ছড়া

শামীম শাহাবুদ্দীন- নির্বাচিত ছড়া

ইচ্ছে করে পাখি হয়ে নীল আকাশে উড়তে
ইচ্ছে করে গুলতি হাতে বন বাদারে ঘুরতে।
ইচ্ছে করে জেলে হয়ে পুকুরে মাছ ধরতে
ইচ্ছে করে বাবুই হয়ে পাতার বাসা গড়তে।
ইচ্ছে করে ফড়িং হয়ে ফুলকে ভালোবাসতে
ফুল কলিদের সাথে সাথে প্রাণ খুলে ফের হাসতে।
ইচ্ছে করে ঘুড়ি হয়ে মেঘের সাথে খেলতে
পরী হয়ে নীল আকাশে রঙিন পাখা মেলতে।
ইচ্ছে করে বৃষ্টি হয়ে অঝোর ধারায় ঝরতে
পুকুর জলে ঠিক দুপুরে লাফালাফি করতে।
ইচ্ছে করে তিড়িংবিড়িং নাচানাচি করতে
মা-মনির চোখ ফাঁকি দিয়ে ছাগল ছানা ধরতে।
ইচ্ছে করে বাদর হয়ে গাছে গাছে চড়তে
আলাদিনের চেরাগ হাতে ভুতের সাথে লড়তে।
ইচ্ছে করে ফুল পাখি আর প্রজাপতি আঁকতে
মায়ের গলা জড়ায় ধরে মধুর স্বরে ডাকতে।
ইচ্ছে করে সারা জীবন মায়ের কোলে থাকতে
এই দেশেরই কাদামাটি সারা গায়ে মাখতে।
ইচ্ছে করে আমার এ দেশ মনের মতো গড়তে
শত্রু এলে দেশের হয়ে লড়াই করে মরতে।

মানুষের প্রয়োজনে
লাগে বাড়ি গাড়ি,
জীবন সাজাতে লাগে
গুণবতী নারী।
নারীর পরশে নর
হয় গুণবান,
গুণবতী নারীরা যে
মায়ের সমান।
নারী মাতা নারী বোন
নারী বড় ধন,
সালাম জানাই তাঁর
তরে অগণন।

খেলনা খুঁজে পায় না খুকি
তাই করেছে রাগ
খুকির পুতুল আছাড় মেরে
করল কে দুই ভাগ?
চেয়ার খুকির উল্টে আছে
টেবিলে নেই বই
কলম খাতায় হাত পড়েছে
কারও অবশ্যই।
খাটের চাদর এলোমেলো
আলনাতে নেই ফ্রক
কোন সাহসে করছে সে তা
শুধুই অনর্থক।
প্রায় প্রতিদিন খুকির ঘরের
করবে এমন হাল
ছোট্ট বোনের এই জ্বালাতন
চলবে কতকাল?
এসব দেখে রাগেই খুকি
মুখ করেছে ভার
ভাল্লাগে কার ঘর গুছাতে
নিত্য লাগাতার!

নদীপাড় ছেয়ে গেছে সাদা কাশবনে
মিতালী পাতাতে চায় প্রকৃতির সনে
পাখিদের কোলাহলে পড়ে যায় সাড়া
কাশফুল ফুটে আছে মন প্রাণকাড়া।
এখানে সেখানে কত কাশফুল ফুটে
প্রজাপতি ছুটে আসে মধু নিতে লুটে
প্রকৃতির পানে চোখ বারে বারে চায়
পাখিরাও ছুটে আসে বেলা অবেলায়।
কাশবনে সাদাবক পাখা ঝাপটায়
কাশের ফড়িং উড়ে দূর নীলিমায়
নীল নীল নীলাকাশে সাতরঙা পরী
সাদামেঘ কাশফুলে নামে তড়িঘড়ি।
দুধসাদা কাশ আর আকাশের নীল
কচিমনে দিয়ে যায় সুখ অনাবিল
বিধাতার খেলা আহা বুঝা বড় দায়
ক্ষণে ক্ষণে প্রকৃতির রঙ বদলায়।
কাশফুল দিয়ে যায় শরতের ডাক
কাশবনে ঘুরে আজ বেলা বয়ে যাক।

