উপন্যাস।। জীবনে মরণে।। বিশ্বজিৎ বসু।। পর্ব তেরো
- উপন্যাস।। জীবনে মরণে।। বিশ্বজিৎ বসু
- উপন্যাস।। জীবনে মরণে।। বিশ্বজিৎ বসু।। পর্ব দুই
- উপন্যাস।। জীবনে মরণে।। বিশ্বজিৎ বসু।। পর্ব তিন
- উপন্যাস।। জীবনে মরণে।। বিশ্বজিৎ বসু ।। পর্ব চার
- উপন্যাস।। জীবনে মরণে।। বিশ্বজিৎ বসু।। পর্ব পাঁচ
- উপন্যাস।। জীবনে মরণে।। বিশ্বজিৎ বসু।। পর্ব ছয়
- উপন্যাস।। জীবনে মরণে।। বিশ্বজিত বসু।। পর্ব সাত
- উপন্যাস।। জীবনে মরণে।। বিশ্বজিৎ বসু।। পর্ব আট
- উপন্যাস।। জীবনে মরণে।। বিশ্বজিৎ বসু।। পর্ব নয়
- উপন্যাস।। জীবনে মরণে।। বিশ্বজিৎ বসু।। পর্ব দশ
- উপন্যাস।। জীবনে মরণে।। বিশ্বজিৎ বসু।। পর্ব এগারো
- উপন্যাস।। জীবনে মরণে।। বিশ্বজিৎ বসু।। পর্ব বারো
- উপন্যাস।। জীবনে মরণে।। বিশ্বজিৎ বসু।। পর্ব তেরো
১৬
বিয়ের পর প্রথম প্রথম বছরে দুতিনবার বাবার বাড়ি যাওয়া হতো পদ্মর। বাবা মারা গেলে তিন ভাই আলাদা সংসার শুরু করে। এদিকে নিরুর জন্ম আর নিজ সংসারের দায় অনেক বেড়ে যাওয়ায় এখন বাবার বাড়িতে সেভাবে যাওয়া হয় না। মা থাকে ছোট ভাইয়ের সংসারে। ঘন্টা তিনকের হাঁটা পথ। মাকে দেখতে এখন বছর বছর যাওয়া হয় না। ভাইদের টানাটানির সংসারে বেশিদিন থাকাও পদ্মর মনে টানে না। তিন ভাইয়ের বাড়িতে ভাগে যোগে দু-তিন থেকে আবার ফিরে আসে।
তবে পদ্মার এবারের বাবার বাড়ি যাত্রা সম্পূর্ণ আলাদা। মা ভাইয়ের কাছ থেকে চির বিদায় নেয়া। খুব ভোরে সূর্য লাল হবার সাথে সাথে ভিটে ছাড়ে নিশি পদ্ম। গ্রামের মানুষ জেগে ওঠার আগেই পাড়ি দেয় গ্রামের সীমানা।
বাবার বাড়িতে পৌঁছার পথে আগেই রবিদাসের বাড়ি। পদ্মের প্রস্তাবমত ওরা প্রথমেই যায় রবি দাসের বাড়ি। হাতের ব্যাগ পত্র দেখে রবি দাস পদ্মকে উদ্দেশ্যে করে বলে, কিরে মা পদ্ম, চিরতরে নাকি?
