ছড়া

নির্বাচিত ছড়া-সুয়েজ করিম

নিশির পায়ে শিশির ছোঁয়া 
সোনার আলো দিগন্তে, 
ভোরের গায়ে হিমেল হাওয়া 
আনলো ডেকে হেমন্তে।

পাকা ধানে মাঠ ভরেছে
হলদে রঙের বাহারে,
চাষির ঘরে খুশির জোয়ার 
ফসল ভরা পাহাড়ে

রোজ সকালে বকুল তলে
শিশির ভেজা ঘাস, 
শরৎ শেষে আসল হেসে
ফসল কাটার মাস।

কৃষক হাসে ধানের বাসে
আনন্দিত মন,
শীতল চোখে আশা বুকে
আসলো শুভক্ষণ।

রাতের তারায় পাড়ায় পাড়ায় 
নবান্নের ই গান, 
খুব কলরব চলে উৎসব 
মনে খুশির বান। 

সুবাস তোমার মিষ্টি অতি 
প্রিয় বকুল ফুল, 
রোজ প্রভাতে হওযে তুমি 
খুকির কানের দুল।

তারায় তারায় ছড়াও জ্যোতি
মন মাতানো গন্ধে, 
ফুল খুকিরা গাঁথে মালা
গল্প কথার ছন্দে। 

শিশির ভেজা তোমার শরীর 
রোদের ডানা মেলে,
মালা হয়ে ফুটে থাকো 
ফুল খুকিদের গলে।

ধানের ঘ্রাণে এই অঘ্রাণে
রাতে চাঁদের আলো, 
আদুল গায়ে নিটোল পায়ে
খোকার লাগে ভালো। 

টুপুর টুপুর শিশির নূপুর 
দুলছে আমন শাখা,
ঝুমুর ঝুমুর ধানের ঘুঙুর
জাফরানি রঙ আঁকা। 

পাটে পাটে ফসল কাটে
ভরে ওঠে মাচা,
তা-ধিন তা-ধিন সারাটাদিন 
নাচছে কচিকাঁচা। 

কাঁচা ফুলের গন্ধ ভেসে আসে
পারদ রঙে শিশির কনা ঘাসে।
হেমন্তের রূপ জ্বলছে মাঠে ঘাটে
পল্লী গানে চাষিরা ধান কাটে।
ভর দুপুরে ফিঙে চড়ুই ডাকে
খেতের ধারে চালতা গাছের ফাঁকে। 

মেঘলা আকাশ সূর্যটাকে 
যায় না দেখা পষ্ট, 
রোদ উঠে না গাঁদা ফুলে 
খোকার মনে কষ্ট। 

টুপ-টুপা-টুপ ঝরা পাতায়
পড়ছে শিশির বিন্দু, 
ঘাসের ডগায় ঢেউ খেলে যায়
হিম কুয়াশার সিন্ধু। 

মেঘে মেঘে বেলা গেল
নামলো বুঝি সন্ধ্যা,
দিনের আলোয় রাতের আঁধার 
কাটছে যে দিন মন্দা।

সবুজ গায়ের সবুজ পাতা
আঁকতে বলি যদি,
রংতুলিতে খোকন সোনা 
আঁকতে থাকে নদী। 

নদীর উপর ডিঙি নৌকা 
চলছে বাঁকে বাঁকে, 
বৈঠা হাতে মাঝির ছবি
মনের সুখে আঁকে।

আঁকতে আঁকতে বলে খোকন 
আমায় আশিস কর
আমি যেন হতে পারি 
নদীর মতো বড়।

আকাশের তারাগুলো করে ঝিলমিল, 
নিশিরোদে জ্বলজ্বলে আঁধারের চিল।
চিকচিকে ঢেউ তোলে ফসলের মাঠ,
মাঝরাতে ঝলমলে তারাদের হাট।

মিটিমিটি জোনাকিরা দীপ জ্বেলে গায়,
ডানা মেলে উড়ে যায় তারাদের নায়।
কাশবনে নাচে পরী ওড়ে সাদা চুল ,
সৌরভে মাতোয়ারা মহুয়ার ফুল।

আকাশটা আজ খুব ব্লু
উড়ছে সাদা মেঘগুলো। 
ভাবছে খোকা মেঘ ঘুড়ি 
দূর পাহাড়ে যায় উড়ি।

পেঁজা তুলোর পাল তোলে 
নায়ের মতো যায় দোলে
শুভ্র শরৎ মেঘ দলে 
মন যে খোকার যায় চলে। 

টুপটাপ ঢেউ টিনে
শিশিরের ঘন্টা, 
চুপচাপ শুনি কানে
ভরে যায় মনটা। 

ঘাসবনে ফোটা ফোটা 
ঝিকঝিক স্বর্ণ,
বাঁশবনে শোভা পায় 
চিকচিক বর্ণ।

উড়ে উড়ে আসে ওরা 
ধুয়ে দেয় বনটা,
সুরে সুরে বাজে আহা!
শিশিরের ঘন্টা। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *