শিশুতোষ গল্প।। মিঠু জিঠুর সমাজ সচেতনতা।। জান্নাতা নিঝুম শিল্পী
বিকেলের টকটকে রোদে পার্কে ঘুরছে মিঠু জিঠু। সাথে আছে চিকুও।খুব আনন্দ করছে ওরা।নাগরদোলায় চড়েছে তিনবার,ট্রেনে চড়েছে একবার।জিঠু খুশিতে গদগদ হয়ে উঠেছে।চিকু আর
জিঠু দৌড়াতে দৌড়াতে গিয়ে বসল পার্কের এক কর্ণারে লিচু গাছের নিচে।
মিঠু বলল,আরে এখানে বসে পড়লি যে?
আর ঘুরবি না?
চিকু বলল,নাগর দোলায় চড়ে কিন্তু খুব মজা পেয়েছি।
জিঠু বলে উঠল,আর চড়ব না মিঠুভাই, এবার চলো তিনজনে মিলে আইসক্রিম খেয়ে আসি।গলাটা কেমন শুকিয়ে গেছে।
মিঠু বলল,হ্যাঁ তাই চল।
মিঠু জিঠু আর চিকু পার্কের একপাশে একটি দোকানে গেল।
মিঠু দোকানীকে বলল, চাচা তিনটা আইসক্রিম দেন।হ্যাঁ বাবু, দিচ্ছি তোমরা বসো।
ওরা তিনজনেই চেটেপুটে আইসক্রিম খাচ্ছে!
চিকু আইসক্রিমের ঝোল মুখে লাগিয়ে বলল,আজ ঘুরে যা মজা পেয়েছি না!মিঠুভাই তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। মাকে ম্যানেজ করার জন্য।
জিঠু খেয়াল করল,রাস্তার এক পাশে একটা লোক বসে বাসি তেলে গরম গরম পেঁয়াজি আর সিঙ্গাড়া ভাঁজছে।
আশেপাশে রাজ্যের মাছি উড়ে উড়ে সেসব খাবারে বসছে।
জিঠু বলল,মিঠুভাই দেখো লোকটা কেমন বাসি তেলে পেঁয়াজি ভাজছে,আর কত মাথামোটা মাছিরা এসে ভিড় করেছে।রাস্তায় চলা ভ্যান,গাড়ির ধুলাবালি এসে পড়ছে।কি বিচ্ছিরি! এগুলো খেয়ে আমরা খুব মজা পাই।কিন্তু আমাদের জন্য খুব ক্ষতিকর।পেটে গ্যাস্টিক শুরু হয়ে যায়!
চিকু বলে উঠল,লোকটার কি হাত পা নেই নাকি গো!মাছিগুলোকে হেয় পর্যন্ত করছে না।
আইসক্রিমের খড়িটা ফেলে দিয়ে মিঠু বলল,তুই ঠিক বলেছিস জিঠু।ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে হবে!
চল দেখি কি করা যায়।
ওরা বেঞ্চ থেকে নেমে এগিয়ে গেল,ঐ লোকটার দিকে।লোকটা কাজে মনযোগ দিয়ে গরম তেল থেকে মচমচে পেঁয়াজি ছাঁকনা দিয়ে ছেঁকে তুলছে।
মিঠু এই অবস্থা দেখে বলে উঠল,
কি ব্যাপার চাচা।আপনি এই খাবারগুলো ঢেকে রাখছেন না কেন?কত মাছি বসছে দেখেছেন?রাস্তার ধুলাবালি উড়ে আসছে।
এগুলো খেলে তো সাথে সাথে পেটখারাপ শুরু হবে।
তখন আপনার এই খাবার আর কে কিনবে বলুন তো?লোকটি ঝটপট মিঠুর দিকে তাকিয়ে বলল,
কই?কোন ধুলাবালি তো আমার চোখে পড়ছে না বাবা।সবাই তো প্রায় আমার এখান থেকে খাবার কিনে খায়।কেউ তো কিছু বলে না।
লোকটির কথা শুনে মিঠু বলে উঠল,খালি চোখে এসব দেখা যায় না বুঝলেন?পরীক্ষা করে দেখতে হয়!আর আপনি বাসি তেলে ময়দা ডুবিয়ে স্বাদের খাবার বানিয়ে মানুষকে খাওয়াচ্ছেন।খুব লাভ হবে আপনার। কিন্তু যারা খাবে তাদের কথা একবার ভাবুন তো!এই যে স্কুলের বাচ্চারা এখন মাঝে মাঝে পেটব্যথা সমস্যায় ভুগে, শুধুমাত্র এই পঁচা খাবার খাওয়ার জন্য। একবার ভেবে দেখুন আমরা যদি সবাই সচেতন হই।তাহলে সব রোগ থেকে দূরে থাকতে পারব,কমলমতী শিশুরাও রোগমুক্তী হবে।খাবারগুলো কাঁচের মধ্যে রাখুন।আর রাস্তা থেকে দশ হাত দূরে ঘর তৈরি করুন।সবাইকে এই ব্যাপারে সচেতন করুন।
জিঠু ও চিকু বলল,হ্যাঁ চাচা মিঠু ভাই ঠিকই বলেছে।
লোকটি মিঠুর কথা শুনে বলল,আমি তো কখনো এভাবে ভাবিনি বাবা,সত্যি তোমরা আমার চোখ খুলে দিয়েছ।আমি কালই একটি নতুন ঘর তৈরি করে নিব।বাসি তেল দিয়ে আর খাবার বানাব না।খাবার ঢেকে রাখব।আল্লাহ তোমাদের মঙ্গল করুক বাবা।
মিঠু বলল, তাহলে এবার আমরা আসি।আবার দেখা হবে ,,,।
চিকু বলল,মিঠুভাই চলো বাড়ির দিকে যাই।দেরি হয়ে যাচ্ছে।
-হ্যাঁ চল।