নির্বাচিত ছড়া- নুরুল ইসলাম বাবুল
আমার মনের খোঁজ
যখন আমার ভাল্লাগে না সকাল
তখন আমি দুপুর সেজে
রোদের আকাশ হই,
তারপরে ঠিক দুপুর ভেঙে দিয়ে
বিকেল এনে দেই ছড়িয়ে
দুরন্ত হইচই।
ভাল্লাগে না, ভাল্লাগে না খেলায়
মন হয়ে যায় প্রজাপতি
কিংবা ফড়িং দল,
সন্ধ্যা নামায় বুনোপাখি
তখন আমি বনের কোলাহল।
রাতের আঁধার ভাল্লাগে না তাই
দু-হাত পেতে চাঁদের কাছে
চাই যে আলোর ভাগ,
তোমরা তখন জোছনা জলে ভাসো
নিঝুম রাতে একলা আমি
ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক।
ভাল্লাগে না, ভাল্লাগে না
এমন তো নয় রোজ,
তোমরা চলো যে যার মতো
কে নিয়েছ আমার মনের খোঁজ?
হেমন্তদিন এলে
হলদে পাখির কণ্ঠ শুনে
মনটা করে কেমন-তো,
সোনাধানে মাঠ ভরিয়ে
আসলো বুঝি হেমন্ত।
উড়কি ধানের মুড়কি ভাজা
পায়েস-পিঠা ফিরনিতে,
মিষ্টি সুবাস যাচ্ছে ভেসে
তৈরি করা শিরনিতে।
আবার এলো নবান্ন তাই
চলছে বেজায় রান্না,
বউ কথা কও দেয় থামিয়ে
নতুন বউয়ের কান্না।
বাউল গানের বসল আসর
একতারাটা সুর তোলে,
হেমন্তদিন এলেই বুঝি
এমন করে মন দোলে।
এসো মানুষ হই
আমরা সবাই মানুষ হবো
দূর করে সব কালো,
বুকের ভেতর রাখব জ্বেলে
সেই প্রগতির আলো।
মানুষ হওয়া সোজা খুবই
বুদ্ধি বিবেক জ্ঞানে,
নিজকে নিজেই যাচাই করো
মানবতার ধ্যানে।
কারো কাছে কঠিন বটে
কারণটা চাই জানা,
গোড়ায় গলদ আছে তাদের
অথবা তালকানা।
মানব দেহে পশু-স্বভাব
কেমন করে সই-রে,
মনের কালো দূর করে সব
এসো মানুষ হই-রে।
বীরের বড়াই
একটি জাতি রুদ্ধ হলে
প্রয়োজনটা যুদ্ধ হলে
লাগবে তবে বীর,
শপথখানা শক্ত নিলে
বুকের তাজা রক্ত দিলে
উচ্চ হবে শির।
বাঙালি তাই গর্ব করি
আমরা বীর সর্বোপরি
করেছিলাম লড়াই,
একাত্তরের মুক্ত হয়ে
স্বাধীন দেশে যুক্ত হয়ে
করি বীরের বড়াই।
ভূত আসে শনিবার রাতে
ভূত নিয়ে ছড়া লেখি শনিবার রাতে,
কারণটা জানা চাই, কোন ঘটনাতে।
কেন এতো আগ্রহ লেখি রসে রসে,
ভূতদের আড্ডা কি শনিবার বসে?
