উপন্যাস।। জীবনে মরণে।। বিশ্বজিৎ বসু ।। পর্ব চার
- উপন্যাস।। জীবনে মরণে।। বিশ্বজিৎ বসু
- উপন্যাস।। জীবনে মরণে।। বিশ্বজিৎ বসু।। পর্ব দুই
- উপন্যাস।। জীবনে মরণে।। বিশ্বজিৎ বসু।। পর্ব তিন
- উপন্যাস।। জীবনে মরণে।। বিশ্বজিৎ বসু ।। পর্ব চার
- উপন্যাস।। জীবনে মরণে।। বিশ্বজিৎ বসু।। পর্ব পাঁচ
চার ৪
সন্ধ্যার পর রমা হারিকেনের আলোয় বসে ঠাকুরের আসন সেলাই করছিল। অতুল মার কাছে বসে মায়ের দেখছিল সেলাই করা। এমন সময় নিরু আসে যশোদা মার কাছে।
ঘরের দড়জায় পা দিতেই যশোদা মা টের পায় নিরু আসছে। সে পায়ের শব্দ শুনে জিজ্ঞাসা করে, কেরে? নিরু নাকি?
– হ্যাঁ যশোদা মা, নিরু উত্তর দেয়।
-আয় কাছে আয়! যশোদা মা নিরুকে কাছে ডেকে নেয়, নিরু এসে যশোদা মার কাছে বসে।
– রাতে খেয়েছিস, দুপুরেতো খেতে এলি না? যশোদা মা জিজ্ঞেস করে।
– হ্যাঁ, খেয়েছি! মা খাইয়ে দিয়েছে। আর দুপুরে বাবার সাথে মাঠে ছিলাম।
– বুড়া ছেলেকে মা খাইয়ে দিলো!
– আমিতো হাতেই খাই। সরিষা তুলতে তুলতে আজ হাতে ফোস্কা পরে গেছে, হাত দিয়ে খেতে পারছিলাম না। তাই মা খাইয়ে দিয়েছে।
হাতে ফোস্কা পরার কথা শুনে যশোদা মায়ের বুকে যেন ফোস্কা পরে যায়। সেলাই রেখে হাত টেনে নেয় নিরুর! দেখি দেখি, কতটুকু ফোস্কা পড়েছে। নিরু হাত বাড়িয়ে দেয়! নিরুর হাত দেখে রমা চমকে উঠে বলে, তুই সরিয়া তুলতে গেছিস কেন?
– বাবা যে নিয়ে গেল! কাজ করতে হবে না।
– তোকে এখনই এ কাজ করতে হবে না। এখন লেখাপড়া করবি। লেখাপড়া শিখে চাকরি করবি।
– আমারতো আর লেখাপড়া হবে না যশোদা মা। বাবা বলেছে। আমরা গরীব! বাবা স্কুলের বেতন দিতে পারবে না।
– তুই হাতে ওষুধ দিয়েছিস? রমা জিজ্ঞেস করে।
– না, মা জলপট্টি দিয়ে দিয়েছিল, খুলে ফেলেছি।
– দারা, ঘরে ওষুধ আছে। আমি লাগিয়ে দিচ্ছি। রমা সেলাই ছেড়ে উঠে মলম আনতে যায়। অতুল নিরুর হাত ধরে দেখতে থাকে কত বড় ফোস্কা পড়েছে। রমা মলম এনে লাগিয়ে দেয় নিরুর হাতে। মলম লাগানো শেষ হলে নিরু প্রশ্ন করে, আচ্ছা যশোদা মা, হাইস্কুলে মাসে বেতন কতো? বাবাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম বাবা জানে না।
– কত আর হবে, মাসে দশ বার টাকা। রমা উত্তর দেয়।
– আচ্ছা যশোদা মা, আমি বাবার সাথে মাঠে কাজ করে মাসে বার টাকা আয় করতে পারবো না? যেদিন স্কুল থাকবে না সেদিন বাবার সাথে কাজ করবো। বাবাকে বলেছি, যশোদা মা যদি আমার বই কিনে দেয়, তাহলে বন্ধের দিন বাবার সাথে কাজ করে বেতনের টাকা আমি যোগাড় করবো। আমি আর অতুল এক সংগে স্কুলে যাব, খুব মজা হবে না।
– তোর এখনই মাঠে কাজ করতে হবে না। আরেকটু বড় হ, তারপর বাবাকে সাহায্য করিস। আমি তোর কাকাকে বলবো, বই কিনে দিতে। আর হাটের দিন দোকানে গিয়ে কাকাকে বেচা কেনায় সাহায্য করবি অতুলের মতো। কাকা তোকে এক টাকা দেবে। তাই দিয়ে বেতন দিবি।
যশোদা মায়ের আশ্বাস শুনে নিরুর মনে যেন আনন্দ আর ধরে না। লাফ দিয়ে উঠে বলে, বাবাকে গিয়ে বলি।
– যা বলগে, যশোদা মা উত্তর দেয়।
নিরু বাড়ির দিকে দৌঁড় দেয়। রমা ডাক দিয়ে বলে, কাল সকালে চলে আসিস মুড়ি ভাজা হবে।
নিরু দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে বলে – আচ্-ছা আআআ।