আমাদের গেদু মিয়া
শীতে গেছে বেঁকে,
কাথা গায়ে শুয়ে থাকে
কাম কাজ রেখে।
পুকুরেতে যায় না সে
গোসলের ডরে,
জ্বাল দিয়ে পানি পান
করে মগ ভরে।
খাবারের পরে হাত
মুছে ফেলে চুলে,
তার ভারী শীত লাগে
থালা হাত ধুলে।
ঘর থেকে বেরোবে না
এই তার ব্রত,
অনুরোধ নিয়ে গেলে
করে প্রতিহত।
রাত হলে নাক ডাকে
গর গর স্বরে,
সকালেই অস্বীকার
করে চাপা ভরে!
এইসব অভিযোগ
দাবী করে মিছে,
অযথাই লোকে নাকি
লাগে তার পিছে।

আজকে খুকি রাগ করেছে
ক’জন সেটা জানে?
রাকিব মামা পায় না খুঁজে
খুকির রাগের মানে।
যেথায় খুকির পুতুল থাকে
সেখানটাতে ফাঁকা
শান্তিমতো কোনো জিনিস
যায় না কোথাও রাখা।
সব বিষয়ে নাক গলাবে
দস্যি ছোট বোনে
মন যেটা চায় সেটাই করে
নিষেধ কী আর শোনে?
রাগ করে তাই খায়নি খুকি
তাই লেগেছে ক্ষিধে
ভাবছে বসে রাগলে দেখি
ভীষণ অসুবিধে!
ক্ষিধের চোটে চুপটি করে
খাচ্ছে যখন রুটি
আড়াল থেকে সবাই দেখে
হেসেই কুটি কুটি।

আসমান থেকে নামে
বৃষ্টির ঢল,
বৃষ্টির ফোঁটাগুলো
কি যে চঞ্চল!
বিধাতার সেরা দান
বৃষ্টির পানি,
যায় না তো ভোলা তার
অবদানখানি।
বৃষ্টির জল সে তো
প্রকৃতির প্রাণ,
উপকার পায় তাতে
জ্বিন-ইনসান।
বৃষ্টি তো নয় এ যে
রহমের বারি,
মানুষের জীবনে তা
খুব দরকারি!

চালের কেজি আশি টাকা
ডিমের হালি ষাটে
আতঙ্কিত জনগন আজ
যায় না বাজারঘাটে।
মাংস খাওয়া স্বপ্ন এখন
মাছ কেনে না ডরে
ঘষেমেজে দিন কেটে যায়
সারাবছর ধরে।
সিন্ডিকেটের কালো থাবা
ধরতে হবে টেনে
ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে মানুষ
সবই যেন কেনে।

আব্দুল মান্নান খান
খায় খিলি পান,
অবসরে গায় শুধু
গলা ছেড়ে গান।
আব্দুল মান্নান খান
ডানে বায়ে চান,
দুরু দুরু ভয়ে বুক
করে আনচান।
আব্দুল মান্নান খান
খান আর খান,
সাইজেতে মনে হয়
সামি আদনান!

ওরা সর্বদা নির্ভয়
ওদের নেই মরণের ভয়।
ওরা করবে সবই জয়
ওদের নেই কিছুতে ক্ষয়।
ওরা সামনে কেবল ধায়
ওদের সঙ্গী হতে আয়।
ওরা গায় বিজয়ের গান
ওদের নেই তো পিছু টান।
ওরা বীর বাঙালির দল
ওদের বক্ষে আছে বল।
ওরা সবাই আমার ভাই
ওদের তুল্য কিছু নাই।
ওরা মায়ের বুকের ধন
ওদের স্মরি আজীবন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *