপ্তির সংবাদে শঙ্কিত। সভ্যতা বিকাশকালে কী ধর্ম, কী বাণিজ্য, কী সংস্কৃতির মাইগ্রেশন ক্ষেত্রে প্রাণীটি যেভাবে মানুষের সহায়কের সুযোগ করে দিয়েছিল, তাকে হত্যা করে তার চামড়া দিয়ে যৌন উত্তেজক ওষুধ তৈরিতে আমরা খুশি নই। এটি পশুর প্রতি হিংস্রতা আর বর্বরতার নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। ঘোড়া ও গাধারও প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির বৈপরীত্য বদলানো দরকার। ভুলে গেলে চলবে না যে, মধ্য এশিয়া থেকে শুরু করে চীন, ভারত, নেপাল, তিব্বতসহ আফ্রিকার বহু দেশের দুর্গম পার্বত্য পথে আজও যোগাযোগ বা পরিবহনের অপরিহার্য অঙ্গ হচ্ছে গাধার মতো নিরীহ প্রাণী। অন্যদিকে মনুষ্যরূপী গাধারা যদি সৃষ্টি না হতো তবে মানব সমাজের বিকাশও হতো না। গাধারা আছে বলেই জাতীয় সরকারি শিক্ষাব্যবস্থা টিকে আছে। অবাধে চলে শিক্ষাবাণিজ্য। দু-একজন সিংহশাবকের জন্য তো আর স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হয় না। গাধারা আছে বলেই প্রতিটি দেশের সীমান্ত সুরক্ষিত থাকে, রক্ষা পায় স্বাধীনতা। ওরা মরতে জানে বলেই যুগে যুগে দেশে দেশে বিপ্লব সংগঠিত হয়। ওরা না থাকলে শিল্পপতিদের কারখানা চালাত কারা নামমাত্র মজুরিতে। দেশীয় গাধারা দলে দলে উন্নত ইউরোপ-আমেরিকায় ইমিগ্র্যান্ট না হলে টিকে থাকত কি দেশগুলো? এত সস্তায় শ্রম কোথায় পেত? উন্নত ইউরোপের বহু দেশে অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে নারীরা জন্মহার বৃদ্ধি করে গাধা উৎপাদনে নিরুৎসাহী বলে।
বাংলাদেশে সস্তায় গর্দভ মেলে বলেই পোশাকশিল্পের এত রমরমা। দেশের উন্নয়নে, অর্থনৈতিক বিকাশে বিদেশের শ্রমের বাজারে গর্দভ রপ্তানি করে দেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। দেশের ধনীদের ঘরে ঘরে এত যে সুখ আর আরাম তা তো গাধাদেরই রাতদিন বিবিজানদের ধমক হজম করা কাজের ফল। তাই আমরা তুচ্ছ প্রাণী গাধার নামের আগে শ্রীচরণেষু শব্দটি বসাতে আগ্রহী। বিশ্বের মাত্র কয়েকশ ধনাঢ্য পরিবার, যারা ৯০ ভাগ সম্পদের মালিক, তাদের টিকিয়ে রেখেছে সারাবিশ্বের সাড়ে সাতশ কোটি গর্দভ। সে কারণে গাধা বিলুপ্তিতে আমরা এত উদ্বিগ্ন। অপদার্থ গর্দভরা বিলুপ্ত হলে আগামী দিনের ফরাসি বিপ্লব, রুশ বিপ্লব, মাওয়ের লংমার্চ, একাত্তরের যুদ্ধ করবে কারা?