– আপনি বুঝলে কিভাবে কাকা। পদ্ম প্রশ্ন করে।
– দেখরে মা। আমাকে মানুষ বলে, দালাল রবি দাস। তিপ্পান্ন সাল থেকে আমি এই কাজ করে আসছি। নিজের বাপের বাড়ি থাকতে তুই আগে এসেছিস আমার বাড়িতে। কেন এসেছিস সেটা কিছুটা বুঝি। আর সাথে বাক্স পেটরার চেহারা দখলেই বোঝা যায় কে বেড়াতে যাচ্ছে আর কে চিরতরে যাচ্ছে। তা এমন কী হলো হঠাৎ চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলি।
এবার নিশিকান্ত উত্তর দেয়। বাপ ঠাকুরদাদা চৌদ্দ পুরুষের ভিটে ছেড়ে কি মানুষ এমনি এমনি দেশ ছাড়ে কাকা।
-সেতো বটেই। দেখ এই ব্যবসা শুরু করার পর আমি শত শত লোককে বর্ডার পার করেছি। সবাই সারা পথ চোখের জল ফেলতে ফেলতে যায়। কতজনকে দেখেছি বর্ডার পার হওয়ার সময় চিৎকার করে কেঁদে উঠে। আমরা ধমক দিয়ে কান্না বন্ধ করতে বলি, বলি বর্ডার পার হবার পর পিছনে তাকাবে না। পিছনে তাকালে বিএসএফ যদি বুঝতে পারে এরেস্ট করতে পারে। সবাই বুক ফাটা কান্না বুকে চেপে সামনের দিকে এগোতে থাকে। কেউ কেউ ভুলে যায়। বর্ডার পার হয়ে দৌঁড়াতে থাকে আর যতক্ষণ পর্যন্ত বর্ডার দেখা যায় ততক্ষণ পর্যন্ত ফিরে ফিরে তাকাতে থাকে।
নিশিকান্ত কেন চলে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানায় রবি দাসকে। রবিদাস সব শুনে বলে তাওতো তোমাদের ধরে নিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেয় নাই। এই কিছুদিন আগে প্রফুল্ল ডাক্তারও এক রাতের সিদ্ধান্তে সেও দেশ ত্যাগ করে চলে গেল।
– তাকে কি মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল? পদ্ম প্রশ্ন করে।
– না, প্রফুল্ল ডাক্তারকে খুন করার হুমকি দিয়েছিল। রাতের বেলা চেম্বার থেকে বাসায় ফেরার পথে ধরে নিয়ে গিয়েছিল নতুন ব্রীজের নিচে। হুমকি দিয়েছিল, দেশ ত্যাগ না করলে খুন করে নদীতে ফেলে দেবো।
-ওনার মতো লোককে যদি চলে যেতে হয় আমরাতো চুনোপুটি।
– এরকম দলে দলে যাচ্ছেরে মা। ও ভাল কথা তোর ছেলে কই।
– ও যাবেনা কাকা। ও ওর যশোদা মার কাছে থাকবে। আর আমরা কোথায় গিয়ে উঠি কি অবস্থায় থাকি ঠিক নাই। একটু পায়ে দাঁড়িয়ে নেই, তারপর না হয় ওকে নিয়ে যাব।
– বুদ্ধিটা মন্দনা। কিন্তু ও কি মা বাবা ছাড়া থাকতে পারবে?
-পারবে কাকা, ওর যশোদা মা ওকে আমার চেয়ে কম ভালবাসে না।
– ভিটে কি বিক্রি করে দিয়েছিস।
– বিক্রিই বলতে পারেন। আমি বিক্রি করতে চেয়েছিলাম, অবিনাশ বিক্রি করতে দিল না। আমাকে দুই হাজার টাকা দিয়ে বললো ওটা ও নিরুর জন্য রেখে দিলাম। অবিনাশ উত্তর দেয়।
– নিরু কে?
– আমার ছেলে ।
– আজকাল এমন মানুষও হয় নাকি! তোমার ভিটে, তোমার ছেলের জন্য কিনে রেখে দিল!
– অবিনাশ মানুষ না ভগবান। ওর বউ সাক্ষাৎ লক্ষ্মী। নিরু ওর বৌকে যশোদামা বলে ডাকে।
-তা তোমাদের সাথে কি কাঁসা পিতল আছে! থাকলে ঝুঁকি বেশি। যদি দুর্ঘটনাবশত বিডিআরের হাতে ধরা পর, তাহলে সম্পদ পাচারের মামলা হবে।
– ধরা যাতে না পরি সেজন্যইতো আপনার কাছে আসা।
– সে তো জানি, তারপরও কখনও কখনও আমাদের কিছু করার থাকে না। আমরাও বিডিআরের হাতে মাঝে মাঝে ধরা পরি। আমি এপর্যন্ত তিন বার জেল খেটেছি।
– আমাদের যেতেই হবে কাকা।
-সেতো বুঝতেই পারছি। শোন আগামী পরশু ভোরে রওনা দেব। রাত থাকতে রওনা দিয়ে ভোরের বাস ধরতে হবে। দুজনের জন্য দুইশ টাকা লাগবে।
– ঠিক আছে কাকা। এই দুই রাত শেষ বারের মত একটু মার কাছে থাকতে পারব। পদ্ম আঁচল থেকে খুলে দুইশ টাকা তুলে দেয় রবি দাসের হাতে।
টাকা হাতে পেয়ে রবি দাস পাঞ্জাবির বুক পকেটে ঢোকাতে ঢোকাতে বলে, পরশু ভোরে মোরগে বাগ দেবার আগে আমার বাড়িতে চলে এসো। তারপর এক সাথে রওনা দেব।
১৭
রবি দাস! ভারত পাকিস্তান পাসপোর্ট চালু হবার পর থেকে তার পেশা বিনা পাসপোর্টে ভারতে মানুষ যাতায়াতে সাহায্য করা। জন প্রতি ত্রিশ টাকা থেকে বেড়ে এখন তার ফি একশ টাকা। রাষ্ট্রিয় অনুমোদন না থাকায় এ পেশা অবৈধ। কয়েকবার বর্ডারে ধরা খেয়ে জেল খেটেছে। প্রতিবারই জেল থেকে বের হয়ে এসে আবার শুরু করে এ ব্যবসা।
ভোর বেলায় মাকে শেষ বারের মত প্রণাম করে বেরিয়ে পরে নিশি আর পদ্ম। নিশিকান্তের মাথায় ছালার বস্তা আর হাতে একটা ব্যাগ। পদ্মর দুহাতে দুটো ব্যাগ। রবিদাস অপেক্ষা করছিল ওদের জন্য। রবি দাসের ঘরের সামনে পৌঁছতেই সে তাড়া দিয়ে বলে, চলো চলো দেরি হয়ে গেছে। গ্রামের মানুষ জেগে ওঠার আগে আমাদের ডগরা ব্রিজের কাছে পৌঁছতে হবে।
তিনজন দ্রুত পায়ে হাঁটা শুরু করে। পাথরের মতো স্তব্ধ নিশিকান্তের মুখে বেদনা, কষ্ট আর বিষাদের কালো ছায়া। পদ্ম কিছুক্ষণ পর পর পিছন দিকে তাকায়, আঁচল দিয়ে চোখের মুছে আর সামনের দিকে হাঁটে। কারও মুখে কোন কথা নেই, শা-শা করে হেঁটে চলে মাঠের মধ্যে দিয়ে আড়াআড়ি।
এক সময়ে নিরবতা ভাঙে নিশিকান্ত। রবি দাসকে প্রশ্ন করে কেন কাকা আমরা ডগরা ব্রিজ যাচ্ছি কেন? মল্লিকপুর হলেতো কয়েক মাইল কম হাঁটা লাগতো।
– এ যাত্রাটা স্বাভাবিক যাত্রা নয় জামাই বাবা। এমন জায়গা থেকে বাসে উঠতে হবে যেন সেখানে আর কোন পেসেঞ্জার না থাকে। ডগরা ব্রিজ কোন বাস স্টপেজ না। ওখানে হাত উঁচু করলে বাস আমাদের তুলে নিয়ে যাবে। আর মল্লিকপুর বা মাঝকান্দি থেকে উঠলে তোমাকে মানুষের প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। কোথায় যাচ্ছ, কেন যাচ্ছ, বস্তায় কি? আরো নানা প্রশ্ন। ২৫ বছরের অভিজ্ঞতা জামাই! রবিদাস উত্তর দেয়।
আবার কিছুক্ষণ নিরবতা। শুধু তিনজন মানুষের হাঁটার শব্দ।
কিছুক্ষণের নিরবতা ভেঙ্গে দিয়ে পদ্ম জিজ্ঞাসা করে, আচ্ছা কাকা আমরা এভাবে পালিয়ে যাচ্ছি কেন। আমরা কি অন্যায় কিছু করছি।
দেখরে মা, কোনটা ন্যায় কোনটা অন্যায় বুঝিনা। আমাদের হাত পা চার দিক দিয়ে বাঁধা। এক দিকে মোকাদের হাতে আমাদের অপমান হতে হয় পদে পদে। অন্যদিকে ভারতকে নিরাপদ মনে করে সেখানে চলে যাওয়া আমাদের জন্য অপরাধ। বড়লোকেরা পাসপোর্ট ভিসা করে লন্ডন আমেরিকায় চলে যাচ্ছে নিরাপদ জীবন যাপনের জন্য। অথচ আমরা ভারতে গেলে দোষ। আমাদেরতো আমেরিকা লন্ডন যাবার ক্ষমতা নাই। আগে যখন পাসপোর্ট ভিসা ছিলনা তখন মানুষ দলে দলে দেশান্তরী হয়েছে। নতুন ঢং হয়েছে পাসপোর্ট-ভিসা। এই পাসপোর্ট আমাদের মত গরীব মানুষদের হাত পা বেঁধে দিয়েছেরে মা। তাছাড়া আমাদের বাংলাদেশের মানুষের দুঃখ আরো বড়। যে দেশটা আমার ছিল, যে দেশের সব জায়গগাতে যেতে পারতাম, সেই চন্দ্রনাথ পাহাড় থেকে মরু তীর্থ হিংলাজ,যেখানে খুশি সেখানে ; সেই দেশটা ভাগ করে চালু করা হলো পাসপোর্ট ভিসা। এরা শুধু গরীব মানুষদের আটকাতে পারেরে মা, বড়লোকদের পারেনা। সাতচল্লিশ সালে যখন দেশটা যখন ভাগ হলো, তখন বলা হলো এপাশ হবে মুসলমানদের। আর বর্ডারের ওপাশ হবে হিন্দুদের। সরকাররা চলে গেল, ওদের দেখাদেখি আমাদের গ্রামটা তখন অর্ধেক ফাঁকা হয়ে গেলো। কিছুদিন পর আমিও চলে যাবার চেষ্টা করলাম, ওপারে একজন মুসলিম পাওয়া গেল সে বাড়িটা এক্সচেঞ্জ করতে চায়, এখান থেকে জমি বিক্রি করে ওপারে কিছু জমি কিনলাম, যুদ্ধের পর সব কিছু বন্ধ। এখন আমি পরে গেছি দোটানায়। এপারে যেটুকু জমি আছে তাতে সংসার চলে না, ওপারে যেটুকু করেছি সেটুকুতেও কিছু হয় না। এখন এই বডারের দালালি করি, বেঁচে থাকতে হবে তো। ভাগ্যিস যুদ্ধের সময় এপারে ছিলাম, নাহলে এখানে যেটুকু আছে সেটুকু হয়ে যেত শত্রু সম্পত্তি।
রবি দাসের কথা থামে না। আবার শুরু করে । সত্যটা কি হলো জানিস পদ্ম, সত্যটা হলো একচেঞ্জ বন্ধ হয়ে গেলো, পাসপোর্ট ভিসা চালু হয়ে গেল। নেহেরু- লিয়াকত চুক্তি হলো আর একচেঞ্জ হবে না। কিন্তু বাস্তবে যাওয়া বন্ধ হয় নাই। ব্যবস্থাটা এমন হয়ে দাঁড়ালো যে তুমি যাও, তবে সম্পদ রেখে যাও। শত্রু সম্পত্তি করে হাজার হাজার হিন্দুর সম্পদ একদিন কেড়ে নিলো পাকিস্তান সরকার। বাংলাদেশ হলো, সেই শত্রু সম্পত্তি আইন এখনও আছে। বর্ডারে খালি হাত মানুষ যেতে বাধা দেয়না কিন্তু সংগে সোনা-দানা, কাঁসা-পিতল, থালা বাসন নিতে দেয়না। পাকিস্তান সরকার মোকাদের মত লোকদের পিছন থেকে মদদ দিয়েছে আর কিছুদিন পরপর তারা একটা করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা করে একটা করে ধাক্কা দিয়েছে, সেই ধাক্কায় আবার কিছু হিন্দু ওপারে চলে গেছে। ৪৬-৪৭ সালের ধাক্কাতে ওপাড়ে চলে যাবার স্রোত কমে গেলে ৬৫ সালের দাঙ্গা আবার সেই স্রোত তৈরি করে। আর ১৯৭১ সালেতো ওদের লক্ষ্য ছিল বাকিদের এক ধাক্কায় ওপাড়ে পাঠিয়ে দেয়া। সেজন্য সবার আগে ওরা আক্রমণ করেছিল হিন্দুদের বাড়িঘর।
চলতেই থাকে রবি দাসের কথা। যেন কষ্টের ঝুড়ি খুলে বসেছে। সে বলতেই থাকে। বাংলাদেশ স্বাধীনের পর কিছু দিন কম ছিল। প্রথম দুই বছরত বন্ধই ছিল। শুধু যারা যুদ্ধের সময়ে পালিয়ে গিয়েছিলে এবং ওপাড়ে থাকবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তাদের কেউ কেউ ফিরে এসে জমি বাড়ি বিক্রি আবার চলে গেছে।
মোকাদের মত একটি দল আছে যারা এখনো মনে এদেশে আর হিন্দুদের থাকার অধিকার নাই। তাদের কাজ নিয়মিত ভাবে হিন্দুদের উৎপীড়ন করা। তোমাকে উৎপীড়ন করবে, কিন্তু তুমি কিছু বলতে পারবে না। যখনই প্রতিবাদ করবে, তখনই মারপিট অথবা খুনের হুমকি। আবার উৎপীড়নের ভয়ে দেশ ত্যাগ করবে সেটাও ফৌজদারি অপরাধ। চলে যাও, সম্পত্তি ফেলে চলে যাও। বর্ডারে খালি হাত পায়ে মানুষ যেতে দেখলে না দেখার ভান করে কিন্তু সংগে সোনা দানা, কাঁসা পিতল, নিতে দেয়না।
নিশিকান্ত এবার প্রশ্ন করে। আপনি কাদের হয়ে এই কাজ করেন কাকা।
-বর্ডারে যারা মানুষ পার করে, তাদের। আর পরোক্ষভাবে যারা চায় এদেশ থেকে হিন্দুরা চলে যাক তাদের। এই আমি তোমাদের বর্ডার পার হতে সাহায্য করছি, প্রকারন্তরে তো মোকাদেরই সাহায্য করছি। তোমরা যাচ্ছ মনের কষ্ট নিয়ে, দেখ মোকারা আনন্দে গদগদ। মোকা মনে মনে বলছে, আরেকটারে খেদায়ছি।
– ও আপনি সরাসরি পার করান না।
আমি সরাসরি পার করাব কিভাবে। এ ব্যবসা করতে হলে বিডিআরের সাথে লাইন রাখতে হয়, ওপারে বিএসএফ এর সাথে লাইন রাখতে হয়। এপাড় ওপাড়ের লোকাল রাজনীতিবিদের সাথে খাতির রাখতে হয়। উকিল রাখতে হয়। বর্ডারের পাশে যাদের বাড়িঘর আছে তারা এই ব্যবসা করে। আমাদের কাজ বিনা পাসপোর্টে যারা বর্ডার পার হতে চায়, তাদের সাথে করে নিয়ে ওদের হাতে তুলে দেয়া। এই যে একশ টাকা নিলাম তোমার কাছ থেকে, আমার থাকবে মাত্র বিশ টাকা। আর ত্রিশ টাকা পাবে কুষ্টে ওয়ালা। সে বিএসএফ বিডিআর ম্যানেজ করে পার করে দেবে। এর থেকে বিশ টাকা বিডিআর পাবে, বিশ টাকা পাবে বিএসএফ। এপাড় ওপাড়ের রাজনীতিকেরাও ভাগ পায়। আমি তোমাদেরকে নিয়ে কুষ্টেওয়ালার বাড়িতে পৌঁছে ওর হাতে বুঝিয়ে দেব। এখানেই আমার শেষ। কুষ্টেওয়ালা তোমাদের বর্ডার পার করে দেবে।