নির্বাচিত ছড়া- নূরনাহার নিপা
খোকা আজ স্বাধীন পতাকা
আকাশটা সোনারঙ গোধুূলি বেলায়
মন ছোটে আচানক জোছনা মেলায়,
জোসনার পাঠ শেষে খোকা ফিরে আেসে
চুপচাপ বসে পড়ে মায়েরই পাশে।
একদিন সন্ধ্যায় নামলে আঁধার
জীবনের বিপরীতে প্রাচীর বাধার,
হায়েনার কালো হাত ভাঙবে বলে
খোকাটি অস্ত্র হাতে যুদ্ধ চলে।
যুদ্ধ শেষে মানুষ ফিরে তাড়াতাড়ি
মা ভাবে খোকাটিও ফিরবে বাড়ি,
যুদ্ধ করেই খোকা স্বাধীনতা আেনে
খোকাটি কোথায় গেল কেউ নাহি জানে।
পথ চেয়ে মা জননী দ্বারে বসে থাকে
পতাকার লাল রঙ ডাক দেয় মাকে,
আঁধার কাটিয়ে খোকা আনল রঙিন
মা বোঝে খোকা আজ পতাকা স্বাধীন।
মা আমার মা
মা যে আমার সুখের আকাশ
মনটা স্নেহ ভরা
মা যে আমার ভালবাসার
অসীম বসুন্ধরা।
মা যে আমার অমূল্য ধন
সোনার চেয়ে দামি
মনের খবর মা জেনে যান
মা যে অন্তর্যামী ।
মা যে আমার এক পৃথিবী
ভালবাসার ডালা,
মা যে আমার হীরা পান্না
মা যে গলার মালা।
মা যে আমার সব সুখেরই
একমাত্র মূল,
মায়ের সাথে এই পৃথিবীর
হয় না কারো তুল।
পরিবেশ দুষণ
শব্দ দূষণ বায়ূ দূষণ
আবর্জনার শহর
চলতি পথে কষ্ট ভীষণ
শুধু গাড়ির বহর।
ভরাট নদী খাল বিল সব
করছে মানুষ দখল
ভাবছি কেবল এ সূচনায়
কোনটা আসল নকল।
এ যদি হয় শহরগুলোর
সব অবস্থা করুণ
মূলটা কোথায় আমজনতা
জীবটা টেনে ধরুন।
বৃষ্টি পড়ে মিষ্টি সুরে
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর
সকাল বিকাল কিংবা দুপুর
মনটা উদাস করা,ক
বৃষ্টি পড়ে ঝুম -ঝুমা -ঝুম
মেঘের আওয়াজ গুডুম গুডুম
কাঁপায় বসুন্ধরা।
মন বসে না কোনো কাজে
বৃষ্টি পড়ে বাজনা বাজে
শন শনা – শন -শন,
বৃষ্টি মুখর অষ্ট প্রহর
বৃষ্টি পড়ে গ্রাম ও শহর
বৃষ্টি কাড়ে মন।
বৃষ্টি মেয়ে পাগল পারা
বাহির থেকে দেয় ইশারা।
উড়তে মেঘের সাথে,
বৃষ্টি পড়ে মিষ্টি সুরে
মেঘের সাথে যাচ্ছি উড়ে
দূরের ঐ দেশটাতে।
কিশোর মন
সবুজ পাতায় অবুজ মনের
রঙ লাগিয়ে উড়ি,
খেলছি মেঘে লুকোচুরি
উড়াচ্ছি মন ঘুড়ি,
খেলায় বাচি, জমছে হাসি
চপল চোখের কোণে,
ইচ্ছে করে নীলের বুকে
লুকাই সঙ্গোপনে!
স্বপ্নমাখা দিনগুলো আজ
বাজছে কোমল বুকে
সে সব দিনের স্মৃতিটুকু
যত্নে রাখি টুকে!
আরও কতো নরম আলো
দিচ্ছে নীরব উঁকি,
খুব নীরবে সে সব আমার
মনের খাতায় টুকি !
