শিশুসাহিত্যিক শাম্মী তুলতুল কে জন্মদিনের শুভেচ্ছা
শাম্মী তুলতুল বাংলাদেশের জনপ্রিয় লেখকদের মধ্যে অন্যতম। তিনি একাধারে লেখক, ঔপন্যাসিক, শিশুসাহিত্যিক,আবৃত্তিশিল্পী,ব্র্যান্ড এম্বাসেডর পাঠাগার আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম কেন্দ্রের অনুষ্ঠান পরিচালক ,ও ঢাকার মেয়র হানিফ স্মৃতি সংসদের সাহিত্য সম্পাদিকা এবং দাবা খেলোয়াড় হিসেবেও পরিচিত।সংযুক্ত আছে বাংলাদেশ শিশু সাহিত্য ফোরামের সাথেও। বর্তমানে বেস্ট সেলার তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত। ভারত- বাংলাদশ দুই বাংলার জনপ্রিয় লেখিকার তকমাটাও এখন তার সফলতার ঝুড়িতে।লেখালেখি করছেন একদম শিশু বয়স থেকেই। ১৩ বছর ধরে লিখছেন বাংলাদেশ- ভারতের সকল পত্রিকায়। যেমন প্রথম আলো , কালের কণ্ঠ, সমকাল ,বাংলাদেশ প্রতিদিন, ইত্তেফাক, শিশু, নবারুণ আজাদী, পূর্বকোণ পত্রিকার সে লিখে যাচ্ছে দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে। তুলতুল জাতীয় পত্রিকা ও দেশের বাইরের সকল পত্রিকায় লিখালিখা করে দুর্দান্ত রেকর্ড গড়েছে। তার গ্রামের বাড়ি বিখ্যাত নদী হালদা ঘেঁষে। কিন্তু জন্ম চট্টগ্রাম শহরেই ৩০মে। একটি সাহিত্য- সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ,মুক্তিযোদ্ধা, রক্ষণশীল ও অভিজাত পরিবারে তার জন্ম। তাই লেখালেখি তার রক্তে মুক্তিযুদ্ধ তার চেতনায়। তাঁর বাবা আলহাজ আবু মোহাম্মদ খালেদ একজন মুক্তিযোদ্ধা আর মা কাজী আলহাজ রওশন আখতার একজন নারী নেত্রী ছিলেন। দাদা কুদ্দুস মাস্টার একজন লেখক,শিক্ষাবিদ, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা আর কবি নজরুলের বালকবন্ধু ছিলেন।(তার গ্রামের বাড়িতে নজরুল গিয়েছিলেন ১৯৩২ সালে চট্টগ্রামের রাউজান হাজীবাড়িতে)।তিনি জনপ্রিয় বেগম পত্রিকার সুপরিচিত লেখিকা,গীতিকার কাজী লতিফা হক এবং দেশের খ্যাতিমান রাজনীতিবিদ নুরজাহান মোরশেদ এর নাতনী হন। পড়ালেখা করছেন আইন বিভাগে। মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস চোরাবালির বাসিন্দা ,বাল্যবিবাহের ওপর লিখিত উপন্যাস পদ্মবু, এইডসের ওপর লিখিত প্রেমের উপন্যাস মনজুয়াড়ি, উপন্যাস একজন কুদ্দুস ও কবি নজরুল, ছোটোদের বই নানটুঁ ঝান্টূর বক্স রহস্য,গণিত মামার চামচ রহস্য,পিঁপড়ে ও হাতির যুদ্ধ, দৈত্য হবে রাজা,কচ্ছপ রাজার রাজপ্রাসাদ,টুনটুনির পাখিস্কুল এই বইগুলো তাকে নিয়ে গেছে সফলতার শীর্ষে। জায়গা করে নিয়েছে সে পাঠক হৃদয়ে। শিশু- কিশোরদের বই সাতটি।গ্রন্থ সংখ্যা মোট ১৩ টি। শিশুসাহিত্যে অবদানের জন্য ইতিমধ্যে পেয়েছে কবি নজরুল অগ্নিবীণা সাহিত্য পুরস্কার, রোটারিয়ান পুরস্কার, সোনার বাংলা সাহিত্য সন্মাননা,বেগম রোকেয়া-সুফিয়া কামাল সাহিত্য সন্মাননা।কবি পরিষদ সাহিত্য পুরস্কার সহ আরও অন্যান্য সন্মাননা।তিনি পাঠাগার আন্দোলন বাংলাদেশের ব্র্যান্ড এম্বাসেডর হয়ে ঘরে ঘরে পাঠাগারের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন, তিনি মনে করেন বই পড়া ছাড়া কোন বিকল্প নেই। “তার শ্লোগান মাদকের নেশায় নয় বইয়ের নেশায় গড়ে উঠুক প্রতিটি শিশু”।এই ঘরবন্দী সময়ে তিনি সবার জন্য নিজ উদ্দ্যেগে আর সংগঠনের সহায়তায় মানবসেবা করে যাচ্ছেন। ভালো লেখা এবং সফলতার জন্য সম্প্রতি তিনি বাংলালিঙ্ক বই ঘর এপ্সের সাথেও চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। তাছাড়া নিয়মিত আবৃত্তিশিল্পী হিসেবেও বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি।ইতিমধ্যে ফ্যাশন সচেতন কন্যা হিসেবেও তিনি সবার নজর কেড়েছেন।প্রায়ই তাদের পারিবারিক এবং দেশীয় পোশাক জামদানী অ অন্যান্য দেশীয় পোশাক পরিধান করে থাকেন।তার ভাষ্য প্রতিটি মানুষকে বিশেষ করে ক্রিয়েটিভ যারা তারা বিদেশ বা বিদেশী কোন পণ্যের প্রতি না ঝুকে নিজের দেশের প্রতিটি বিষয় যেন তুলে ধরে। কারণ আমাদের দেশ অনেক অনেক সুন্দর। এবারের ২০২০ সালের অমর একুশে ঢাকা বাংলা একাডেমীর বই মেলায় ১লা ফেব্রুয়ারিতে বের হয়েছে তার ছোটোদের নতুন বই “ভূত যখন বিজ্ঞানী”।বইটি প্রকাশ করেছে স্বনামধন্য প্রকাশনী প্রতিভা প্রকাশ। সাইন্স ফিকশন এই বইটি মেলায় বিক্রির শীর্ষে ছিল। বইটিতে মুক্তিযুদ্ধের গল্প সহ মোট ১২ টি গল্প রয়েছে।তুলতুল বলেন, প্রতিটি গল্প উপন্যাসে একটি করে ম্যাসেজ রাখেন। যাতে হাস্যরসের সাথে সাথে সবাই শিক্ষণীয় বিষয়ও মাথায় রাখতে পারে।বইটিতে আছে মুক্তিযুদ্ধের গল্পও। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারে তার জন্ম বলে সে তার লেখায় ও চেতনায় তা ধারণ করেন সব সময়। অনেকে ভাবে রক্ষণশীল পরিবার মানেই মেয়েদের জন্য বাধা।কিন্তু আমার পরিবারে রক্ষণশীল শব্দ ব্যাবহার হয় নিরাপদ অর্থে নিরাপত্তা অর্থে। প্রতিভা বাধা অর্থে নয়। অন্যরা এটাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেন। তাই আমার কাছে রক্ষণশীলতা মানে নিজেকে থামিয়ে দেওয়া নয়। বর্তমানে তিনি হালদা উপন্যাস নিয়ে কাজ শুরু করেছেন যেটি প্রথম আগে কেউ লিখেনি। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এই বই প্রকাশ হবে। অবশেষে বিশ্বের দরবারে নিজ লেখনি দিয়ে নিজের দেশকে এবং নিজেকে সভ্য হিসেবে উপস্থাপন করতে তুলতুল বদ্ধ পরিকর।