নির্বাচিত ছড়া- মুহিতুল ইসলাম মুন্না
সোনার ছেলেবেলা
কোথায় গেল ঘুমপাড়ানি গান
কোথায় গেল সোনালী শৈশব।
দাদির কোলে মাথা রেখে রোজ
সন্ধ্যা হলে হইতো যে উৎসব।
কোথায় গেল পুতুল বিয়ের সাজ
কোথায় গেল চড়ুইভাতির দিন।
বিকাল বেলা চোখ বাঁধানো ছবি
আজও মোদের করে রাখে ঋণ।
কোথায় গেল সোনালী সেই দিন
কোথায় গেল কানামাছি খেলা।
ফিরতে যদি পারতাম অই দিনে
ফিরে পেতাম সোনার ছেলেবেলা।
স্বাধীনতার মানে
স্বাধীনতা তুমি,হৃদয়ে আঁকা
মানচিত্রের পতাকা,
স্বাধীনতা তুমি,সালামের রক্ত
ইতিহাসের পাতা।
স্বাধীনতা তুমি,নয়তো শুধু
বাংলার ঘরে একদিন,
স্বাধীনতা তুমি মিশে আছো
বিশ্বে হয়ে অম্লীন।
স্বাধীনতা তুমি,মাতৃভাষার
বর্ণমালার কথা,
স্বাধীনতা তুমি বিবস্ত্র মায়ের
অশ্রু আঁখির পাতা
স্বাধীনতা তুমি,আমার বোনের
সম্ভ্রম হারানো দুখ,
স্বাধীনতা তুমি বাংলা মায়ের
রূপসী বাংলার মুখ।
স্বাধীনতা তুমি,বিজয়ের নিশান
অধীনতার শেষ,
স্বাধীনতা তুমি,রক্তক্ষয়ী ধন
স্বাধীন বাংলাদেশ।
আমরা ভুলি নাই
৫২ এর একুশ তারিখ
ফেব্রুয়ারী মাসে,
ভাষার জন্য জীবন দিয়ে
গেছেন সালাম হেঁসে।
একুশ তারিখ সকাল বেলা
কৃষ্ণচূড়া ঢেলে,
শ্রদ্ধা ভরে স্বরণ করি
ফেব্রুয়ারী এলে।
ভাষার জন্য জীবন দিয়ে
শহীদ হলেন যারা,
স্মৃতির পাতায় দাঁড়িয়ে থাকে
মিনারে’তে তারা।
বাংলা ভাষার সেই ইতিহাস
লেখা হলো রক্তে,
একুশ এলে ফুলের তোরা
সাজে দুপুর অক্তে।
রফিক জব্বার বরকত সহ
বীর বাঙালি ভাই,
একুশ এলে মনে পড়ে
আমরা ভুলি নাই।
শীতের সকাল
বাংলা আমার সবুজবীথি পাখির ঠোঁটে গান
সবুজ রঙের ছোঁয়ায় আমার জুড়াই দেহ প্রাণ।
হাসনাহেনা জুঁই চামেলি গন্ধ ছড়ায় রোজ
মৌমাছিরা ফুলে ফুলে মধু করে খোঁজ।
প্রভাতকালে গাছের ডালে পাখির ঠোঁটে সুর
শিশির বিন্দু পড়ে যেন মিষ্টি যে রোদ্দুর।
ভাপ উঠা ভাত রান্না করে খেতে লাগে বেশ
মিষ্টি রোদে শীতের সকাল কাটে যে অশেষ ।
হেমন্তের ডাক
হেমন্তকাল আসলো বুঝি
শীতের সকাল সঙ্গে নিয়ে
শিশির বিন্দু মাখবো পায়ে,
সাত-সকালে হাঁটতে গিয়ে।
কুয়াশাকে আনলো ডেকে
সঙ্গী হয়ে আসলো বকুল,
কামিনী আর মল্লিকাদের
গন্ধে গন্ধে হয় যে বেকুল।
কুয়াশার অই সকাল বেলায়
ঘাসের ওপর চলতে গিয়ে,
শিশিরভেজা ঠান্ডা ছুঁয়ায়
গা উঠে যে শিরশিরিয়ে।
মিষ্টি রোদে উঠুন জুড়ে
গরম ভাত সঙ্গে নিয়ে,
জোয়ান বুড়ো গল্পে মাতে
হেমন্তের গান গায়তে গিয়ে।
আসলো আবার রং মাখিয়ে
শরত শেষে হেমন্তকাল,
দীর্ঘ হবে শেউলি বকুল
ছাতিম ফুলের রাজত্ব কাল।
নতুন রূপে
এই যে এলো হেমন্তকাল
ধানের শীষে
সোনালী ধান দেখে দেখে
কৃষক হাসে।
মাঠ ভরা অই নতুন ধানে
পরান ভরে,
হেমন্তকাল নতুন রূপে
গান ধরে।
কৃষাণীরা মন আনন্দে
পিঠা বানায়
নবান্নের অই পিঠা খেয়ে
আয়েশ মিঠাই।
শীতের সকাল কুয়াশা ঘিরে
শিশির হাসে,
খেজুর রসে উষ্ণতা দেয়
অনায়াসে।
ইচ্ছা
মনে আমার ইচ্ছে জাগে
দূর আকাশে উড়তে,
জোৎস্না রাতে চাঁদের সাথে
তারা হয়ে ঘুরতে।
সকাল ভেলার সূর্য হয়ে
কিরণ হয়ে জ্বলতে,
পাখি হয়ে গাছের ডালে
ভোরবেলাতে ডাকতে।
ইভামণি
ইভা আমার লক্ষী মেয়ে
খুব ভোরে উঠে,
নামাজ পড়ে কোরান পড়ে
খোদার দুরুদ ঠুটে।
সকাল হলে সূয্যি মামা
পূর্বাকাশে আসে,
ইভামনি মায়ের কাজে
সাহায্য করে হেঁসে।
পড়ার সময় পড়তে বসে
খেলার সময় খেলা,
এমন ভাবেই যাচ্ছে যেন
সকাল সন্ধ্যা বেলা।
ভালোবাসি
এই যে আমি রাত-দুপুর দেখি চাঁদের হাসি
হৃদয় জুড়ে অদৃশ্য এক অনুভূতি মাখি।
রজনীদেবীর মায়ায় পড়ে
চোখের কাজল লেপ্টে করে।
আমি যে এক সর্গ প্রাণে যায় হারিয়ে কেনো
তোমার মুখের হাসি সেই চাঁদের হাসি যেন।
নিশি রাতে প্রণয় মায়া চোখে যখন মাখি
অচিন পুরে যায় হারিয়ে দেখে মায়া আঁখি।
চোখের কোণে মায়া দিয়ে
হৃদয় কাড়া ছায়া দিয়ে।
হরণ করো এক নিমিষে মায়া বিষ যে মনে
ভালোবাসায় ভালোবাসি বলি সর্বক্ষণে।
হেমন্তের আগমন
শরত জুড়ে কাশফুলেরা
দিচ্ছে দোলা নদীর পাড়ে,
হেমন্তকাল আসছে শুনে
ছাতিম ফুটে নিশিভোরে।
সন্ধ্যাবেলায় শীতল বাতাস
হৃদয় ও মন তৃপ্ত করে,
হিমুঝড়ি আর শিউলি,বকুল
নিশি রাতে ঝড়ে পরে।
হেমন্তকাল উঠুন জুড়ে
নানা ফুলে গন্ধ ছড়ায়,
সুগন্ধির অই প্লাবনেতে
অভ্যর্থনা শীতকে জানায়।
শীতের রাতে দূর গগনে
জোছনা রাতে চাঁদ যে হাসে,
চন্দ্রিমা আর ফুলের ঘ্রানে
জীবনের মাধুর্য আনে।