এমনি কত রঙিন ছবি
আঁকছি সারাক্ষণ,
কিশোর বেলার স্বপ্ন আঁকে
অবুঝ কিশোর মন।
আমার বাবা
বাবা আমার হারিয়ে গেলো দূর আকাশের গায়,
ঘুমের মাঝে বাবা এসে আদর দিয়ে যায়।
বাবা ছাড়া এই পৃথিবী ভীষণ অন্ধকার,
বাবার জন্য কেঁদে কেঁদে কষ্ট হাহাকার।
সাজানো তো ছিল সকল বাবার মুটো হাতে,
হারিয়ে গেল বাঁকশক্তি হঠাৎই এক রাতে।
আধাঁর নামে দু চোখ জুড়ে মনে নিরবতা,
বাবার বুকে স্বপ্ন ছিল আর্দশ ভীত প্রথা।
কষ্ট ব্যথার রাত এনে দেয় হিংস বাঘের থাবা
হাজার তারার মাঝে খুঁজি কোনটা আমার বাবা।
শীতের পিঠা
শীত নামছে নদীর বাঁকে
কুয়াশাও ঝাঁকে ঝাঁকে।
খেজুর গাছে রশের হাঁড়ি
খেতে যাব মামার বাড়ি।
মামার বাড়ির খেজুর রসে
ভাঁপা খাব দাওয়ায় বসে।
আরো নানান পিঠাপুলি
চিতই পিঠা রসের পুলি
মামার বাড়ির শীতের পিঠা
খেতে লাগে দারুণ মিঠা।
শীতের হাওয়া
শীতের হাওয়া লাগছে গায়ে
শিরশিরে ভাব হাত ও পায়ে।
কাঁপছে যেন জোসনা মেয়ে
হিমেল হাওয়া আসছে ধেয়ে।
কনকনে শীত হাঁড্ডি কাঁপায়
মন বসে না রস ও ভাঁপায়।
কম্বলে শীত মানছে না যে,
মন বসে না কোনো কাজে।
শীত পড়ছে ভীষণ কড়া
লিখছি বসে শীতের ছড়া।
পিছুটান
শাল বনে চাঁদ উঁকি মেরে থাকে,
পাহাড়ের চূড়াটি হাত নেড়ে ডাকে।
সমুদ্র ডেকে বলে, আয় খুকি আয়,
আকাশের নীল রঙ ডাকে নিরালায়।
নদীরই ঢেউ ডাকে খল খল হেসে,
সবুজ মেয়েরা ডেকে যায় ভালবেসে।
রাখালিয়া সুর ডাকে মোহনীয় টানে,
নৌকার মাঝি ডাকে ভাটিয়ালি গানে।
ডাকে পাখি, ডাকে ফুল, ডাকে প্রজাপতি,
ডেকে যায় অবিরাম হীরা -মণি -মতি।
হাওয়ারা ডেকে বলে, চলো, উড়ে চলি,
গঞ্জ -শহর -নগর সব অলিগলি।
হরদম ডেকে যায় আরো কত প্রাণ,
নীড়ে ফিরি পিছে রেখে সেই পিছুটান।
দুষ্ট পাখি টুনটুনি
দুষ্ট পাখি টুনটুনি
পড়ল পায়ে ঝুনঝুনি।
ঝুনঝুনিতে সুর তুলে
গান গেয়ে যায় মন ভুলে।
গানের সুরে তাল মাতাল
বাজায় বাঁশি গাছের ডাল।
গাছের ডালে ঘর বাঁধে
পাতার চুলোয় ভাত রাঁধে।
রান্না শেষে স্নান করে,
ভাত খেয়ে নেয় পেট ভরে,
ভাত খেয়ে যায় দূর দেশে
বাসায় ফেরে দিন শেষে।
ফিরে বাজায় ঝুনঝুনি
দুষ্ট পাখি টুনটুনি।
ঝুনঝুনিতে ঘুমের দেশ
দুষ্ট পাখির কাটছে বেশ।
ছড়াগুলো খুবই ভালো লাগলো। অভিনন্দন রইল।