অপু চৌধুরীর গুচ্ছ ছড়া
পথশিশু
কেউ জানে না জন্ম কোথায়
কিংবা কোথায় ঘর
কোথায় যাবে আগামী দিন
নেই চিন্তা নেই ডর।
কোথাও কিছু খুঁজে পেলে
কোন সময় খায়
অধিক সময় ক্ষুধার জ্বালায়
এঁটো খুঁজতে যায়।
বাঘ ডাকা শীত এলেও পরে
বোধ থাকে না গা’তে
উদোম গায়েই ঘুমোয় তারা
বিষ মাখা শীত রাতে।
শয্যা-গদি খোঁজে না কেউ
ওপর দিকেও খালি
ফুটপাতে যায় আশ্রয় খোঁজে
খেলেও কিল-গালি।
কেউ কি বোঝে তাদেরও হয়
আল্লাহ ঠাকুর যীশু?
ভাগ্য গুণেই পথে থাকে
ডাকে পথশিশু।
ওম জড়ানো শীতে
শীত সকালে আলসেমি সব
ঝেড়ে ফেলা ভালো
মিষ্টি লাগে সদ্য ওঠা
সূর্য রোদের আলো।
ভালো লাগে নতুন ধানের
পিঠাপুলির ঘ্রাণ
খেজুর রসের মিষ্টি সুবাস
মুড়ি মুড়কির টান।
মন ভরে দেয় সবজি বাগান
মাঠের পরে মাঠ
আর দুপুরের উষ্ণ রোদে
শান বাঁধানো ঘাট।
বিকেলবেলার মিষ্টি রোদে
ঘুড়ি ওড়ান খেলা
দীঘির পাড়ে – বটের তলে
সূর্যখোলার মেলা।
নানান রকম পাখপাখালির
কিচিরমিচির গান
জোনাক পোকার মিটিমিটি
জোছনা আলোর বান।
ভালো লাগে মেতে থাকা
নানান দুষ্টুমিতে
পাল্টা গানের আসর দেখা
ওম জড়ানো শীতে।
ফড়িং-প্রজাপতি
ফড়িং ছানা উড়বে না, না
ভাবছে বসে আজ
প্রজাপতির ডানায় কেনো
রঙিন কারুকাজ!
কীসের খোঁজে প্রজাপতি
ফুল বাগানে ঘোরে
এমন রঙিন ডানা মেলে
ফুলের দোরে দোরে?
প্রজাপতি দেখল হঠাৎ
ভাবুক ফড়িং ছানা
অবাক চোখে চেয়ে আছে
প্রজাপতির ডানা।
এরি মধ্যে ফুল বাগানের
ফুলের মধু যত
খেয়ে নিয়ে প্রজাপতি
উড়ছে অবিরত।
অবশেষে বোধ এলে সেই
অবুঝ ফড়িং ছানা
উড়তে থাকে ফুলে ফুলে
মেলে পুচকো ডানা।
ততক্ষণে ফুলের বনে
নেই মধু আর ফুলে
উপোস কাটে ফড়িং ছানার
পরচিন্তায় ভুলে।
স্মৃতি
কী মনোহর শাপলা শালুক
ফুটতো তখন ঝিলে
ভর দুপুরে আকাশ পানে
উড়ত কতো চিলে!
আগের মতন পাখির কুজন
যায় কি শোনা আর!
যায় কি শোনা খেঁকশিয়ালের
একত্রে চিৎকার?
আছে কি আর সে আগেকার
দস্যি ছেলের দল
সকাল হলে বিলে-ঝিলে
ছুটতো অবিরল?
মনে পরে? ঢেঁকির নাচন
মন মাতানো ছন্দ
ঢেঁকি ছাটা চালের পিঠার
সেই অপরূপ গন্ধ !
মনে পরে? দেওয়াল কেটে
ঢুকত সিঁধেল চোর
গ্রেহস্তরা জেগে ওঠে
দেখত খোলা দোর!
এমন আরো কত কীর্তি
আছে স্মৃতি হয়ে
ধীরে ধীরে বিলীন হওয়া
কঠোর লোকালয়ে।
ছড়াগুলো সুন্দর!