কারণটা বলি শোনো, একদিন আমি
কবিতার আসরেই কথা বলি দামি।
সেইখানে ছিল এক কবি কবি ভূতো,
তার নাকি কথাগুলো হয় মনঃপুত।
সেদিনটা শনিবার সেই রাতে এসে,
একুশটি ভূত বলে মাঝরাত শেষে।
আমাদের নিয়ে লেখ একখানা ছড়া,
দেখেশুনে ভয়ে কাঁপি চোখ ছানাবড়া।
লিখে ছড়া ভূতদের দেই হাতে হাতে,
তারপর নিয়মিত আসে ওই রাতে।
শনিবার হাটফেরা লোকমুখে শুনি,
বিলপাড়ে বাজায় না ভূত ঝুনঝুনি।
বাংলার অপরূপ রূপ
ঝিরিঝিরি বাতাসের ছোঁয়া লাগে গায়,
পাখিদের কোলাহল বৃক্ষের ছায়।
মাঠভরা সোনাধানে কৃষকের হাসি,
বাংলার অপরূপ রূপ ভালোবাসি।
এঁকেবেঁকে চলে নদী ঢেউ কলতানে,
মন ভোলে মাঝিদের ভাটিয়ালি গানে।
ফুলফলে প্রজাপতি – ভ্রমরের হাসি,
বাংলার অপরূপ রূপ ভালোবাসি।
পাহাড়ের ঝরনায়, সাগরের জলে
রূপে ভাসি ওই নীল আকাশের তলে।
মেঠোসুরে বেজে ওঠে রাখালের বাঁশি,
বাংলার অপরূপ রূপ ভালোবাসি।
শৈশবে কানামাছি- ডাংগুলি খেলা,
ঝোঁপঝাড়ে জোনাকিরা জ্বলে সাঁঝবেলা।
বনানীর সবুজেই ফিরে ফিরে আসি,
বাংলার অপরূপ রূপ ভালোবাসি।
একদিন ছুটি পেলে
একদিন ছুটি পেলে
চলে যাই বহুদূর,
দুইচোখে নেচে ওঠে
দুপুরের রোদ্দুর।
ঘুরি একা খেলি একা
নেই কোনো হারজিৎ,
কান পেতে শুনি একা
পাখিদের সংগীত।
ফড়িঙের ঝাঁক দেখি
উড়ে যায় হেলেদুলে,
প্রজাপতি নেচে নেচে
বসে থাকে ঘাসফুলে।
যেতে যেতে গাঙচিল
ইশারায় ডাক দেয়,
আমাদের ছোটো নদী
যেইখানে বাঁক নেয়।
গোধূলির রং নামে
মেঠোপথে-খালটায়,
বিদায়ের ছবি আঁকে
সূর্যের গালটায়।
আমাদের আছে
আমাদের আছে রবীন্দ্রনাথ
সোনার বাংলা গান,
কাজী নজরুল, দ্রোহের আগুনে
জ্বলে ওঠা আহ্বান।
কাজল গাঁয়েতে পল্লি কবির
চিরচেনা সেই সুর,
হেঁটে যায় যেন জীবনানন্দ
বাংলায় বহুদূর।
হাছন-লালন, সুফি দরবেশ
এদেশের ছায়া তলে,
সাধনা করেছে কতো মহাজন
এই পলিমাটি জলে।
আমাদের আছে স্বাধীনতা এক
একাত্তরের দিন,
যাঁরা এনেছিল বুকের রক্তে
ভুলিনি তাঁদের ঋণ।
মায়ের মুখ
আমি থাকি দূর দেশে মা
তুমি থাকো গ্রামে,
তোমার কথা খুব মনে হয়
সন্ধ্যা যখন নামে।
সারাদিন মা ব্যস্ত থাকি
কাজের ভীষণ চাপে,
তোমার কথা ভাবতে গেলে
বুকের ভেতর কাঁপে।
তুমি আছো হৃদয় জুড়ে
বড্ড ভালোবাসি,
কেমন করে ভুলি মাগো
তোমার মুখের হাসি।
দিনের শেষে ক্লান্ত দেহ
আঁধার নেমে আসে,
তোমার প্রিয় মুখখানি মা
চোখের পাতায় ভাসে।
আমার জন্মদিনে
একফালি রোদ
একটি আকাশ
কেউ কি দিবেন কিনে?
আমার জন্মদিনে!
দূরের পাহাড়
ঝরনাধারা
সাগর জলের ঢেউ
আমায় দিবেন কেউ?
ধবল মেঘের যাত্রী
জোছনামাখা রাত্রি
কেউ কি দিবেন কিনে?
আমার জন্মদিনে!
পাখির সুরে সুরে
দিবেন আমায় গান?
বাজবে হাজার বীণে
আমার জন্মদিনে!