অদ্বৈত মারুত এর সমকালীন গুচ্ছছড়া
হাজার সাহেদ দেশটা জুড়ে
একটা সাহেদ বলে দিল
হাজার সাহেদ আছে
পুচ্ছ তুলে নাচে
ওই সাহেদরা আমার তোমার
বাতাস খেয়েই বাঁচে।
চালচুলোহীন ছিল আগে
হাঁকায় দামি গাড়ি
আলিশান ওই দেখছ বাড়ি
এখন ওটা তারই।
ব্যাংক আছে তার বীমা আছে
নেই বলো কী নেই তার কাছে
হঠাৎ হলো? না, না
এসব তোমার জানা
বলতে যাবে? বলবে কাকে?
সবাই যে মাছ শাকেই ঢাকে
মদদদাতা তুলে নিয়ে করবে দুচোখ কানা!
আমার সোনার বাংলা আমি
তোমায় ভালোবাসি
সবার পেটে লাথি দিয়ে
সুখের হাসা হাসি
আমি দেশকে ভালোবাসি
আমি মানুষ ভালোবাসি।
বুঝলে না হে নন্দ
একে একে মরছে পাহাড়
একে একে খেত ও খামার
ডোবা-নালা পুকুর নদী
ওই আরামের কারও গদি
মরছে পাখি গাছের মুকুল
নতুন বউয়ের কানেরও দুল
মরছে কারও বাগানবাড়ি
মধুর হাঁড়ি কাড়াকাড়ি
কারও ভেতর আহাজারি
নয় সবই নয় বাড়াবাড়ি
সম্পর্কই যাচ্ছে মরে
ঘরে ঘরে একেক করে
বাড়ছে কেবল দ্বন্দ্ব
বুঝলে না হে নন্দ!
ধরো
ধরো, তুমি অনেক বড়
কত্ত বড়? পাহাড়সম
লম্বা তোমার হাত,
পথ পেরোবার জন্য ধরো,
রাখো ভালো দমও
দিনকে করো রাত।
ধরো, তুমি অনেক বড়
ওঠাবসা সবার সাথে
দাপট আছে ঢের,
কাউকে ধরো মারো চড়ও
কাউকে মারো অপঘাতে
রেখে নানান জের।
এই একদিন হঠাৎ তুমি নাই
এই একদিন আটকে গেল বল
ওহ, বুজিলে চোখ!
যে রোশনাই চোখটা পুড়েই ছাই
অন্ধকারে করছে ছলছল
করবে না কেউ শোক।
তোমার জালে পড়ছ তুমিই আটকা
ধরবে জেলে ইলিশ ভেবে ঝাটকা!
খা রে তোরা সব খা
লে হালুয়া, লে নে খেয়ে
খেতে খেতে যা গান গেয়ে
গানের তালে নাচ রে নাচ
তোরা হলি বোয়াল মাছ!
বোয়াল মাছে খায় না কি!
চাইলে সে রোজ পায় না কি?
যা খেয়ে যা ব্রিজ কালভার্ট
আলোকবাতি নদীর ঘাট।
খা শুকিয়ে পুকুর ডােবা
দেশের মানুষ আন্ধা বোবা।
মুখ পুরোটা সেলাই করা
পায় না নাকে গন্ধ কড়া।
রাজহংসীর সোনার ডিম
দারুণ গরম নয় তো হিম।
খা খা খা খা রে
চক চকা চক চক্কাস
তুই মুরগি কক খাস।
দুধের বাটি উল্টে
সবার দেখি হক খাস।
এত্ত লাগে খাবার তোর
তুই দেখছি হারামখোর।
হারামজাদা সাহেবান
মুখ ভরা তোর খিলি পান।
পেট না ওটা জালা রে
নাই ঢাকনা তালা রে!
চোখে তো নাই পর্দা
কারা রে তোর বড়দা?
খা খা খা খা খা রে
নে বাকিটুক ঘাড়ে।
খাবি আরও চমচম
তুই হারামি একদম!
ইচ্ছে করে
তোমার কথায় সকাল ফোটে
তোমার কথায় সন্ধ্যা
তোমার কথায় বীর্যবান এই—
তোমার কথায় বন্ধ্যা।
তুমিই হলে রাজ সারথি
তোমার জন্য হর্ষ
তোমার জন্য এই দুনিয়া
কোটি আলোকবর্ষ।
তোমার কথায় ওঠাবসা
তোমার কথায় খাদ্য
তোমার কথায় ঘুম ঘুম চোখ
তাল বেতালে বাদ্য।
তুমি হলে পুত্র দনুর
তোমার মাথায় সর্প
তোমার দুহাত লম্বাটে বেশ
তোমার আছে দর্প।
এই যে তুমি তুমি তুমি তুমি
বঙ্গমাতা জন্মভূমি
রাখছ দখল একাই
হে পালোয়ান, প্রকৃতির গান
টের পাবে ঠিক ধরলে দুকান
ইচ্ছে করে দেখাই!
থাকলে টাকা যায় কি ভালো থাকা?
ও মিয়াভাই, ধান্ধাটা কি?
: টাকা।
থাকলে টাকা যায় যে ভালো থাকা।
ভালো থাকার জন্য কত চাই?
: অনেক অনেক
দু’হাতে তাই পয়সা করি কামাই।
দুটো হাতে কেমনে করেন কামাই?
: বুঝলে না হে?
বুদ্ধি বেচি। বুদ্ধির কাছে সবার আমি জামাই।
বুদ্ধি বেচেন, মানে?
: বুঝলে না হে?
বলছি কানে কানে।
তোমার আমার ডানে-বামে
কর্তা থাকেন চামে চামে
একের কাছে দুই দিলে সই
সবকিছু দেন তুলে
বলো বলো আটকাবে কে
দিলে কাপড় খুলে!
মানে?
: বুঝলে না হে?
একটা বটির দাম কত আর
বালিশ? ভুলে গেলে ওই বাতি ঝার
চোর যে কত বড় ওরা কত্ত বড় চোর
চোখের সামনে রাতটাকে দিন, দিনকে করে ভোর!
নাটের গুরু ওরাই, না?
: হা হা হা হা হা হা
নাটের গুরু ওরাই।
থাকতে ভালো নিজে কেবল
দেশকে করে থোড়াই।
তার মানে ওরাই আসল কালপ্রিট?
: ঠিক ঠিক ঠিক ঠিক।
ওরা ভালো থাকে বলে আমি থাকি ভালো
ধার ধারি না এই টাকাটা সাদা নাকি কালো।
আমার সাথে আসো
টাকা ভালোবাসো।
ছিঃ, আপনার টাকা
: বুঝলে না হে?
ভালো থাকার জন্যই তো টাকার সাথে থাকা।
সাপাতঙ্ক
ভাই, কেমন আছেন বলেন তো?
ওদের সাথেই চলেন তো!
: তা ছাড়া আর উপায় আছে?
ওই যে দেখেন আগে-পাছে।
বাপ রে, বাপ
গোখরা সাপ!
এক-দুটি নয় অসংখ্য
চিত্তও নয় সশঙ্ক!
সবখানে দৌরাত্ম এদের, বাড়িয়ে থাকে জিব
সুযোগ পেলেই ছোবল মারে, কামড়িয়ে দেয় হিপ!
তাই? বলেন বলেন আরও কিছু শুনি
আপনারা তো হর্তাকর্তা— মানুষ দারুণ গুণী।
: বাপরে বাপ
ওরা সাপ!
বসে আছে মস্তকে
কেউ বাড়ালো হস্তকে?
আচ্ছা, আচ্ছা, ঠিক বলেছেন ঠিকই তো
সর্ষের ভেতর ভূত রয়েছে, নেই কথা তা লিখিত!
: চাপ রে চাপ!
থাক আলাপ।
ওরা থাকে গর্তে তো
ভূত হয়েছে মর্ত্যে তো!
ভালো, ভালো, ভালো থেকেই ঠিকরে বেরোয় আলো
কিন্তু এ কী আলোর নিচে অাঁধার— ঘন কালো!
: কে দিল কিল
কী মুশকিল!
আমারই ঘাড় ধরে কারা আমায় নিয়ে নাচে
কে দেখলো সাপ পোষাটা ঘর মোড়ানো কাচে!
উহ, ও মা গো কামড়!
আমি না হয় একটু ছিলাম পামর।
বিষের জ্বালায় মরি
বাঁচাও বাঁচাও
I am very sorry, I am very sorry…
কান্দো এখন কান্দো
সামলা এবার সামলা
হচ্ছে হবে মামলা
থাকতে সময় বোঝনি তো
আমগো ছিলা কামলা।
বুঝলা না ক্যান মানুষ আগে
দলপ্রীতিটা পরে
ব্যবসা ফাঁদার বোঝ ঠ্যালা
কে বাঁচাবে তোরে।
পায়ের তলায় নাই মাটি রে
বগা হয়ে কান্দো
পাইবা সুজন? দোস্তগুলা?
পইড়া গ্যাছো ফান্দো।
কান্দো বগা কান্দো!
টাকা যেন গৌরী সেনের চাকা
ব্যবসা ছাড়াই হাজার কোটি টাকা!
টাকা যেন গৌরী সেনের চাকা।
চ্যাল চ্যালালাইয়া ঢুইকা পড়ে ঘরে
হারামখোরে খাবলা দিয়া ধরে।
খাবলা দিয়া নেয়া টাকায় কী আলিশান বাড়ি
হুজুর সেজে হারামজাদা গড়ে জমিদারি।
প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী— এই কথাটা ভুলে
হারামখোরের গা-টা দেখো কী নরম, তুলতুলে!
আমার টাকায় জমিদারি আমার টাকায় গাড়ি
ওর নখরে মরে গেছে কত সরল নারী!
হারাম টাকায় দম্ভকারী ওই শালাদের ধরে
খুব দরকার বোঝানো আজ আমরা তোর উপরে।
নেই রে উপায়
কেমন আছেন ভাইজান?
: দৌড়ের ওপর, নাই জান।
কেন, কেন, কি হলো ভাই?
: ঘুম চোখে নাই।
কারণটা কী? কথা এত নরম!
: চিপায় আছি। দিয়েন না আর শরম।
কেউ নাই আর পক্ষে
কে করিবে রক্ষে!
ঘটনা কী, বলেন তো ভাই খুলে?
কি হয়েছে, কে আছে এর মূলে?
: করছে দুদক তলব আমায়
পুলিশেরাও খোঁজে
কে আমায় আর বোঝে!
যাদের জন্য করি চুরি
বলছে তারাই চোর
আমার ভেতর নাই আমি আর
আসবে না আর ভোর!
ভালোই দেখি বিপদ!
: হ মিয়াভাই, কেমনে করি দ্বিমত!
আপনের ভাবীর ডায়াবেটিস
রক্তরোগের রোগী
ছেলেমেয়ে আত্মীয়রা
সব সুবিধাভোগী!
বুঝছি রে ভাই, বুঝছি
: বাঁচার উপায় খুঁজছি!
পেয়ে যাবেন পার
: উপায় আছে? দেন না মগজ ধার!
সময়মতো ফেরত পাবেন
সুদ এবং আসলে
ভাববেন না পড়ছি কাদাজলে।
না, না, তা কেন ভাই বলেন?
হারাম খেয়ে হারাম পথে চলেন!
: আপনেও ভাই? কই তবে যাই
নেই রক্ষে নেই রে উপায়!
নেই রে উপায়, নেই রে উপায়!