গুচ্ছ ছড়া সাজ্জাদ সিয়াম
একটি বিজয়
একটি বিজয়ে শটি বনে গায়
অবাধে পাখিরা গান,
রোদ্দুর মাখা কানা সারসীর
দু’দিনের অভিমান।
একটি বিজয়ে ঝাউবনে খেলে
জোনাকি মেয়েরা রোজ,
শুনেছি সেদিন খোকারা পেয়েছে
হারানো টিয়ার খোঁজ।
একটি বিজয়ে কচি কচি ঘাসে
শিশিরের আহ্লাদ,
পাহাড়ের বুকে স্বচ্ছ ফোয়ারা;
তাতে গোলগাল চাঁদ!
একটি বিজয়ে চন্দ্রকলার
অভিধানে ভেজা মাঠ,
সাদা পায়রার সুখের ডানায়
পাড়ি দেয়া মাঠঘাট।
একটি বিজয়ে সুনীল আকাশে
ডানা মেলে গাঙচিল,
কামিনী ফুলের সুবাসে ছড়ায়
সুখ তাতে অনাবিল।
নিঝুম রাত
আঁধারের ভাঁজে আলো ঝিলমিলি
জোনাকির অভিধান,
ঝিঁঝিঁপোকাদের নির্ঘুম রাতে
অবিরাম ঝিঁঝিঁ তান।
আকাশের বুকে কালো শামিয়ানা
এক কোণে বাঁকা চাঁদ,
তার ফাঁকে ফাঁকে তারাদের মেলা
কোত্থাও নেই খাদ।
নিশাচর প্রাণী করছে ওদিকে
খাবারের সন্ধান,
এদিকে আমরা ঘুমের জগতে
গাই স্বপ্নের গান।
ঘাসের উপরে জমছে শিশির
নিশুতি রাতের ডাকে,
এক ফোঁটা তার গড়িয়ে পড়ছে
দূর্বাঘাসের বাকে।
নিঝুম রাতের নিত্য খেয়াল
অবসান হয় ভোরে,
রোদ্দুর মেখে প্রকৃতি যখন
কেমনে গায় জোরে।
বিজয়
আকাশের বুকে নীল শামিয়ানা
রংধনু রঙে আঁকা,
দমকা হাওয়ার খুব কৌশলে
মূক কোলাহলে ডাকা!
পিউলির বনে সাপে-নেউলের
আত্মিক পথচলা,
বৃষ্টিবাদলে মিহি জলস্রোতে
চলন্ত মাছ, মলা!
আলো আঁধারের নিত্য খেয়াল
পৃথিবীর সব গাঁয়ে,
নীল পাল তোলা নৌকোয় মাঝি
চলতেছে ডানেবায়ে।
বেথুয়ার বনে টুনটুনি আর
দোয়েলের কানাকানি,
কোকিলের গানে শহরে-নগরে
হয়েছে তা জানাজানি।
“দীর্ঘ ন’মাস যুদ্ধের পর
বিজয় পেয়েছি”, তাতে–
লেখা আছে, কত কষ্টে হয়েছে
যুদ্ধের প্রতিরাতে।
স্মৃতিময় ছবি
একটি ছবিতে সব রঙ মাখা;
রূপরেখা অবিশেষ,
রোদ্দুরে দোলে পল্লিবালার
মেঘে আঁচড়ানো কেশ।
ঝরাপাতাদের নেচে নেচে গাওয়া,
সুশীলা কণ্ঠদেশ,
বৃষ্টির মতো অবিরামভাবে
কেটে যায় মনে রেশ।
মাটির গন্ধে পিঁপড়া পাগল;
মাটিতেই তার বাস,
সঞ্চয়কারী মনোভাব নিয়ে
স্বপ্ন করছে চাষ।
অবিরলভাবে ফেরোমন ছোঁড়ে;
চলমান কম্পাস,
দলবেঁধে ছোটে আহারের খোঁজে;
মুগ্ধতা এক রাশ!
কচিকচি ঘাসে ফড়িং মেয়ের
রংচঙে দুটি শাড়ী,
প্রকৃতি প্রেমিক শিশিরধৌত
সবুজের তাতে বাড়ি।
মেঠোপথ জুড়ে মায়ার চাদর,
বৃষ্টির মতো ঝরে,
ছায়াবাবলার সুখময় ছায়া;
আলো মাখা সব ঘরে।
একটি ছবিতে পাখি গান গায়,
পাল তোলা নাও দোলে,
নির্ঘুম রাতে ঘুমের চেষ্টা
বাংলা মায়ের কোলে।
ছবিতে ছবিতে ঘর ছাওয়া,
মনে কতকিছু দেয় উঁকি,
উদাসী বিকেলে খুঁজে মরে,
স্মৃতি অ্যালবামে পাঠ চুকি।
ও! চমৎকার মাত্রাবৃত্তের চাল।
পড়েছি যতই হয়েছি ততই বেসামাল।
অসংখ্য ধন্যবাদ প্রিয়। অনুপ্রাণিত হলাম খুব।