শিশুতোষ গল্প

ধারাবাহিক শিশুতোষগল্প- বটগাছে নয় লাল পাখির দেশে রিপন -মালেক মাহমুদ

বৃষ্টি ভেজা সকাল। শীত শীত ভাব। রোদের দেখা নাই। রিপনের মন আলোকিত। পাখিদের ভালোবাসা পেতে মন হৈচৈ করে। সাতদিন চলে গেছে। কিভাবে চলে গেছে তা রিপন বলতেই পারবে না। কিন্তু আনন্দের আজ অষ্টমদিন। রিপন হেঁটে চলে আসে বটতলায়। আজ আর পাখিদের কলরব নাই। রিপনের মন অন্যরকম হয়ে গেল। রিপনের কাছে মনে হতে লাগলো। এটা যেনো ভূতের নগরী। ঠিক তখনি ঘটে গেল এক ভূতুড়ে কাণ্ড। বটগাছের পাশ থেকে কালো ধোয়া আসতে লাগলো। ধোয়ার ভেতরে থেকে দুটি লাল লাঠি। একটি লাঠি অপর লাঠিকে আঘাত করতে লাগলো। ঠন ঠন আওয়াজ হতে লাগলো। আর বলতে লাগলো রিপন তোরে আজ পাইছি। তুই আমার লাল রাজকন্যাকে ভাগিয়ে দিয়েছিস।
কি করে আমি তোর রাজকন্যাকে ভাগিয়ে দিলাম?
আমি যে সাত দিন ঘুমিয়ে ছিলাম ঠিক এই সুযোগে তুই আমার সর্বনাশ করেছিস। তোকে আর ছাড়ছি না।
কে তোমার রাজকন্যা?
ঐ লাল পাখি আমার লাল রাজ্যের রাজ কন্যা।
হা হা তোমার রাজকন্যা তোমাকে ছেড়ে যায় কি করে?
তাতো, তুই ভালো জানিস, তোকে আমি ছাড়ছি না।
এই বলে লাঠি এগিয়ে আসতে লাগল আর লাঠিতে লাঠিতে আঘাত করতে লাগল। রিপন ভয় পেয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে দেখতে পেল লাঠিদানবের চেহারা। দানবের হাত থেকে বাচার জন্য রিপন দৌড়াতে লাগল। কিছু দূর যাবার পরে রিপন দেখতে পেল লাল ফুলের যান। যানের ওপর রিপন পরে গেল। অজ্ঞান হয়ে পরে রইল। লাঠিদানব আর রিপনকে দেখতে পেল না। অদৃশ্য ফুলের যানটি উড়তে লাগল। সারাদিন উড়ে রাতে পৌঁছে গেল লাল রাজ্যে। হঠাৎ লাঠিদানব পিছু হটে, কারণ লাল রাজ্যে প্রবেশের শক্তি হারিয়ে ফেলেছে দানব। লাল রাজ্যের রাজার ফটক। দেখতে খুব সুন্দর। মজার বেপার কোথাও লাল রঙের দেখা নেই। জলের ভেতর রাজপ্রাসাদ। জল রঙের ছোঁয়া লেগেছে এ রাজ্যে। রিপন হাঁটছে আর রাজ্য ঘুরে দেখছে। রিপনকে কেউ কিছু বলছে না। এ রাজ্যের মানুষগুলো বেশ বেটে। তাই এই অন্যরকম মানুষের খবর রাজার কাছে পৌঁছে দিল। রাজা কোনো আদেশ জারি করার আগেই রাজকন্যা বলল- রাজামশায় আমি আগে ঐ যুবকটি দেখতে চাই। আমার মনে হয় ও সেই যুবক। যে আমাকে মুক্তির পথ করে দিয়েছে।
ঠিক আছে যাও, তবে দূর থেকে দেখবে।
মাথা কুর্নিস করে বলে, যথা আজ্ঞা মহারাজ।
রাজকন্যা তার দাশ দাসি নিয়ে এগুতে থাকে। ফটকের বাইরে দেখতে পেল রিপনকে। রাজকন্যা ডাক দিল রি প ন বলে। রিপনের কাছে ডাকটি খুব পরিচিত মনে হতে লাগল। ভাবতে লাগল এ যে সেই লাল পাখির ডাক। দুজন কাছাকাছি হলো হাসির ঝিলিক ছড়িয়ে পড়লো লাল রাজ্যে। রিপনকে নিয়ে এলো রাজার কাছে। রাজার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল। রাজা মশয় আনন্দের বাজনা বাজাতে বলল। নতুন সুরে গান গাইতে লাগল।
যার ছোঁয়াতে রাজার কন্যা দেশে এলো ফিরে
তাকে আমরা করি বরণ সোনার মুকট দিয়ে
লাল জামা গায়ে পরাই পায়ে লাল জুতো
মুক্ত পাখির মাথায় পরাই টকটকে লাল সুতো।
আনন্দ আয়োজন। এই খুশির ভেতরে রিপন জানতে পারলো কিভাবে লাঠিদানব রাজকন্যাকে নিয়েছে। সেদিন পূর্ণিমা রাত ছিল। দাশ দাশি নিয়ে রাজকন্যা বাগানে বসে ছিল। অপূর্ব সময় পার হতে থাকে। গল্প আর গল্প। রাজকন্যার বিয়ের গল্প। বসন্তের ষোড়শ পূর্ণিমায় বিয়ে। রাজার কুমার লাল রাজের সঙ্গে বিয়ে। তখনো বিয়ের তিন মাস বাকি। কখন রাত বারটা বেজে গেছে তা বলতেই পারবে না। এমন সময় ঘটে যায় অন্যরকম ঘটনা। হটাৎ অন্ধকার। লাঠিচার্জ করে দাশ দাশিদেরকে মাটিতে ফেলে দিল। উড়িয়ে নিয়ে গেল রাজকন্যাকে। দুই মাস পনেরদিন পরে রাজকন্যা ফিরে এলো। এ কথাগুলো শুনে রিপন এক গাল হাসি দিয়ে ছিল।
দুদিন পরে রিপন বাড়ি ফিরে আসার জন্য রাজমশায়কে বলেন–
না, বাবা তুমি তো এখন যেতে পারবা না। কয়দিন পরে লালা রাজকন্যার বিয়ে। আর তোমার জন্য ফিরে পেয়েছি আমার মেয়েকে। এ আনন্দ আয়োজনে তোমাকে থাকতেই হবে।
রিপনের মনে হাসির ঝিলিক। এদের বিয়ের নিয়মকানুন কি তা রিপনের জানা নাই। তাই এ সম্মান সে গ্রহণ করে। সে জানতে পারলো ওদের বিয়ের হয়, অর্ধজলে ভিজে চোখে চোখ রেখে। বি যে পড়ান তার গায়ে থাকে লাল পোশাক। তাই এ অদ্ভুত বিয়ে আয়োজন দেখার জন্য রিপন থেকে যায়। সকলের চেয়ে রিপন একটু আলাদা। বিয়েতো নয় এক মজার আয়োজন। এ মজার আয়োজনে রিপন এক লম্বা মানব। সবাই রিপনকে দেখে মজা পায়। বিয়ে শেষ হলে ফুলযানে চড়ে রিপন বাড়ি ফিরে আসে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *