শিশুতোষ গল্প

শিশুতোষ গল্প।। তিন রঙের তিনটি পাথর।। মালেক মাহমুদ।। পর্ব এক

চৌত্রের কাঠফাটা দুপুর। ভ্যাপসা গরম। রোদের তাপে ঘরের চালা গরম হয়ে ওঠেছে। সেই গরমের প্রভাব পড়েছে ঘরের ভেতরেও। ঘরের ভেতরে একটু আরাম করে ঘুমাবে তা আর হচ্ছে না কাশেমের। তালপাখা ঘুরিয়ে বাতাস নেবে তাও পারছে না। রাতে ঘুমাতে পারে নি। তাই দুপুরে ঘুমাতে চেয়েছিল কাশেম। কিন্তু চোখে ঘুম নেই। তৃষ্ণা অনুভব হলো তাই পানি পান করার জন্য উঠে দাঁড়াল। একটি কাচের গ্লাসে পানি ভরল। পানি মুখে নিতেই একটি কাক কা কা শুরু করে দিল।
কাশেমের কাছে মনে হলো দুটি কাক। না, অর্ধেক পানি পান শেষে মনে হলো তিনটি কাক। কাক কা কা করে ডাকছে তো ডাকছেই। ডেকেই চলছে, কোন থামাথামি নেই। কাকের কা কা শব্দ ছড়িয়ে পড়ছে আশেপাশে। কা কা শব্দ শুনে অন্য দুটি কাক কা কা শুরু করে দিল। সহযাত্রীর ডাকে সহমর্মিতা বলতে পারি। শ্লোগানের মতন করে এক সঙ্গে ডাকতে থাকে। ওদের ডাকের ভেতর কান্নার সুর মনে হতে লাগল। কী যেন বলতে চায় ওরা মাত্র একটি শব্দ দিয়ে। একটি শব্দে নানা অর্থ প্রকাশ করতে চায় কাক। কাকের কা কা শব্দ শুনে কাশেম ঘর থেকে বাহিরের দিকে তাকায়। অনুভব করে রোদের তাপদাহ উঠোনেও ছড়িয়ে পড়েছে। গাছের ডালে একটি কাক কা কা করছে। বহু কন্ঠের শব্দ শোনা যাচ্ছে কা কা কা কা কা কা। কিন্তু কাক দেখা যাচ্ছে মাত্র একটি।
কালো কাক। কাকের রং কালো হয় আমরা জানি। কিন্তু এতো কুচকুচে কালো। ঘর থেকে বের হয়ে আসে কাশেম। উঠোনে দাঁড়ায়। হাতে পানির গ্লাস। অর্ধেক পানি পান করেছিল আর বাকি পানি গ্লাসে রয়ে গেছে। গ্লাসটি উঠোনে রেখে গাছ তলায় চলে গেল কাশেম।দেখে অন্য দুটি ধুসর রঙের কাক। কা কা কা কা শব্দ করে উড়ে গেল। একটি পাটি বিছিয়ে শুয়ে পড়ে কাশেম। গাছতলে একটু আরাম অনুভব করে কাশেম।
পুকুরে পানি নেই। ডাঙ্গার পানিও শুকিয়ে গেছে। ধবধবে সাদা গগণ। পানি শূন্যতায় কাকের অন্তর শুকিয়ে যাচ্ছে। একটু পানি পান করার জন্য কাক কা কা করছে। সারা গ্রাম ঘুরে এসে কাশেমদের বাড়ি কা কা করছে। কাশেমদের বাড়ি একটি টিউবয়েল আছে। এই টিউবয়েল এর পানি সবাই পান করে। কাশেম গাছতলে ঘুমে আছে। কাক উঠোনে একটি গ্লাস দেখতে পেল। গ্লাসে অর্ধেক পানি। পানি দেখে কাকের মনে একটু শান্তি ফিরে পেল। কাকের ঠোঁট গ্লাসের ভিতরে ঢুকানোর চেষ্টা করে কাক। না, পানির নাগাল কাক পেলনা। ভাবে, কীকরে পানি পান করা যায়। হ্যা একটি বুূ্দ্ধি সে পেয়ে যায়, তা হলো পাহাড়ের কোণে তিনটি পাথর দেখেছে। পাথর তো পানিতে ভাসে না। জলে ডুবে থাকে। পাথর জলে ডুবে থাকতেই দেখেছে কাকে। কাক উড়াল দিল। সঙ্গে ওকাক দুটিও উড়াল দিল। পাহাড়ের পাশে গিয়ে একটি পাথর ঠোঁটে নিল। তারপর উড়াল দিল। কালো কাকের দেখানো পথেই পাথর ঠোঁটে নিল অন্য কাক দুটি। উড়ে এলো কাশেমদের উঠোনে। অর্ধেক জল ভর্তি গ্লাস এখনো আছে। কাশেম ঘুমাচ্ছে। কাক একটি পাথর ছেড়ে দিল গ্লাসে। পাথর জলের নিচে গেল পানি কিছুটা উপরের দিকে উঠলো। অন্য কাক দুটিও গ্লাসে পাথর ছেড়ে দিল। অর্ধেক পানি পরিপূর্ণ হয়ে গেল। কাক তৃপ্তি সহকারে পানি পান করলো। উড়াল দিয়ে চলে গেল। ঘুম থেকে জেগে ওঠে কাশেম। উঠোনে এসে দেখতে পেল গ্লাস। গ্লাসের ভেতরে তিনটি পাথর। তিন রঙের তিনটি পাথর। একটির রঙ লাল। একটির রঙ নীল। একটির রঙ সোনালী। এ পাথর সে কখনো দেখেনি।
পাথরগুলো হাতে নিতেই পাথর কথা বলেতে থাকে। লাল পাথর বলে, কালো কাকের বদৌলতে তোমাকে দেখলাম।
নীল পথর বলে, তোমাকে দেখার ইচ্ছে বহুদিনের কিন্তু দেখা হয় না। তুমি পাহাড়ের দিকে যাও না। আমিতো আর হাঁটতে পারি না। তাই দেখাও হয় না। আজ ধুসর কাকের বদৌলতে তোমাকে দেখলাম।
সোনালী পাথর বলে, তোমাকে দেখে আমার মন ভরে গেছে, আমরা হব তোমার। তুমি হবে আমাদের।
পাথরের কথা শুনে কাশেমের মন ভরে গেল। বুঝতে পারলো কাকই নিয়ে এসেছে পাথরগুলো। ঘরে রেখে দিল তিন রঙের পাথর। ঘরে পাথর রাখতে বৃষ্টি নেমে এলো। পুকুর ও ডাঙ্গায় ভরে গেল জল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *