শিশুতোষ গল্প

শিশুতোষ গল্প।। প্রবাল দ্বীপে রহস্যপাখি।। আসাদ জোবায়ের

কোরাল দ্বীপ। কোরাল পাথরে ঘেরা এক ছোট্ট দ্বীপরাজ্য। নারিকেল, সুপারী, কেওড়া, বাঁশসহ নানা ধরণের গাছপালায় ঢাকা সুন্দর এই রাজ্য। সমুদ্রের নীল তরঙ্গে মাছ ও ঝিনুক শিকার করে জীবন চলে রাজ্যের মানুষদের। কেউ কেউ নৌকায় চেপে দ্বীপ থেকে দ্বীপে ঘুরে ঘুরে ব্যবসা করেন। এই রাজ্যের রাজা ছিলেন খুব ভালো। প্রজাদের দেখভালে কোনো ত্র“টি ছিল না তার। জলদস্যুদের মোকাবেলায় ছিলেন খুব কড়া। কোরালদের দেখভালেও তার জুড়ি ছিল না। কারণ, এই জীবন্ত কোরালগুলোই তাদের দ্বীপকে ধরে রেখেছে।
রাজার ছিল এক রাজকুমার। একা প্রাসাদের বাইরে বের হওয়া তার জন্য মানা। তবে প্রাসাদের দক্ষিণ পাশে ছিল বিশাল বাগান। সেই বাগানেই সময় কাটতো রাজকুমারের। নানা রঙের পাখিদের সঙ্গে ছিল তার ভাব। পাখিরা প্রতিদিন তাকে গল্প শোনাতো। নীল সাগরের গল্প। নীল তরঙ্গ কীভাবে তীরে আছড়ে পড়ে। সেই গল্প। আকাশে মেঘ দেখা দিলে সাগর কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। সেই গল্প। রাজার ময়ুরপঙ্খী নৌকার পেছনে কিভাবে মাছেরা লাফিয়ে ওঠে। সেই গল্প।
গল্প শুনতে শুনতে নীল সাগরের বুকে হারিয়ে যায় রাজকুমার।
হঠাৎ বাগানে এক অদ্ভুত পাখির দেখা মেলে। অবাক হয়ে চেয়ে থাকে রাজকুমার। পুরো লাল রঙের পাখি। তবে গলা ও পেটের নিচের অংশে আকাশি রঙ। ঠোঁটটা নিচের দিকে বাঁকা। টিয়ে পাখির মতো। বাগানে অনেক টিয়ে পাখি আছে। কিন্তু সেগুলো সবুজ রঙের। এই লাল টিয়ে কোথা থেকে এল? পাখিটার চোখ কী যেন খোঁজে। এদিক ওদিক তাকায়, এগাছ ওগাছ ঘুরে বেড়ায়।
-কী নাম তোমার পাখিভাই? তোমাকে তো এ বাগানে আর কখনো দেখিনি?
রাজকুমারের কথার কোনো জবাব দেয় না পাখিটি। রাজকুমার আবার কিছু বলতে যায়, অমনি পাখিটি ডানা মেলে দেয়। নীল আকাশে হারিয়ে যায়। কোথায় গেল পাখিটি, কোথা থেকেই বা এসেছিল? ভাবতে ভাবতে সন্ধ্যা হয়ে যায় রাজকুমারের। প্রাসাদে জ্বলে ওঠে রাতের আলো। ভেতরে ঢুকে যায় রাজকুমার।
রহস্যপাখির কথা ভাবতে ভাবতেই রাত কেটে যায় রাজকুমারের। সকাল হয়। ছুটে যায় বাগানে। সারাদিন নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে খুঁজতে থাকে লাল রঙের রহস্যপাখিকে। কিন্তু সেই পাখির দেখা নেই। ভেবে ভেবে অস্থির রাজকুমার। এভাবে কেটে গেল আরো তিন দিন। কিন্তু সেই পাখির দেখা নেই।
এক বিকেলে বাগানে বসেছিলেন রাজা, রানী, রাজকুমার ও মন্ত্রী। তারা নৌকাভ্রমণে বের হওয়ার আলোচনা করলেন। তিন দিন পরেই সকাল সকাল তারা বের হবে নৌকাভ্রমনে। সাথে যাবে মন্ত্রী, পাইক-পেয়াদাসহ প্রাসাদের একদল কর্মচারী। বড় বজরা নৌকা সাজানোর দায়িত্ব দেয়া হয় মন্ত্রীকে।
আলোচনা চলছে। রাজকুমার হঠাৎ খেয়াল করে সেই পাখিকে। একটা পাতার আড়ালে চুপচাপ বসে বসে তাদের কথা শুনছে। গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যায় রাজকুমার। খুব কাছে গিয়ে বলে- কী ব্যাপার লাল পাখি, তোমাকে তো সেদিনের পর আর দেখলাম না, কোথায় গিয়েছিলে তুমি? তোমার বাড়ি কোথায়?
রাজকুমারের কথায় হঠাৎ নড়ে ওঠে পাখিটি। এরপর পাখা মেলে দেয় শূন্যে। উড়তে উড়তে মিলিয়ে যায় নীলের দেশে।
তিন দিন পরে বড় বজরা নৌকায় করে ঘুরতে যান রাজা। সাথে রানী, রাজকুমারসহ আরো অনেকেই। ঘুরতে ঘুরতে তারা নীল পাহাড়ের দ্বীপে যায়, সেখান থেকে যায় সাদা কাশফুল দ্বীপে। এভাবে ঘুরতে ঘুরতে কেটে যায় দুই দিন। হঠাৎ একটা সাদা পাখি এসে একটা চিঠি দিয়ে যায় রাজাকে। চিঠিটি পেয়েই রাজা নৌকা ঘুরালেন কোরাল দ্বীপের দিকে।
কী লেখা ছিল চিঠিতে? লেখা ছিল- কোরাল দ্বীপে ঘটেছে এক ভয়ানক ঘটনা। যে দিন রাজা ভ্রমণে বের হন, ঐদিনেই রাজ্যে ডাকাত ওঠে। হা রে রে রে করে তারা ঢুকে পড়েন কোরাল দ্বীপে। রাজা নেই, মন্ত্রী নেই, সেনাপতিও নেই। সাধারণ সৈন্যরা ভয় পেয়ে সরে দাঁড়াল। ডাকাতরা প্রাসাদ থেকে সোনা-দানা, হীরা-জহরত, গাছ থেকে ফলমুল, ক্ষেত থেকে শস্য কেটে নিয়ে পালিয়ে গেল নীল সাগরে। এক রাতেই পুরো দ্বীপ তছনছ হয়ে যায়।
রাজা ফিরে এলেন তার নিজ রাজ্যে। কিছুতেই তিনি বুঝতে পারলেন না, তারা যে ভ্রমণে বের হয়েছিলেন- এ তথ্য ডাকাতরা পেল কীভাবে?
সভা ডাকলেন রাজা। সবাই চুপ। কেউ কোনো কথা বলছে না। মাথা নিচু করে সবাই বসে আছে। রাজা বললেন, নিশ্চয় ডাকাতরা এ রাজ্যে গুপ্তচর নিয়োগ করেছে। কে সেই গুপ্তচর? আপনারা খুঁজে বের করুন। তাকে কঠিন সাজা দিব। শুলে চড়াবো।
রাজার পাশেই বসেছিল রাজকুমার। সে হাত উঁচালো।
রাজা পাশ ফিরে বললেন, তুমি কি কিছু বলতে চাও কুমার।
– হ্যাঁ বাবা, কিছু বলতে চাই। ক’দিন ধরে আমাদের বাগানে একটা লাল রঙের পাখি দেখা যাচ্ছিল। আগে কখনো দেখিনি। শুরুতেই আমার সন্দেহ হয়। পাখিকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কে ভাই? কোথা থেকে এসেছ? পাখিটা কোনো কথা না বলে উড়ে চলে যায়। এরপর আরো কয়েকবার দেখেছি পাখিটিকে।
রাজার চোখমুখ উজ্জল হয়ে উঠল। বললেন- তুমি ঠিক ধরেছো কুমার। তোমার বুদ্ধির তারিফ করতে হয়। এই পাখিই ছিল গুপ্তচর। মন্ত্রী মহাশয়, আমি এই পাখিকে চাই-চাই। প্রথমে ওটাকে শুলে চড়িয়ে খুন করা হবে। এরপর ভাজা ভাজা করে রান্না করা হবে। আমি ঐ পাখির মাংস খেতে চাই।
গুপ্তচর পাখি ধরার জন্য মাঠে নেমে পড়লেন মন্ত্রী। প্রতিটি গাছে ফাঁদ পাতা হলো। গাছের নিচে একজন করে সৈন্য রাখা হলো। তাদের গায়ে পাতার পোশাক। যাতে পাখিটি বুঝতে না পারে। এক দিন যায়, দুই দিন যায়, কিন্তু পাখিটির দেখা নেই। দিন যায়, মাস যায়, পাখির দেখা না পেয়ে হতাশ হয়ে যান মন্ত্রী।
রাজা এবার রাজকুমারকে সেই পাখির ছবি আঁকতে বললেন। রাজকুমার ছবি আঁকল দশটা। ঠিক যেমনটা সে দেখেছিল। এরপর রাজা সেই দশটা ছবি নিয়ে আশপাশের বিভিন্ন দ্বীপে সৈন্য পাঠালেন। যেভাবেই হোক, সেই পাখিকে তার চাই চাই।
লোক পাঠানোর দুই সপ্তাহ পর খোঁজ মিললো সেই পাখির। তিন ক্রোশ দুরের এক জঙ্গলদ্বীপ থেকে পাখিটিকে ধরে আনা হয়। খাঁচায় ভরা পাখিটিকে দেখেই চিনতে পারে রাজকুমার। সৈন্যরা একদম ভুল করেনি। ঠিকঠিক কাজ করেছে তারা।
রাতে বিচারসভা বসে। পাখিটিকে কিছু বলতে বলা হয়, কিন্তু সে কিছুই বলে না। শুধু চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। এরপর রাজা পাখিটিকে শুলে চড়িয়ে মেরে ফেলার রায় দেন। সকালেই শুলে চড়ানো হবে।
রাতে রাজকুমারের ঘুম এল না। সে কেবলই লাল পাখির করুন চোখ দেখতে পেল। কেন পাখিটি কিছুই বললো না, কোন দুঃখে তার চোখে পানি? ভাবতে ভাবতে রাত গভীর হয়ে যায়। আর এক প্রহর পরেই সকাল হবে। সকাল হলে সবার সামনে পাখিটিকে মেরে ফেলা হবে। নাহ! আর ভাবতে পারে না রাজকুমার। সে চুপে চুপে তার ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। চলে যায় বন্দিশালার দিকে। বন্দিশালার দরজা খোলাই ছিল। ভেতরে তো কোনো মানুষ বন্দি ছিল না, এজন্যই দরজা খোলা।
দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে পড়ে রাজকুমার। দেয়ালের গর্তে দুটো মোম জ্বলছে। আরো কয়েকটা মোমে আগুন ধরিয়ে দেয় রাজকুমার। আলোয় ভরে ওঠে ঘর। পাখিটির চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে। কেঁপে ওঠে তার খাঁচা। রাজকুমার পা টিপে টিপে তার কাছে যায়। ফিশফিশ করে বলে- আমি তোমার বন্ধু হতে চাই লাল পাখি। বিচারসভায় তোমার চোখে পানি দেখেছি। আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। তোমার কথা ভেবে ঘুমুতে পারছিলাম না। বলো না, তোমার কষ্ট কী? আমি সত্যি তোমার বন্ধু।
রাজকুমারের আশ্বাস পেয়ে মুখ খোলে লাল পাখি। বলে- আমি এক মা পাখি। আমার তিনটে ছানা আছে ঐ ডাকাতদের কাছে। আমি যদি তোমাদের রাজাকে কিছু বলে দেই, তাহলে তারা আমার ছানা তিনটেকে মেরে ফেলবে।
– কেন মেরে ফেলবে? আর তুমিই বা কেন আমাদের রাজ্যের খবর ওদের দিয়েছো? ওরা তো আমাদের সব সম্পদ নিয়ে চলে গেছে।
– আমি নিরুপায় হয়েই এই কাজ করি। আসলে আমি মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারি বলেই আমার এই বিপদ। আমার তিনটে ছানা আটকে রেখেছে ডাকাতরা। এখন আমি ওদের কথা মতো কাজ না করলে ওরা ছানা তিনটেকে মেরে ফেলবে। ওরা আমাকে বিভিন্ন দ্বীপে পাঠায়, সেখানকার সংবাদ সংগ্রহ করার জন্য। একটা সংবাদ আনতে পারলেই শুধু ছানাগুলোকে আমি দেখতে পারি। না আনতে পারলে দেখা করতে দেয়া হয় না।  
– তোমাকে যে এখানে ধরে আনা হয়েছে এটা ডাকাতরা জানে?
– না জানে না, তবে এতক্ষণ আমাকে না দেখে হয়তো বুঝতে পেরেছে। খোঁজাখুঁজি করা শুরু করবে।
রাজকুমার একটু ভেবে নিল। তারপর বললো- তোমাকে আমি বাঁচানোর চেষ্টা করবো। তুমি কি আমার কথামতো কাজ করতে পারবে?
– হ্যাঁ পারবো রাজকুমার। আমি আমার ছানাদের জন্য বেঁচে থাকতে চাই।
– আচ্ছা, তোমাকে যদি এখন ছেড়ে দেই, তুমি ডাকাতদের সঙ্গে দেখা করে সকালের মধ্যে ফিরে আসতে পারবে?
– ডাকাতদের সাথে দেখা করে কী হবে?
– ডাকাতদের সঙ্গে দেখা হলে তোমাকে নিয়ে তারা চিন্তা করবে না। তোমার ছানারাও নিরাপদ থাকবে। আর তুমি ডাকাতদের গতিবিধি দেখে আসবে।
– ঠিক আছে যাবো। আমার ছানাদের একটিবার দেখেও আসতে পারবো।
– তোমাকে কিন্তু বিশ্বাস করে ছেড়ে দিচ্ছি। সকালে যদি ফিরে না আসো, তাহলে কিন্তু আমাকে মেরে ফেলবেন রাজা। রাজা আমার বাবা হলেও তিনি আইন-কানুনে খুব কড়া। রাজকুমার বলে আমাকে ছাড় দেবেন না।
– তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে পারো। আমি ঠিক ঠিক ফিরে আসবো।
সকালে রাজপ্রাসাদের সামনে ভিড় জমে গেল। পাখিকে শুলে চড়ানো হবে। ডাকাতদের গুপ্তচর পাখি। পাখি হয়ে এমন কাজ করতে পারে? মানুষ ছি ছি করতে লাগলো। একটু পর রাজা তার সভাসদ নিয়ে হাজির হলেন। বন্দিশালা থেকে পাখিটিকে আনার নির্দেশ দিলেন। কিন্তু সৈনিকরা বন্দিশালায় গিয়ে দেখল পাখি নেই। মাথা নিচু করে তারা রাজার সামনে দাঁড়াল। রাজা রাগে গরগর করতে করতে বললেন- কে করেছে এই কাজ, তাকে খুঁজে বের করো। আমি তাকেই শুলে চড়াবো।
রাজকুমার বারবার আশপাশে তাকাতে লাগল। পাখিটা আসছে না কেন? এখন কী হবে তার?
প্রাসাদের সব কর্মচারীকে ধরে আনা হলো। জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো। কিন্তু কেউ কিছুই বলতে পারে না।
রাজকুমার এবার বলল- ওদের ছেড়ে দিন। আমিই পাখিটিকে ছেড়ে দিয়েছি।
সবাই অবাক হয়ে রাজকুমারকে দেখতে লাগল। কিছু বলতে গিয়ে রাজা ভাষা হারিয়ে ফেললেন।
রাজকুমার আবার বলল- পাখিটির তিনটে ছানা আছে। ছানাগুলোকে দেখেই চলে আসবে সে।
রাজা চিৎকার করে বললেন- তুমি একটা গাধার মতো কাজ করেছো। খাঁচার পাখি একবার ছাড়া পেলে কি আর ফিরে আসে? সেনাপতি, রাজকুমারকে বন্দি করো। সে রাজবিরোধী কাজ করেছে। তার বিচার করা হবে আজ রাতের বিচারসভায়।
রাজার নির্দেশে রাজকুমারকে হাতকড়া পরানো হলো। রাজকুমার বারবার আকাশের দিকে তাকালো। কিন্তু লাল পাখির দেখা নেই।
রাজকুমারকে ধরে বন্দিশালার দিকে নিয়ে যাওয়া হলো।
-ওকে ছেড়ে দাও, আমি এসে গেছি।
লাল পাখির কথায় সবাই চমকে ওঠে। পাখিটি উড়তে উড়তে এসে একটা গাছের ডালে বসে। আবার বলে, রাজকুমারকে ছেড়ে দাও। আমি শুলে চড়তে রাজি আছি। তবে রাজকুমারের সঙ্গে আমার কথা আছে।
লাল পাখিকে ধরে আবার খাঁচায় পোরা হয়। রাজকুমার খাঁচার সামনে গিয়ে কথা বলে। পাখির কাছ থেকে সব জেনে নেয়। ডাকাতরা আজ সকালে নীল পাহাড়ের দ্বীপে ডাকাতি করতে বের হবে। আর ছানারাও ভালো আছে।
এরপর রাজকুমার সবার সামনে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে সব ঘটনা খুলে বলে। এরপর বলে- আমিই লাল পাখিকে বলেছি, সে যেন তার ছানাদের দেখে আসার পাশাপাাশি ডাকাতদের গতিবিধি দেখে আসে। পাখির কাছ থেকে জানতে পারলাম- আজ সকালে তারা নীল পাহাড়ের দ্বীপে যাবে। এই সুযোগে আমরা জঙ্গলদ্বীপে গিয়ে ছানা তিনটেকে উদ্ধার করতে পারবো। ফিরিয়ে আনতে পারবো আমাদের হারানো সম্পদ। রাজকুমারের কথায় রাজা খুব খুশি হলেন। তিনিও তো পশু-পাখিদের খুব ভালো বাসেন। তিনি সেনাপতিকে নির্দেশ দিলেন, একদল সৈন্য নিয়ে জঙ্গলদ্বীপে অভিযান চালাতে।
সেনাপতি সৈন্যদল নিয়ে জঙ্গল দ্বীপে অভিযানে বের হলেন। সাথে রাজকুমার ও সেই লাল পাখিও গেল। সেখানে গিয়ে তারা দেখে একদল ডাকাত জঙ্গল দ্বীপে পাহারায় রয়েছে। আরেকদল গেছে সেই নীল পাহাড়ের দ্বীপে।
ডাকাতদের সঙ্গে সৈন্যদের তুমুল লড়াই হলো। অনেক ডাকাত মারা গেল, অনেক সৈনিক শহীদ হলেন। অবশেষে ডাকাতরা পরাজয় বরণ করল। হাটু গেড়ে তারা সেনাপতির সামনে বসে থাকল। আর রাজকুমার লাল পাখিকে নিয়ে চলে গেল আরো গভীরে। একটা ভাঙাচোরা বাড়ির মধ্যে তারা ঢুকে গেল। সেখানেই খাঁচায় বন্দি করে রাখা হয়েছে লাল পাখির তিনটে ফুটফুটে ছানাকে। মা পাখিকে দেখেই চিঁ চিঁ করে উঠল তারা। রাজকুমার খাঁচাটা নিয়ে ফিরে এল। লাল পাখি পিছু পিছু।
জঙ্গলবাড়ির মধ্যে তারা খুঁজে পেল অনেক ধন-সম্পদ। যা তাদের রাজ্য থেকেই ডাকাতরা লুট করে নিয়ে গিয়েছিল। সেগুলোও নৌকায় বোঝাই করা হলো। এরপর বিজয়ের বেশে সৈন্যদল ফিরে এল কোরাল দ্বীপে। প্রাসাদের বাগানে ছেড়ে দেওয়া হলো তিনটে ছানা আর তাদের মাকে।
রাজকুমারের বন্ধু হয়ে তারা সুখে দিন কাটাতে লাগল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *